এবার ঐহিত্যবাহী জামদানি মসলিন দিয়ে বিশ্ব জয়ের আশা
ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই মসলিন। ফাইল ছবি
তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে শক্ত অবস্থান করে নেওয়া বাংলাদেশ এবার জামদানি, খাদি, মসলিন, সিল্ক এবং কাতানসহ দেশীয় বুননের বস্ত্র দিয়ে বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখছে।
এসব দেশীয় বস্ত্রকে উন্নত বিশ্বের চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় এবং সর্বাধুনিক ডিজাইনে যুগোপযোগী করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে জামদানি দিয়ে পশ্চিমা ঘরানার বিয়ের পোশাক আর মণিপুরি বস্ত্র দিয়ে সান্ধ্য পোশাক তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে বড় পরিসরে রপ্তানি করতে তাঁত উদ্যোক্তা, ডিজাইনার এবং পোশাক রপ্তানিকারকদের নিয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় কর্মশালা হয়েছে ঢাকায়।
বুধবার উত্তরায় বিজিএমইএ সম্মেলন কক্ষে ‘ক্রিয়েটিং হাই অ্যান্ড ফ্যাশন উইথ লোকাল হেরিটেজ ম্যাটেরিয়াল অব বাংলাদেশ’শীর্ষক দুই দিনের এই আয়োজন শেষ হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদ বিতরণ করেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুর হাসান। কর্মশালায় তাঁত উদ্যোক্তা, ডিজাইনার এবং রপ্তানিকারক মোট ১৬০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার এনহ্যান্সড ইন্টিগ্রেটেড ফ্রেমওয়ার্ক প্রকল্পের আওতায় এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।
ফারুক হাসান বলেন, “এ প্রকল্পের আওতায় ৮টি দলও গঠন করা হয়েছে। এই দল ইতোমধ্যে জামদানি বস্ত্র দিয়ে পাশ্চাত্য ঘরানায় বিয়ের কনের পোশাক এবং মনিপুরি বস্ত্র দিয়ে ইভনিং ওয়্যার উদ্ভাবন করেছে।
“এখন পর্যন্ত আমরা আমাদের দেশীয় ডিজাইনার, বিশেষ করে বাংলাদেশ ফ্যাশন টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি এবং শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটির ডিজাইনার দিয়ে নকশা করে দেশীয় বস্ত্রের পোশাক তৈরি করেছি।”
তিনি বলেন, “আমরা এখনো গতানুগতিক বস্ত্র দিয়েই পোশাক রপ্তানি করছি। অথচ আমাদের ঐতিহ্যবাহী জামদানি, খাদি, মসলিন, রাজশাহী সিল্ক এবং কাতানসহ দেশীয় বস্ত্রকে বিশেষ করে পশ্চিমা ডিজাইনের সঙ্গে সমন্বয় করে বিশ্বমানের পোশাক তৈরির বিশাল সুযোগ রয়েছে।”
ভারত তাদের ঐতিহ্যবাহী বস্ত্র রপ্তানি করে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার আয় করে জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “আমরাও ইতোমধ্যে উচ্চ দরের কিছু পোশাক রপ্তানি করেছি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে তাদের ফ্যাশন ডিজাইনার দিয়ে নকশা করে প্রচার করতে পারলে আমাদের ঐতিহ্যবাহী এসব বস্ত্র দিয়ে উন্নত মানের পোশাক রপ্তানি করতে পারব।
“আমাদের ঐতিহ্যবাহী এসব বস্ত্র দিয়ে উন্নত বিশ্বের ডিজাইনে পোশাক তৈরি করে রপ্তানির এই সুযোগ নিতে ইতোমধ্যে ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়েছে।”
আগামী সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় পোশাক প্রদর্শনী রয়েছে জানিয়ে বিজিএমই প্রধান বলেন, “সেই এক্সপোতেও এবার আমাদের দেশীয় বস্ত্রের ডিজাইন ব্যাপকভাবে প্রচার চালানো হবে।”
২০৩১ সালের মধ্যে পোশাক খাত থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির যে লক্ষ্য ঠিক হয়েছে, সেই লক্ষ্য পূরণে আশাবাদী বলেও জানান তিনি।
ফারুক হাসান বলেন, “ক্রেতাদের প্রদর্শন করতে আমরা ইউরোপ ও আমেরিকার ডিজাইনার দিয়ে পোশাক ডিজাইন করব। এসব ডিজাইন নিয়ে বড় ক্রেতাদের কাছে বিজিএমইএ প্রতিনিধি দল সফর করবে।”
বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, “ইআইএফ প্রোগ্রামের আওতায় আমরা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, কৃষি, চামড়া এবং অন্যান্য খাতের সাথে কাজ করেছি। প্রথম দিকে পোশাক শিল্পের মতো এরকম খাতে এধরনের কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা আসলেই চ্যালেঞ্জিং ছিলো।”
“যেহেতু ধারণাটাই খুব সাম্প্রতিক এবং উদ্ভাবনামূলক। তবে প্রকল্পের শেষে আমরা সবাই অত্যন্ত বিষ্ময়ের সাথে দেখছি যে পোশাক শিল্প সকল মানদণ্ড রক্ষা করে কর্মসূচী বাস্তবায়নে সেরা হয়েছে।”
বাংলাদেশ ফ্যাশন টেকনোলজি ইউনিভার্সিটির উপউপাচার্য আইয়ুব নবী খানও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
কমেন্ট