পণ্য রপ্তানি থেকে ৬২ বিলিয়ন ডলার আয়ের আশা
নতুন অর্থবছরে পণ্য ও সেবা রপ্তানি করে মোট ৭২ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য ঠিক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, যা গত অর্থবছরের লক্ষ্যের চেয়ে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি।
এর মধ্যে পণ্য রপ্তানি থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৬২ বিলিয়ন ডলার; তাতে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আর ১১ দশমিক ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে সেবা রপ্তানি থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার আয়ের আশা করছে সরকার।
৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে ৫৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। সে হিসেবে ৬ দশািমক ৬৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আড়াই বিলিয়ন ডলার পিছিয়ে ছিল রপ্তানি আয়।
আর সেবাখাতে গেল অর্থবছর ৯ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল, যা অর্জিত হয়ে কিছুটা প্রবৃদ্ধি থাকবে বলে আশা করছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
সব মিলিয়ে গেল অর্থবছর রপ্তানি থেকে ৬৭ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য ছিল। এবার তা ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ বাড়ছে।
বুধবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “এই লক্ষ্যমাত্রা ‘‘উচ্চাভিলাষী’ হলেও গ্যাস ও বিদ্যুতের নিশ্চয়তা দেওয়া গেলে তা অর্জন করা সম্ভব হবে।”
২০২২-২৩ অর্থবছরের রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকে প্রায় ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। নিট পণ্যে হয়েছে একটু বেশি। কিন্তু চামড়াসহ অন্যান্য খাতে কিছু ক্ষেত্রে রপ্তানি আগের বছরের চেয়ে কমে গেছে। সব মিলিয়ে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ ।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই কোনো অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি করে এত বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আসেনি। তবে দুঃসংবাদ হচ্ছে, তৈরি পোশাক ছাড়া অন্য সব খাতেই রপ্তানিতে ধস নেমেছে; চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত মাছ, কৃষিপণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য- সব খাতেই আগের অর্থবছরের চেয়ে আয় বেশ কমেছে।
২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন-পুরো অর্থবছর জুড়েই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপের মধ্যে ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার ব্যাপক দরপতন হয়েছে। বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতার সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছিল। মূল্যস্ফীতির পারদ প্রায় ১০ শতাংশে উঠেছিল।
এই সংকটের মধ্যেও রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক রপ্তানির ইতিবাচক ধারা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরের ৫৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৪৭ বিলিয়ন ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। অর্থাৎ মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ দশমিক ৫৮ শতাংশই এসেছে এই খাত থেকে।
এরমধ্যে প্রায় অর্ধেক ২৫ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারই এসেছে কম দামি পোশাক নিট পোশাক থেকে; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ। অর্থাৎ বিদায়ী অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে এই খাত থেকে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে।
৫৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার মোট রপ্তানি আয়ের ৪৬ দশমিক ৩৩ শতাংশই এসেছে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় এসেছে দশমিক ৪১ শতাংশ।
ওভেন পোশাক রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ; লক্ষ্যের চেয়ে বেশি এসেছে দশমিক ৫৪ শতাংশ। এই খাত থেকে ২১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে যে ৪৭ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে, তার মধ্যে ৫৫ শতাংশই এসেছে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে।
বিদায়ী অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৫৮ বিলিযন ডলার। তৈরি পোশাক থেকে আয়ের লক্ষ্য ছিল ৪৬ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।
২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫২ দশমিক শূন্য আট বিলিয়ন ডলার আয় করেছিলেন রপ্তানিকারকরা। এর মধ্যে তৈরি পোশাক থেকে এসেছিল ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার।
রপ্তানি আয়ের এই লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পরিকল্পনামাফিক নতুন রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী হলেও পণ্য রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আসেনি।
তবে ভবিষ্যতে ভালো কিছুর আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমেরিকা এবং ইউরোপে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় আমাদের পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। বিশেষ করে ইউরোপের জার্মানিতে রপ্তানি বেশ কম হয়েছে। তবে এসব দেশে এখন মূল্যস্ফীতি কমে আসছে। নভেম্বর থেকে হয়ত বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি আরও কমে আসবে। ফলে নভেম্বর থেকে হয়ত সারা বিশ্বব্যাপী আমাদের চাহিদা বাড়বে। সেই প্রেক্ষিতে আমরা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি।”
নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ পাওয়ার কথা ছিল শিল্পের, কিন্তু আমরা তা পাচ্ছি না। আবার দুই মাসের বিল বকেয়া থাকলেও লাইন কেটে দেওয়া হচ্ছে। ২০২৬ সালের পর সরকারের নগদ সহায়তা থাকবে না বলে বলা হচ্ছে, কিন্তু চীন এখনো নগদ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। সে জন্য নগদ সহায়তা অব্যাহত রাখতে সরকারকে ভিন্ন পথ বের করতে হবে।”
কমেন্ট