পোশাক রপ্তানিতে মন্দা দেখা দিয়েছে: ফারুক হাসান

পোশাক রপ্তানিতে মন্দা দেখা দিয়েছে: ফারুক হাসান

বিজিএমইএ সদস্যদের জন্য প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ২০২৩ সালের বাকি সময়ে বিশ্বে পোশাক বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য হারে কমবে। ফাইল ছবি

চলতি বছরের বাকি সময় তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য ভালো যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।

তিনি বলেছেন, গত কয়েক মাসের রপ্তানির চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে,  পোশাক রপ্তানির প্রধান বাজারগুলোয় ক্রেতার সংখ্যা অনেক কমেছে। গত জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৈরি পোশাক আমদানি যথাক্রমে ২২ দশমিক ৯২ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ কমেছে। 

“এই তথ্যই বলছে, গত কয়েক মাসে পোশাক রপ্তানিতে মন্দা দেখা দিয়েছে।”

বিজিএমইএ সদস্যদের জন্য প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ২০২৩ সালের বাকি সময়ে বিশ্বে পোশাক বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য হারে কমবে। 

বিজিএমইএ সদস্যদের হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় ফারুক হাসান বলেন, “বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খুচরা ও সামগ্রিক বাণিজ্যে হতাশাজনক দৃশ্য ফুটে উঠেছে। এর মানে দাঁড়ায়—চাহিদা ও অর্ডারে মন্দা এ বছরের বাকি সময়ে অব্যাহত থাকতে পারে।” 

ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউটিও) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বিশ্বব্যাপী  পোশাক বাণিজ্য ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ বেড়ে ৫৭৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। ২০২১ সালে এটি ছিল ৫৩৭ বিলিয়ন ডলার। 

চীনের পর বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে অবস্থান ধরে রেখেছে। ২০২১ সালের ৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে বাংলাদেশের রপ্তানি ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশে উন্নীত হয়। বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, এটি ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। 

২০১৬ সাল থেকে বৈশ্বিক পোশাক বাজারে বাংলাদেশের শেয়ার ৬ শতাংশের বেশি। গত বছর প্রথমবারের মতো এই শেয়ার ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। 

ফারুক হাসান বলেন, ২০২২ সালে বিশ্বে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৩৪ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩২ দশমিক ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।

 

এ দিকে বিশ্বে চীনের পোশাক রপ্তানি ১৭৬ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বেড়ে ১৮২ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। 

তবে বৈশ্বিক বাণিজ্যে চীনের অংশ ২০২১ সালের ৩২ দশমিক ৭৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২২ সালে ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ হয়েছে। 

৬ দশমিক ১২ শতাংশ শেয়ার নিয়ে বৈশ্বিক পোশাক বাজারে তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হিসাবে আছে ভিয়েতনাম। ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ শেয়ার নিয়ে তুরস্ক আছে চতুর্থ অবস্থানে। 

২০২২ সালে বিশ্বে ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি ১৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ বেড়ে ৩৫ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সালে এটি ছিল ৩১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। 

বিশ্বে তুরস্কের পোশাক রপ্তানি ২০২১ সালের ১৮ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২২ সালে ১৯ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এর অর্থ দেশটির রপ্তানি ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ বেড়েছে। 

বিজিএমইএ প্রধান বলেন, ২০২২ সালে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানির পরিমাণের মধ্যে ফারাক আরও বাড়ছে। 

তিনি জানান, ইউরোপ বিশ্বে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পোশাক আমদানিকারক মহাদেশ। 

গত ৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পোশাক আমদানির মূল্য ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ বেড়েছে। সারাবিশ্ব থেকে ইইউয়ের আমদানি গড়ে বার্ষিক ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ বেড়েছে। 

২০২২ সালে সারাবিশ্ব থেকে ইইউয়ের পোশাক আমদানি আগের বছরের তুলনায় ২০ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেড়েছে। ২০২১ সালে এই জোটের পোশাক আমদানি ৮৫ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ১০৩ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। এটি ২০১৮ সালে ছিল ৯০ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার। 

তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে ইইউ বাংলাদেশ থেকে ২২ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। ২০২১ সালে এটি ছিল ১৬ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালে ছিল ১৬ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। 

জুলাইয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৭.৪৩ শতাংশ 

তবে রপ্তানি উুন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গত ২ আগস্ট রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪৫৯ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজার (৪.৫৯ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।  

এই অঙ্ক গত অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় এসেছে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ। 

এর মধ্যে তৈরি পোশাক থেকে এসেছে ৩৯৫ কোটি ৩৭ লাখ ৪০ হাজার (৩.৯৫ বিলিয়ন) ডলার। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জুলাই মাসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৬ দশমিক শূন্য আট শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। আর এই খাতের উপর ভর করেই রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। 

জুলাই মাসে পোশাক খাত থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ৩৭৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত বছরের জুলাই মাসে এই খাত থেকে আয় হয়েছিল ৩৩৬ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।  

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই মাসে গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে তৈরি পোশাক থেকে আয় বেড়েছে ১৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আর লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেশি এসেছে ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। 

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি থেকে ৪৭ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। যা আগের অর্থবছরের (২০২১-২২) চেয়ে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি।

আম রপ্তানির দুয়ার খুলছে পরবর্তী

আম রপ্তানির দুয়ার খুলছে

কমেন্ট