পোশাক রপ্তানি: ভিয়েতনামের চেয়ে ভালো করেছে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ৪ হাজার ৫০০ কোটি (৪৫ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানির ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে বাজার হিস্যা ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। ফাইল ছবি
দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য সুখবর। বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে গত বছর প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভিয়েতনামের চেয়ে বেশ ভালো করেছে বাংলাদেশ। ফলে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারকের অবস্থান ধরে রেখেছে। পাশাপাশি বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের বাজার হিস্যাও বেড়েছে।
বাংলাদেশ গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ৪ হাজার ৫০০ কোটি (৪৫ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানির ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে বাজার হিস্যা ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।
অর্থাৎ বাংলাদেশের বাজার হিস্যা ১ দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়েছে।
অন্যদিকে ২০২২ সালে ভিয়েতনাম ৩ হাজার ৫০০ কোটি (৩৫ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। তাদের বাজার হিস্যা ৬ দশমিক ১ শতাংশ। ২০২১ সালে দেশটির বাজার হিস্যা ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ ২০২৩’ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। গত সোমবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে ডব্লিউটিও।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বরাবরের মতো বিশ্বে পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ স্থানে আছে চীন। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউভুক্ত দেশগুলো ১৫ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যদিও একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক। তৃতীয় স্থানে আছে ভিয়েতনাম।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীন, ইইউ, বাংলাদেশ, ভিয়েতনামসহ শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশ গত বছর ৪৯ হাজার ২০০ কোটি বা ৪৯২ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। অন্যদিকে ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, যুক্তরাজ্য, চীন, কানাডা, কোরিয়া, রাশিয়াসহ শীর্ষ ১০ আমদানিকারক দেশ ৪৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে।
ডব্লিউটিওর তথ্যানুযায়ী, চীন গত বছর ১৮ হাজার ২০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে।
তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে তাদের রপ্তানি ছিল ১৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। সেই হিসাবে গত বছর দেশটির রপ্তানি ৬০০ কোটি ডলার বেড়েছে। তবে বৈশ্বিক রপ্তানিতে তাদের হিস্যা কমেছে।
বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের বাজার হিস্যা বাড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
এআরএইচ ডটকমকে তিনি বলেন, “বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যেও পোশাক রপ্তানিতে আমরা ইতিবাচক ধারা ধরে রেখেছি। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও সাড়ে ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।”
“তবে আগামী দিনগুলোতে এই ইতিবাচক ধারা থাকবে বলে মনে হয় না। কেননা, বিশ্ব পরিস্থিতি অনুকুলে নয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই। আমাদের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তনি কমছে। ইউরোপের দেশগুলোতেও প্রবৃদ্ধি কমে আসছে। জানি না কী হব।”
আশার কথা হচ্ছে ভারত, জাপানসহ নতুন বাজারগুলোতে আমরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। রাশিয়া ছাড়া সব বাজারেই বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু দুচিন্তাও আছে, জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিতে শুরু করেছে।
“এটা বন্ধ না হলে আমরা কিন্তু আবার পেছনের দিকে চলে যাবো। রপ্তানি কমবে; বিনিয়োগ কমবে। কর্মসংস্থান কমবে। সার্বিকভাবে যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। তাই আমি দেশের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংঘাতময় কর্মসূচী পরিহার করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিতে অনুরোধ করছি।”
কমেন্ট