রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কা
আক্টোবরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৩৭৬ কোটি ২০ লাখ (৩.৭৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ কম। আর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ আয় কম এসেছে।
বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত, গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চতুর্থ মাস আক্টোবরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৩৭৬ কোটি ২০ লাখ (৩.৭৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ কম। আর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ আয় কম এসেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২৬ মাস পর সবচেয়ে কম রপ্তানি আয় দেশে এসেছে সদ্য শেষ হওয়া অক্টোবর মাসে। ২০২১ সালের আগস্টে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৩৮ কোটি ৩০ লাখ (৩.৩৮ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিলেন বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা।
এর পর অক্টোবর মাসের মত এতো কম আয় কোনো মাসেই আসেনি।
এই মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৫২৫ কোটি ১০ লাখ (৫.২৫ বিলিয়ন) ডলার। গত বছরের অক্টোবরে আয় হয়েছিল ৪৩৫ কোটি ৬৬ লাখ (৪.৩৫ বিলিয়ন) ডলার।
ইপিবি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়,অক্টোবর মাসে রপ্তানিতে ধস নামলেও অর্থবছরের চার মাসের (জুলাই-অক্টোবর) হিসাবে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।
এই চার মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে সব মিলিয়ে ১ হাজার ৭৪৪ কোটি ৭৫ লাখ (১৭.৪৪ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছে । যা গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি।তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম এসেছে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ।
গত অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে আয় হয়েছিল ১৬ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ১৯ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই-অক্টোবর সময়ে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প থেকে এসেছে ১৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
এর মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৮ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ।
ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ৬ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার; গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় কমেছে ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
এই চার মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ১৬ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ১৩ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার।
ইপিবির হিসাব বলছে, জুলাই-অক্টোবর চার মাসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ দশমিক ৭৩ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে।
অক্টোবরে পোশাক রপ্তানি কমেছে ১৪ শতাংশ
মূলত পোশাক রপ্তানিতে ধসের কারণেই অক্টোবরে সার্বিক রপ্তানিতে বড় ধাক্কা লেগেছে। এই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে ৩ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ কম।
অক্টোবরে ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের অক্টোবরে আয়ের অঙ্ক ছিল ১ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। কমেছে ২১ দশমিক ৯০ শতাংশ।
এই মাসে নিট পোশাক থেকে এসেছে ১ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের অক্টোবরে এসেছিল ২ দশমিক শূন্য সাত বিলিয়ন ডলার। কমেছে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
অন্যান্য খাত
তৈরি পোশাক ছাড়া অন্য সব খাতেই রপ্তানি আয় কমেছে। আর সে কারণেই সার্বিক রপ্তানিতে বড় হোঁচট খেয়েছে।
অন্যান্য খাতের মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাস জুলাই-অক্টোবরে হিমায়তি মাছ রপ্তানি কমেছে ২০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় কমেছে ২৪ শতাংশ।
পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে আয় কমেছে ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল রপ্তানি থেকে আয় কমেছে ৪৫ শতাংশ।
তবে এই চার মাসে ওষুধ রপ্তানি থেকে আয় ১৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেড়েছে। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে ১৪ দশমিক ১৪ শতাংশ।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৬২ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার। এর মধ্যে ৮৪ দশমিক ৩০ শতাংশ (৫২ দশমিক ২৭ বিলিয়ন) ডলার তৈরি পোশাক থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে সব মিলিয়ে ৫৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৪৭ বিলিয়ন ডলারই এসেছিল তৈরি পোশাক থেকে।
কমেন্ট