শ্রমিক বিক্ষোভে সহিংসতার নিন্দা যুক্তরাষ্ট্রের

শ্রমিক বিক্ষোভে সহিংসতার নিন্দা যুক্তরাষ্ট্রের

বেতন বাড়ানোর দাবিতে ঢাকার আশুলিয়ায় পোশাকশ্রমিকদের আন্দোলনের সময় পুলিশের সতর্ক অবস্থান। গত মঙ্গলবার আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায়। ছবি: সংগৃহীত

ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত পোশাকশ্রমিকদের ওপর দমন–পীড়নে উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র। শ্রমিকেরা যেন কোনো ধরনের সহিংসতা ও প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ডের ভয় ছাড়াই সভা–সমাবেশ করতে পারেন এবং নিজেদের দাবিদাওয়া তুলে ধরতে পারেন, তা সরকারকে নিশ্চিত করতে বলেছে দেশটি।

বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে। বিবৃতিতে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, “বাংলাদেশে ন্যূনতম মজুরি নিয়ে বিক্ষোভকারী পোশাকশ্রমিকদের ওপর সহিংসতা চালানোর নিন্দা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়নের কর্মকাণ্ডকে অপরাধ সাব্যস্ত করার নিন্দা জানানো হচ্ছে।”

একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মোট রপ্তানি আয়ের ২০ শতাংশের মতো আসে এই দেশ থেকে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, “গত সপ্তাহে রাসেল হাওলাদার নামের ২৬ বছর বয়সী এক কারখানা শ্রমিক ও সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সদস্য পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার খবরে আমরা মর্মাহত। এ ছাড়া ঢাকার একটি কারখানার ভেতরে বিক্ষোভকারীদের দেওয়া আগুনে ৩২ বছর বয়সী শ্রমিক ইমরান হোসেনের মৃত্যুতে আমরা শোক প্রকাশ করছি। তাদের পরিবার এবং শ্রমিক সমাজের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাই।”

গত ৩০ অক্টোবর মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গাজীপুরের চান্দনার ভোগড়া এলাকায় পোশাকশ্রমিকেরা বিক্ষোভ করলে একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় আহত হয়ে রাসেল হাওলাদারের মৃত্যু হয়।

তার মৃত্যুর খবরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা গাজীপুরের কোনাবাড়ী একটি কারখানায় আগুন দেন। আগুন নেভানোর পর সেখান থেকে ইমরান নামের একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশের অধিকার রক্ষায় আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে শ্রমিক ও শ্রমিকনেতাদের বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা মামলা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি।”

বেসরকারি খাতে যেসব প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের যুক্তিসংগত মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ইউনিয়নের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে, তাদের প্রশংসা করা হয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে। পোশাকশ্রমিকদের জন্য যে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে, তা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মজুরি বৃদ্ধি এমনভাবে করতে হবে, যাতে শ্রমিক ও তাদের পরিবার ক্রমশ যে অর্থনৈতিক চাপে মুখে পড়ছে, তার সমাধান নিশ্চিত হয়।”

তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকরা মজুরি বাড়ানোর দাবিতে গত কিছুদিন থেকে ঢাকা ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলন করছেন। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার মজুরি বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধিদের সম্মতিতে মূল মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে পোশাক শ্রমিকদের জন্য সাড়ে ১২ হাজার টাকা সর্বনিম্ন মজুরি চূড়ান্ত করা হয়। নতুন এ বেতন কাঠামো আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।

তবে ন্যূনতম এ মজুরির দাবি প্রত্যাখান করে শ্রমিকরা বুধবার গাজীপুর ও সাভারের আশুলিয়ায় পোশাক কারখানা অধ্যুষিত এলাকায় বিক্ষোভে নামে। আশুলিয়ায় কড়া প্রহরায় শ্রমিকরা সড়কে নামতে না পারলেও গাজীপুরের কয়েক এলাকায় বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ হয়।

পুলিশের সঙ্গে সংর্ঘষের মধ্যে এক নারী নিহত হয়েছেন। আরও শ্রমিক ও পুলিশ আহত হয়েছে। পুলিশের একটি সাঁজোয়া যানে সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণে তিনজন পুলিশ আহত হন।

এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতি এল। এতে বলা হয়, এমনভাবে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক যাতে শ্রমিক ও তাদের পরিবারের উপর ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলার দিকটি নিশ্চিত করা যায়। এজন্য ত্রিপক্ষীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “কোনো ধরনের সংঘাত, প্রতিহিংসা ও ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে শ্রমিকরা যাতে তাদের সমাবেশের স্বাধীনতার এবং সমন্বিত দরকষাকষির অধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সরকারগুলোকে অবশ্যই তা নিশ্চিত করতে হবে।

“বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাপী আমাদের কাজের মধ্য দিয়ে এসব মৌলিক মানবাধিকারকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কা পরবর্তী

রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কা

কমেন্ট