সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১০.৩৭ শতাংশ

সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১০.৩৭ শতাংশ

বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস হচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এবং রপ্তানি আয়।

এই দুই সূচকের মধ্যে রেমিটেন্সে বড় ধস নামলেও রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক ধারা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪৩১ কোটি (৪.৩১ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে ১০ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি।

তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম এসেছে ৭ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ। আগের মাস আগস্টের চেয়ে কম ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

আগস্টে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪৭৮ কোটি ২২ লাখ (৪.৭৮ বিলিয়ন) ডলার বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এসেছিল ৩৯০ কোটি ৫০ লাখ (৩.৫০ বিলিয়ন) ডলার।

এই সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৪৬৩ কোটি ৭০ লাখ (৪.৬৪ বিলিয়ন) ডলার।

সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ (১.৩৬ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। একক মাসের হিসাবে এই রেমিটেন্স সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

২০২০ সালের এপ্রিলে ১০৯ কোটি ২৯ লাখ (১.০৯ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এর পর গত সাড়ে তিন বছরে সেপ্টেম্বরের মতো এত কম রেমিটেন্স দেশে আসেনি।

চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে ১৬০ কোটি (১.৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ১৯৭ কোটি (১.৯৭ বিলিয়ন) ডলার।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেশে আসে ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই সেপ্টেম্বরে গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে রেমিটেন্স কমেছে ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আর আগস্টের চেয়ে কমেছে ১৬ শতাংশ।

তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যেও রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এটা খুশির খবর। তবে আগের মাস আগস্টের চেয়ে কিন্তু আয় কমেছে।”

“আগামী দিনগুলোতে এই ইতিবাচক ধারা থাকবে বলে মনে হয় না। কেননা, বিশ্ব পরিস্থিতি অনুকুলে নয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষ্যণ নেই। আমাদের পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমছে। এর মধ্যে ভিসা নীতি কার্যকরের ঘোষণার পর অন্য কোনো নিষেধাজ্ঞা আসবে কী না-তা নিয়ে সবাই চিন্তিত। ইউরোপের দেশগুলোতেও প্রবৃদ্ধি কমে আসছে। জানি না কী হবে,” বলেন বিজিএমইএ প্রধান।

রপ্তানি উুন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রোববার সন্ধ্যায় রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি থেকে ১ হাজার ৩৬৮ কোটি ৫৪ লাখ (১৩.৬৮ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে ১২ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল।

এই তিন মাসে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ১৩ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ২ দশমিক ১৬ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪৫৯ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজার (৪.৫৯ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। যা ছিল গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি: লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় এসেছিল ২ দশমিক ৫০ শতাংশ।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে মোট ৫ হাজার ৫৫৫ কোটি ৮৮ লাখ (৫৫.৫৬ বিলিয়ন) আয় করেছিলেন রপ্তানিকারকরা। যা ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ২১ শতাংশ কম ছিল। 

২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫২ দশমিক শূন্য আট বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৬২ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য ধরেছে সরকার।

৮৫ শতাংশই এসেছে পোশাক থেকে

ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান তৈরি পোশাক থেকে এসেছে ১ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ (১১.৬১ বিলিয়ন) ডলার। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই তিন মাসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ দশমিক ৮৯ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে।

আর এই খাতের উপর ভর করেই রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।

জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে পোশাক খাত থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ১১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ৮০ ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই খাত থেকে আয় হয়েছিল ১১ কোটি ৬১ লাখ ডলার।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই তিন মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে তৈরি পোশাক থেকে আয় বেড়েছে ১৩ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ। তবে লক্ষ্যের চেয়ে আয় কম এসেছে ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৬ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে পণ্য রপ্তানি থেকে মোট যে আয় হয়েছে, তার অর্ধেকই এসেছে নিট পোশাক থেকে।

ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ৪ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ। তবে লক্ষ্যের চেয়ে আয় কম এসেছে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

অন্যান্য খাত

তৈরি পোশাক ছাড়া অন্যান্য প্রধান খাতগুলোর প্রায় সব খাতেই রপ্তানি আয় কমেছে। লক্ষ্যও পূরণ হয়নি।

এই তিন মাসে কৃষি পণ্য রপ্তানি থেকে আয় কমেছে ৫ দশমিক ২শতাংশ। চামড়া ওচাড়াজাত পণ্য থেকে আয় কমেছে ১৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল রপ্তানি কমেছে ৪৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। হিমায়িত মাছ রপ্তানি থেকে আয় কমেছে ২৫ শতাংশ।

এছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি আয় কমেছে ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

তবে আশার আলো দেখা যাচ্ছে ওষুধ রপ্তানিতে। এই তিন মাসে ওষুধ রপ্তানি থেকে আয় প্রায় ২৬ শতাংশ বেড়েছে।

প্লাষ্টিক দ্রব্য রপ্তানিও বেড়েছে। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ১৬ দশমিক ২৪ শতাংশ।

‘নকল পোশাক’ রপ্তানির শীর্ষ পাঁচ দেশের একটি বাংলাদেশ: ইউএসটিআর পরবর্তী

‘নকল পোশাক’ রপ্তানির শীর্ষ পাঁচ দেশের একটি বাংলাদেশ: ইউএসটিআর

কমেন্ট