পোশাক রপ্তানি: যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য কানাডায় ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে অর্থবছর শুরু
নতুন অর্থবছরটা বেশ ভালোই শুরু হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ৭২ কোটি ৯০ লাখ ৩০ হাজার ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই মাসের চেয়ে ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি। ফাইল ছবি
একক দেশ হিসাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মোট রপ্তানির ২০ শতাংশের মতো রপ্তানি হয় এই বাজারে।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির এই দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি প্রায় ৭ শতাংশ কমে পোশাক শিল্পমালিকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে।
তবে নতুন অর্থবছরটা বেশ ভালোই শুরু হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ৭২ কোটি ৯০ লাখ ৩০ হাজার ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা।
এই অঙ্ক গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই মাসের চেয়ে ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি। গত বছরের জুলাইয়ে ৬৮ কোটি ৫৭ লাখ ৭০ হাজার ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল।
শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অপ্রচলিত বাজারেও বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শুরু করেছে বাংলাদেশ।
একক দেশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে (১২ মাস, জুলাই-জুন) যুক্তরাষ্ট্রে ৯৭০ কোটি ১৩ লাখ ৪০ হাজার ৯.৭০ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৮৮ শশতাংশ কম।
২০২১-২২ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) বুধবার দেশভিত্তিক রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৭টি দেশে পোশাক রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ৪০ শতাংশ বেড়েছে; ১ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার থেকে ১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
এই মাসে ইইউভূক্ত দেশ স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ড এবং পোল্যান্ডে রপ্তানি বেড়েছে যথাক্রমে ৩৬.৩৫, ২২.৭১, ৩৬.৭৫, ২৩.০৩ এবং ১৮.০৭ শতাংশ।
তবে একক দেশ হিসেবে জুলাই মাসে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি বাজার জার্মানিতে পোশাক রপ্তানি শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ কমেছে। রপ্তানি হয়েছে ৫১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পোশাক। গত বছরের জুলাইয়ে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ৫১ কোটি ৭৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে জার্মানিতে ৭ দশমিক শূন্য আট বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ কম।
২০২১-২২ অর্থবছরে জার্মানিতে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ৭ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার।
এছাড়া জুলাই মাসে ইইউভূক্ত অন্য দেশগুলোর মধ্যে ফিনল্যান্ড, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, এস্তোনিয়া, লিথুনিয়া, মাল্টা, স্লোভাকিয়া এবং স্লোভানিয়াতে রপ্তানি কমেছে।
যুক্তরাজ্য ও কানাডায় প্রবৃদ্ধি বেশ ভালো
বাংলাদেশের পোশাকের অন্যতম বড় বাজার যুক্তরাজ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে মাসে ৪৭ কোটি ৫৫ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। যা গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাইয়ে এই বাজারে ৩৬ কোটি ৬৪ লাখ ২০ হাজার ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিলেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা।
গত অর্থবছরে যুক্তরাজ্যে পোশাক রপ্তানি প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছিল।
আরেক বাজার কানাডাতেও বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। জুলাই মাসে দেশটিতে ১২ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে এই অঙ্ক ছিল ১১ কোটি ২৩ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ।
অপ্রচলিত বাজারে বেড়েছে ২৩.৭৫ শতাংশ
জুলাই মাসে অপ্রচলিত বাজারে (নতুন বাজার) ৬৭ কোটি ৪৮ লাখ ২০ হাজার ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। যা গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে ২৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে অপ্রচলিত বাজারগুলোতে ৫৪ কোটি ৫৩ লাখ ২০ হাজার ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিলেন রপ্তানিকারকরা।
প্রধান অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় পোশাক রপ্তানি যথাক্রমে ৪৯.৯৯, ৫৫.৭৩, ২.৬০ এবং ১৯.৫৯ শতাংশ বেড়েছে।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই মাসে পণ্য রপ্তানি করে মোট ৪৫৯ কোটি ২৯ লাখ (৪.৫৯ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৩৯৫ কোটি ৩৭ লাখ ৪০ হাজার (৩.৯৫ বিলিয়ন) ডলার।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জুলাই মাসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৬ দশমিক শূন্য আট শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে।
জুলাই মাসে পোশাক খাত থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ৩৭৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত বছরের জুলাই মাসে এই খাত থেকে আয় হয়েছিল ৩৩৬ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।
এতে দেখা যাচ্ছে, এই মাসে গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে তৈরি পোশাক থেকে আয় বেড়েছে ১৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আর লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেশি এসেছে ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “পোশাক রপ্তানির প্রধান বাজারগুলোয় ক্রেতার সংখ্যা অনেক কমেছে। তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, গত জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৈরি পোশাক আমদানি যথাক্রমে ২২ দশমিক ৯২ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ কমেছে।
“এই তথ্যই বলছে, গত কয়েক মাসে পোশাক রপ্তানিতে মন্দা দেখা দিয়েছে। জানিনা, সামনের মাসগুলোতে কী হবে? ভোলো যাবে বলে মনে হচ্ছে না।”
“তবে নানা অনিশ্চয়তার মধ্যেও নতুন অর্থবছরের শুরুটা ভালোই হয়েছে বলা যায়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে অর্থবছর শুরু হয়েছে। এই ধারা ধরে রাখতে পারলে খুবই ভালো।”
কমেন্ট