যুক্তরাজ্যে রপ্তানি ৫ বিলিয়নের মাইলফলক ছাড়াল
যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি কমলেও যুক্তরাজ্যে বাড়ছে। ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাজ্যে ৫৩১ কোটি (৫.৩১ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা।
এই অঙ্ক আগের অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। আর এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রথমবারের মতো ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলারের মাইলফলক ছাড়াল।
ঢাকা সফররত যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নাইজেল হাডলস্টোনের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ তথ্য জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুর রহিম খান উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। আর দ্বিতীয় হচ্ছে জার্মানি। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ১০ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল। যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০২০-২১) চেয়ে ৪৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি।
জার্মানিতে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ৭ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ।
কিন্তু এই দুই দেশে এবার রপ্তানি বেশ কমেছে। ইপিবি বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের পুরো সময়ের (জুলাই-জুন) পণ্য রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করলেও দেশভিত্তিক তথ্য এখনও প্রকাশ করেনি।
১১ মাসের অর্থাৎ জুলাই-মে সময়ের তথ্যে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ কমেছে। জার্মানিতে কমেছে আরও বেশি; ৭ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ।
তবে এই ১১ মাসে যুক্তরাজ্যে রপ্তানি বেড়েছিল ১০ দশমিক ৩২ শতাংশ।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি অবশ্য বৈঠকে যুক্তরাজ্যে পণ্য রপ্তানির পুরো অর্থবছরের (জুলাই-জুন) তথ্য দিয়েছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নাইজেল হাডলস্টোনের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাজ্য। সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে দেশটিতে বাংলাদেশ ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানি করেছে। একই সময়ে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৪৫ কোটি ডলারের পণ্য ও সেবা।
২০২১–২২ অর্থবছরে দেশটিতে বাংলাদেশ ৪৮০ কোটি ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানি করেছিল।
বৈঠকে বাংলাদেশকে পণ্য বৈচিত্র্যকরণে প্রযুক্তি ও বাণিজ্য সম্পর্কিত গবেষণায় সহযোগিতা করার জন্য যুক্তরাজ্যের প্রতি অনুরোধ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করার আরও সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক, তৃতীয় বৃহত্তম সবজি উৎপাদনকারী, চতুর্থ বৃহত্তম ধান উৎপাদক এবং পঞ্চম বৃহত্তম সুপেয় পানির মৎস্য উৎপাদনকারী দেশ।
“এ ছাড়া এ দেশে উচ্চ মানের ওষুধ, পাটজাত পণ্য, চামড়া জাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য, সিরামিক পণ্য, আসবাবপত্র, খেলনা এবং ইলেকট্রনিক পণ্যসহ অনেক বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদন হচ্ছে।”
দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণে গঠিত যৌথ কার্যদল এরই মধ্যে দুই দফা বৈঠক করেছে এবং শিগগিরই তৃতীয় বৈঠকে বসবে বলে জানান টিপু মুনশি।
বাংলাদেশকে বিনিয়োগের উত্তম জায়গা হিসেবে উল্লেখ করে টিপু মুনশি বলেন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে দেশভিত্তিক আলাদা অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে পারে যুক্তরাজ্য।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা চাই বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার পর আরও ছয় বছর বাংলাদেশের জন্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা অব্যাহত রাখুক যুক্তরাজ্য।”
যুক্তরাজ্যের প্রতিমন্ত্রী নাইজেল হাডলস্টোন বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি বেসরকারি উড়োজাহাজ চলাচল (এভিয়েশন), শিক্ষা এবং প্রতিরক্ষা বিষয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, “দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে।”
কমেন্ট