কম দামি পোশাকে ভর করেই রপ্তানিতে ভালো শুরু
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পণ্য রপ্তানি থেকে যে বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে তার অর্ধেকই এসেছে নিট পোশাক থেকে। ফাইল ছবি
নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করে ৪৫৯ কোটি ২৯ লাখ (৪.৫৯ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। এরমধ্যে ২২৬ কোটি ৬৫ লাখ (২.২৭ বিলিয়ন) ডলারই এসেছে কম দামের পোশাক নিট পোশাক রপ্তানি থেকে।
হিসাব বলছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পণ্য রপ্তানি থেকে যে বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে তার অর্ধেকই (৪৯.৩৪%) এসেছে নিট পোশাক থেকে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বুধবার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও নিট পোশাক থেকে রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে।
জুলাই মাসে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ২৪ শতাংশ। অর্থাৎ এই খাত থেকে গত বছরের জুলাই মাসে যে আয় হয়েছিল, তার চেয়ে ২২ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি বিদেশি মুদ্রা সদ্য শেষ হওয়া জুলাই মাসে এসেছে। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি এসেছে ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
জুলাই মাসে সার্বিক পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় এসেছে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ।
এটা মূলত নিট পোশাক থেকে আয়ের উল্লম্ফনের কারণেই হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই মাসে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৩৯৫ কোটি ৩৭ লাখ ৪০ হাজার (৩.৯৫ বিলিয়ন) ডলার। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জুলাই মাসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৬ দশমিক শূন্য আট শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে।
জুলাই মাসে পোশাক খাত থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ৩৭৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত বছরের জুলাই মাসে এই খাত থেকে আয় হয়েছিল ৩৩৬ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই মাসে গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে তৈরি পোশাক থেকে আয় বেড়েছে ১৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আর লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেশি এসেছে ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ২২৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ২৪ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। হিসাব বলছে, জুলাই মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে মোট যে আয় হয়েছে, তার প্রায় অর্ধেকই এসেছে নিট পোশাক থেকে।
ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১৬৮ কোটি ৭২ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। তবে লক্ষ্যের চেয়ে আয় কম এসেছে ২ দশমিক শূন্য আট শতাংশ।
ইপিবির হিসাবে দেখা যায়, জুলাই মাসে তৈরি পোশাক থেকে যে আয় হয়েছে তার ৫৭ দশমিক ৩২ শতাংশই এসেছে কম দামি নিট পোশাক থেকে।
এত দিন ওভেন পোশাক থেকে বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আসত। তবে গত তিন অর্থবছর ধরে ওভেনকে পেছনে ফেলে শীর্ষে চলে এসেছে নিট খাত।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে মোট ৫ হাজার ৫৫৫ কোটি ৮৮ লাখ (৫৫.৫৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন দেশের বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা।
এরমধ্যে প্রায় অর্ধেক ২৫ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারই এসেছে নিট পোশাক থেকে; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয়ের ৪৬ দশমিক ৩৩ শতাংশই এসেছে নিট পোশাক থেকে। ওভেন পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ২১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার।
২০২২-২৩ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে যে ৪৭ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে, তার মধ্যে ৫৫ শতাংশই এসেছিল নিট পোশাক রপ্তানি থেকে।
২০২১-২২ অর্থবছরে নিট পোশাক থেকে আসে ২৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি মুদ্রা। ওভেন থেকে আসে ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার।
২০২০-২১ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার আসে নিট পোশাক থেকে। আর ওভেন থেকে আসে ১৪ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার।
তবে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ওভেন পোশাক থেকে ১৪ দশমিক শূন্য চার বিলিয়ন ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে আসে। নিট থেকে এসেছিল ১৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার।
নিট পোশাক রপ্তানি বাড়ছে কেন
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এআরএইচ ডটকমকে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি, আমরা নিজেরাও ভাবিনি নিট খাতের রপ্তানি এতটা বাড়বে। দুই বছরের করোনা মহামারির মধ্যেও দেশের রপ্তানি আয়ের যে উল্লম্ফন হয়েছিল, তা কিন্তু নিট পোশাকের ওপর ভর করেই হয়েছিল। এখন যুদ্ধের মধ্যেও সেটা অব্যাহত আছে।”
তিনি বলেন, “মানুষ যত সমস্যায়ই থাকুক, যত অর্থ সংকটেই থাকুক না কেন, অতি প্রয়োজনীয় কাপড় কিনতেই হয়। সে কারণে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় বাড়ছে।”
“যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে। সে কারণে ওই সব দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। তারা এখন খাদ্য ও অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছে।’
“নিট পোশাক যেহেতু অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য, তাই তারা বাধ্য হয়ে এগুলো কিনছে,” বলেন মোহাম্মদ হাতেম।
ওভেন পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি ও এভিন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “বিশ্বের সব দেশের অর্থনীতিতেই সংকট চলছে। এই যুদ্ধটা সবকিছু ওলোটপালট করে দিয়েছে। সংকটের এই সময়ে বায়াররা অতি প্রয়োজনীয় পোশাক বেশি কিনেছেন। সে কারণে নিট পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে।”
নিত্যপ্রয়োজনীয় পোশাকই আসলে নিট পোশাক। সাধারণ কথায় গেঞ্জির কাপড়ের তৈরি পোশাকই নিট। যেমন টি-শার্ট, পলো শার্ট, সোয়েটার, ট্রাউজার, জগার, শর্টস প্রভৃতি।
ঘরোয়া পরিবেশে সাধারণত টি-শার্ট, পলো শার্ট, শ্যান্ডো গেঞ্জি, ট্রাউজারজাতীয় পোশাক বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। আরামদায়ক হওয়ায় সারা বিশ্বেই রয়েছে এ ধরনের পোশাকের জনপ্রিয়তা।
অন্যদিকে শার্ট, প্যান্ট, স্যুট-ব্লেজারজাতীয় ফরমাল পোশাক হচ্ছে ওভেন ক্যাটারির পণ্য।
কমেন্ট