রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে নিট পোশাক
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৬ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ। এই তিন মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে মোট যে আয় হয়েছে, তার অর্ধেকই এসেছে নিট পোশাক থেকে।
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের দুটি উপখাত হচ্ছে ওভেন ও নিট। আগে নিটের চেয়ে ওভেন পোশাক রপ্তানি থেকে বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আসত।
বেশ কয়েক বছর ধরে রপ্তানি বাণিজ্যে এই দুই খাতের অবদান ছিল কাছাকাছি। কিন্তু করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে ওভেনকে পেছনে ফেলে ওপরে উঠে আসে নিট খাত। এখনও সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
দিন যত যাচ্ছে, রপ্তানি আয়ে ওভেনের চেয়ে নিট পোশাকের অবদান ততই বাড়ছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি থেকে মোট ২৭ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ওভেন পোশাক থেকে এসেছিল ১৪ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার। আর নিট পোশাক থেকে এসেছিল ১৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার।
২০২০-২১ অর্থবছরে পাল্টে যায় চিত্র; নিট থেকে আসে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার। আর ওভেন থেকে আসে ১৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার।
২০২১-২২ অর্থবছরে ওভেন থেকে আসে ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার; নিট থেকে আসে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার বেশি ২৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি থেকে আসে মোট ৪৭ বিলিয়ন ডলার। তার মধ্যে নিট থেকে আসে ২৫ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার; ওভেন থেকে আসে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার কম-২১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার।
রোববার ইপিবি রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থ্যাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি থেকে মোট ১ হাজার ৩৬৮ কোটি ৫৪ লাখ (১৩.৬৮ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি।
এর মধ্যে তৈরি পোশাক থেকে এসেছে ১ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ (১১.৬২ বিলিয়ন) ডলার। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই তিন মাসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ দশমিক ৮৯ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে।
এর মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৬ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে পণ্য রপ্তানি থেকে মোট যে আয় হয়েছে, তার অর্ধেকই এসেছে নিট পোশাক থেকে।
অন্যদিকে ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ৪ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ। তবে লক্ষ্যের চেয়ে আয় কম এসেছে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
এই তথ্যই বলছে, নিট পোশাক তথা কম দামি পোশাকে ভর করেই ভর করেই রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।
জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে পোশাক খাত থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ১১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ৮০ ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই খাত থেকে আয় হয়েছিল ১১ কোটি ৬১ লাখ ডলার।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই তিন মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে তৈরি পোশাক থেকে আয় বেড়েছে ১৩ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ। তবে লক্ষ্যের চেয়ে আয় কম এসেছে ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে পণ্য রপ্তানিতে সাড়ে ৯ শতাংশ যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা নিট পোশাক থেকে আয়ের উল্লম্ফনের কারণেই হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় বেশি বাড়ছে কেন-এ প্রশ্নের উত্তরে মোহাম্মদ হাতেম এআরএইচ ডটকমকে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি, আমরা নিজেরাও ভাবিনি নিট খাতের রপ্তানি এতটা বাড়বে। দুই বছরের করোনা মহামারির মধ্যেও দেশের রপ্তানি আয়ের যে উল্লম্ফন হয়েছিল, তা কিন্তু নিট পোশাকের ওপর ভর করেই হয়েছিল। এখন যুদ্ধের মধ্যেও সেটা অব্যাহত আছে।”
তিনি বলেন, “মানুষ যত সমস্যায়ই থাকুক, যত অর্থ সংকটেই থাকুক না কেন, অতি প্রয়োজনীয় কাপড় কিনতেই হয়। সে কারণে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় বাড়ছে।”
“যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গিয়েছিল। সে কারণে ওই সব দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গিয়েছিল। তারা তখন খাদ্য ও অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছিল।”
“নিট পোশাক যেহেতু অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য, তাই তারা বাধ্য হয়ে এগুলো কিনেছে। সে কারণে এই খাত থেকে আয়ের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত ছিল।”
“সুসংবাদ হচ্ছে, আমাদের পোশাকের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ অন্য দেশে মূল্যস্ফীতি কমার খবর পাওয়া যাচ্ছে। তাতে আগামী দিনগুলোতে নিট পোশাক রপ্তানি আরও বাড়বে বলে আশা করছি।”
ওভেন পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি ও এভিন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “বিশ্বের সব দেশের অর্থনীতিতেই সংকট চলছে। এই যুদ্ধটা সবকিছু ওলোটপালট করে দিয়েছে। সংকটের এই সময়ে বায়াররা অতি প্রয়োজনীয় পোশাক বেশি কিনেছেন। সে কারণে নিট পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে।”
নিত্যপ্রয়োজনীয় পোশাকই আসলে নিট পোশাক। সাধারণ কথায় গেঞ্জির কাপড়ের তৈরি পোশাকই নিট। যেমন টি-শার্ট, পলো শার্ট, সোয়েটার, ট্রাউজার, জগার, শর্টস প্রভৃতি।
ঘরোয়া পরিবেশে সাধারণত টি-শার্ট, পলো শার্ট, শ্যান্ডো গেঞ্জি, ট্রাউজারজাতীয় পোশাক বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। আরামদায়ক হওয়ায় সারা বিশ্বেই রয়েছে এ ধরনের পোশাকের জনপ্রিয়তা।
অন্যদিকে শার্ট, প্যান্ট, স্যুট-ব্লেজারজাতীয় ফরমাল পোশাক হচ্ছে ওভেন ক্যাটারির পণ্য।
কমেন্ট