সুখবর: কানাডায় ২০৩৪ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে বাংলাদেশ
২০২৬ সালে এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উত্তরণ হওয়ার পর সমস্ত উন্নয়নশীল দেশের জন্য শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা বাড়িয়েছে কানাডা সরকার, যা থেকে বাংলাদেশ নিশ্চিত উপকৃত হবে।
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য সুখবর। বাংলাদেশের পোশাকের অন্যতম বড় বাজার কানাডার পার্লামেন্টে পাশ হওয়া একটি বিল অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০৩৪ সাল পর্যন্ত দেশটির বাজারে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাবে।
২০২৬ সালে এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উত্তরণ হওয়ার পর সমস্ত উন্নয়নশীল দেশের জন্য শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা বাড়িয়েছে কানাডা সরকার, যা থেকে বাংলাদেশ নিশ্চিত উপকৃত হবে।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। তখনো কানাডায় শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা পাবে বাংলাদেশ।
অর্থাৎ ২০৩৪ সাল পর্যন্ত অন্যতম এই বড় বাজারে শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা থাকায় কিছুটা হলেও হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা।
কানাডা সরকার উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জেনারেল প্রেফারেনশিয়াল ট্যারিফ (জিপিটি) স্কিমের আওতায় শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই স্কিমের আওতায় তৈরি পোশাক উৎপাদনের নিয়ম শিথিল করাসহ অন্যান্য পণ্যও দেশটিতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে। নতুন এই স্কিমে শিল্পের শ্রম ও পরিবেশগত কমপ্লায়েন্সের ওপর ভিত্তি করে এই বাজার প্রবেশাধিকার সুবিধাগুলোকে সম্প্রসারিত করার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান রোববার রাতে এআরএইচ ডটকমকে এই সুসংবাদ দিয়ে বলেন, “কানাডার পার্লামেন্ট গত ৮ জুন একটি ফাইন্যান্স বিল পাস করেছে; সেখানে জিপিটি স্কিমের মেয়াদ ২০৩৪ সালের শেষ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।”
বাংলাদেশ ২০০৩ সাল থেকে লিস্ট-ডেভেলপমেন্ট কান্ট্রি ট্যারিফ (এলডিসিটি) স্কিমের আওতায় কানাডায় সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা ভোগ করছে। এলডিসিটি স্কিম জিপিটির আওতায় পড়ে।
জিপিটি স্কিম প্রতি ১০ বছর পরপর নবায়ন করা হচ্ছে। স্কিমটির বর্তমান সংস্করণের মেয়াদ ২০২৪ সালের শেষের দিকে শেষ হবে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ১১তম শীর্ষ গন্তব্য ছিল কানাডা। এই বাজারে রপ্তানি হয়েছে ১৭২ কোটি (১.৭২ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য, যা মোট পণ্য রপ্তানির ৩ দশমিক ১০ শতাংশ।
আগে বছর অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশটিতে রপ্তানি হয় ১৫২ কোটি (১.৫২ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য।
এ হিসাবে গত অর্থবছরে রপ্তানি বেড়েছে ১৩ শতাংশের মতো।
কানাডা বাংলাদেশের তৈরি পোশাকেরও অন্যতম বড় বাজার। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে কানাডায় বাংলাদেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১৫৪ কোটি ৫৮ লাখ (১.৫৪ বিলিয়ন) ডলার। এই রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় সাড়ে ১৬ শতাংশ বেশি।
২০২১-২২ অর্থবছরে বাজারটিতে ১৩৩ কোটি (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল।
আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই কানাডায় ১৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি।
ইপিবির এ সব তথ্য বলছে, কানাডায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলেছে। আগামী দিনগুলোতে আরও বাড়বে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
তিনি বলেন, “কানাডা বাংলাদেশ থেকে তাদের তৈরি পোশাকের মোট চাহিদার মাত্র ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ আমদানি করে। তার মানে, এ বাজারে বাংলাদেশের আরও বড় সম্ভাবনা আছে। আমরা এখন সেই সুযোগটিই কাজে লাগাতে চাই।”
“জিপিটি প্লাস সুবিধা নিয়ে আমরা এখন দেশটিতে রপ্তানি আরও বাড়াতে আমাদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন করব। আশা করি সফল হব।”
ফারুক বলেন, “এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন, সবুজ এবং আরও টেকসই কর্মক্ষেত্রে রূপান্তরিত করার পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক অবকাঠামো উন্নয়নে অবদান রাখবে।
“এখন আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে,” বলেন বিজিএমইএ সভাপতি।
কমেন্ট