বেশি দামে পোশাক কিনবে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো
আমেরিকান অ্যাপারেলের প্রধান নির্বাহী স্টিফেন ল্যামার বলেন, “মজুরি বৃদ্ধিকে সমর্থন করার জন্য আমাদের সদস্যরা দায়িত্বশীলভাবে ক্রয় অব্যাহত রাখবে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার আমরা এমন প্রতিশ্রুতির পুনরাবৃত্তি করেছি।”
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের উচ্চ মজুরি দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এইচঅ্যান্ডএম, গ্যাপসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক ফ্যাশন ব্র্যান্ড।
তারা বাংলাদেশের কারখানাগুলো থেকে বেশি দামে তৈরি পোশাক কিনবে। এমন তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর সংগঠন আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ)। খবর রয়টার্সের
বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। চীনের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান।
মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্প খাতের শ্রমিকেরা আন্দোলন করছেন। এতে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষও হচ্ছে।
এমন প্রেক্ষাপটে গত মঙ্গলবার সরকার নতুন মজুরি ঘোষণা করেছে। তাতে ন্যূনতম মাসিক মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ১২ হাজার টাকা বা ১১৩ ডলার (প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে) নির্ধারণ করা হয়েছে।
কিন্তু সাড়ে ১২ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির এ সিদ্ধান্ত মানছেন না পোশাক শ্রমিকদের একটি বড় অংশ।
ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়ে দেশের পোশাকশ্রমিকেরা আন্দোলন করে আসছেন। ২১ অক্টোবর থেকে এ দাবিতে তারা সড়কে নামেন।
মালিকপক্ষ প্রথমে ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল।
এ নিয়ে গত ৩০ অক্টোবর আশুলিয়া, সাভার ও গাজীপুরের কয়েকটি শিল্পাঞ্চলে পুলিশ ও তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে অন্তত দুইজন নিহত এবং প্রায় ৪০ জন আহত হয়।
এরপর গত ১ নভেম্বর ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাবিত ১০ হাজার ৪০০ টাকা থেকে আরও বাড়াতে রাজি হন কারখানা মালিকেরা।
মঙ্গলবার বৈঠকে বসে অবশেষে নতুন সর্বনিম্ন মজুরি চূড়ান্ত করে মজুরি বোর্ড। হয়। আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে এটি কার্যকর হওয়ার কথা।
২০১৩ সালে পোশাক খাতের ন্যূনতম মজুরি ৭৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা করেছিল নিম্নতম মজুরি বোর্ড। এরপর ২০১৮ সালে ন্যূনতম মজুরি তার চেয়ে প্রায় ৫১ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকা করা হয়।
তৈরি পোশাক খাতে মোট উৎপাদন খরচের ১০ থেকে ১৩ শতাংশ যায় শ্রমিকদের মজুরি হিসেবে। কারখানার মালিকেরা বলছেন, মজুরি বৃদ্ধির কারণে তাদের খরচ ৫ থেকে ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এতে তাদের লাভের পরিমাণ কমবে। এ জন্য বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলোর সহযোগিতা প্রত্যাশা করছেন বাংলাদেশের পোশাক কারখানার মালিকেরা।
এ বিষয়ে আমেরিকান অ্যাপারেলের কাছে রয়টার্সের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো ৫/৬ শতাংশ বেশি মূল্য দিয়ে পণ্য কিনবে কি না।
জবাবে আমেরিকান অ্যাপারেলের প্রধান নির্বাহী স্টিফেন ল্যামার বলেন, “অবশ্যই। মজুরি বৃদ্ধিকে সমর্থন করার জন্য আমাদের সদস্যরা দায়িত্বশীলভাবে ক্রয় অব্যাহত রাখবে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার আমরা এমন প্রতিশ্রুতির পুনরাবৃত্তি করেছি।”
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের খুচরা বিক্রেতারাই বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান ক্রেতা। তবে মূল্যস্ফীতির চাপ ও ক্রেতা চাহিদা কমার কারণে ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোও তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ কমিয়েছে।
আমেরিকান অ্যাপারেলের প্রধান নির্বাহী স্টিফেন ল্যামার জানান, বাংলাদেশি শ্রমিকেরা যেন সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের ফলে সুবিধাবঞ্চিত না হন, সে লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন। এ জন্য একটি বার্ষিক ন্যূনতম মজুরি পর্যালোচনা পদ্ধতি গ্রহণের আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।
রয়টার্স বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি তৈরি পোশাক খাত। বর্তমানে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ১৬ শতাংশ আসে এই খাত থেকে, যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ লোকের। মূলত তৈরি পোশাকশিল্পে কম মজুরির বিষয়টি বাংলাদেশকে এ অবস্থায় পৌঁছাতে সহায়তা করেছে।
বাংলাদেশে এখন মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এ জন্য মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো বিবেচনা করছে। গত মাসে আমেরিকান অ্যাপারেলের বেশ কয়েকটি সদস্য প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মজুরি বৃদ্ধির অনুরোধ জানিয়েছে। আমেরিকান অ্যাপারেলের প্রধান নির্বাহী স্টিফেন ল্যামার নিজেও প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে চিঠি লিখেছিলেন।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুসারে, সর্বশেষ ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির (১১৩ ডলার) পরেও প্রতিযোগী আঞ্চলিক দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান অনেক পেছনে রয়েছে। যেমন ভিয়েতনামে গড় মাসিক মজুরি ২৭৫ ডলার; কম্বোডিয়ায় ২৫০ ডলার।
কমেন্ট