রাশিয়ায় রপ্তানি বাড়ছে, ২ মাসে প্রবৃদ্ধি ৪৩ শতাংশ
সম্ভাবনাময় বাজারে রপ্তানি ঘুরে দাঁড়ানোয় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
যুদ্ধের কারণে রাশিয়ায় পণ্য রপ্তানিতে যে ধাক্কা লেগেছিল, তা কেটে যেতে শুরু করেছে। দেশটিতে রপ্তানি ফের বাড়ছে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) দেশটিতে ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৩ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে রাশিয়ায় পণ্য রপ্তানি থেকে ৩ কোটি ৩৫ লাখ ডলার আয় হয়েছিল। যা ছিল আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ কম।
২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে রাশিয়ায় পণ্য রপ্তানি থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।
সম্ভাবনাময় বাজারে রপ্তানি ঘুরে দাঁড়ানোয় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
এআরএইচ ডটকমকে তিনি বলেন, “তৈরি পোশাকের খুবই সম্ভাবনা এবং ভালো বাজার হয়ে উঠছিল রাশিয়া। অনেক দিন চেষ্টার ফলে আলো দেখা দিয়েছিল। আমরা আশা করেছিলাম গত ২০২২-২৩ অর্থবছরেই দেশটিতে আমাদের রপ্তানি ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলার অতিক্রম করবে।”
“কিন্তু যুদ্ধের কারণে সে আশায় হোঁচট খায়। রপ্তানি অনেক কমে যায়। এখন আবার বাড়ছে। যুদ্ধ থামেনি; এর মধ্যেও রপ্তানি বাড়া খুবই ইতিবাচক বলে মনে হচ্ছে। আশা করছি, রাশিয়ায় ১ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির আশা শিগগিরই পূরণ হবে।”
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সবশেষ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাশিয়ার বাজারে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৪৬ কোটি ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।
যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ২৮ শতাংশ কম। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই বাজারে ৬৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিলেন রপ্তানিকারকরা।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করে। এর পর থেকে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি কমতে থাকে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছর জুড়েই সেই নেতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকে।
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে রাশিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়তে থাকে। ওই অর্থবছরে দেশটিতে ৪৮ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়।
২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেড়ে সেই রপ্তানি ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ ২০ হাজার ডলারে গিয়ে উঠে।
পরের অর্থবছরে (২০২১-২২) অবশ্য তা সামান্য কমে ৬৩ কোটি ৮৩ লাখ ১০ হাজার ডলারে নেমে আসে।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাশিয়ায় বাজারে পণ্য রপ্তানি থেকে ১ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল সরকার। কিন্তু যুদ্ধের কারণে তা ধাক্কা খেয়েছে। শেষ পর্যন্ত ৪৬ কোটি ডলার আয় হয়েছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে রাশিয়ায় ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৪ কোটি ২৩ লাখ ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে।
এই দুই মাসে বাজারটিতে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৪৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, যুদ্ধের কারণে পশ্চিমের দেশগুলো রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। রাশিয়ার শীর্ষ ব্যাংকগুলোকে সুইফট ব্যবস্থা থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে দেশটির সঙ্গে লেনদেন প্রায় স্থবির হয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
“এ কারণে আমাদের তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে রাশিয়ায় পণ্য পাঠাতে হচ্ছে। রাশিয়ার ক্রেতাদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যেও রপ্তানি বাড়াটা খুবই ভালো লক্ষণ বলে মনে হচ্ছে।”
“যুদ্ধ থেমে গেলে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে রাশিয়ায় আমাদের রপ্তানি আরও বাড়বে বলে আশা করছি,” যোগ করেন ফারুক হাসান।
কমেন্ট