পোশাক রপ্তানি: যুক্তরাজ্য ছাড়া সব বাজারেই হোঁচট
জুলাই-অক্টোবর সময়ে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে ২৫৭ কোটি ৯০ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ শতাংশ কম।
একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকের তৃতীয় বৃহত্তম বাজার হচ্ছে যুক্তরাজ্য। মোট পোশাকের ১২ শতাংশের মতো রপ্তানি হয় এই দেশটিতে।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাজ্যে ৫০২ কোটি ৬৮ লাখ (৫.০২ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিলেন বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা। যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০২১-২২) চেয়ে ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেশি।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও সেই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। এই অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) যুক্তরাজ্যে ১৮০ কোটি ৯০ লাখ (১.৮১ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।
তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে—যুক্তরাজ্য ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, কানাডাসহ অন্য সব বড় বাজারেই পোশাক রপ্তানি কমেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বুধবার রপ্তানি আয়ের দেশভিত্তিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে অর্থাৎ জুলাই-অক্টোবর সময়ে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে ২৫৭ কোটি ৯০ লাখ (২.৫৮ বিলিয়ন) পোশাক রপ্তানি হয়েছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ কম।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ কমেছিল। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৯ দশমিক শূন্য এক বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। গত অর্থবছরে তা ৮ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার হচ্ছে জার্মানি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে এই বাজারে ১৮১ কোটি ১৯ লাখ (১.৮১ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ কম।
গত অর্থবছরে এই বাজারে ৬৬৮ কোটি ১১ লাখ (৬.৬৮ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। আগের অর্থবছরের চেয়ে কমেছিল ৬ দশমিক ৮১ শতাংশ।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের আরেকটি বড় বাজার হচ্ছে কানাডা। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এই বাজারে ৪৬ কোটি ২৮ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ কম।
গত অর্থবছরে কানাডায় ১৫৪ কোটি ৫৮ লাখ (১.৫৪ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল; প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
অপ্রচলিত বা নতুন বাজারগুলোর মধ্যে পাশের দেশ ভারত বাংলাদেশের পোশাকের ভালো বাজার হয়ে উঠছিল। কিন্তু এই বাজারেও ধাক্কা লেগেছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ।
অথচ গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতে পোশাক রপ্তানি থেকে প্রথমবারের মতো ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি—১০১ কোটি ২৮ লাখ (১.০১ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৪১ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি।
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে জার্মানিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারগুলোতে মোট ৭০৬ কোটি ৫৩ লাখ (৭.০৬ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ শতাংশ।
এরমধ্যে স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস এবং ইতালিতে পোশাক রপ্তানিতে যথাক্রমে ১৮.০৭%, ২.৫৬%, ১২.৭৩% এবং ৯.৮৮% প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
জুলাই-অক্টোবর সময়ে ভারতসহ অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের ২ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৭ শতাংশ বেড়ে ২ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
প্রধান অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়াতে রপ্তানি যথাক্রমে ২৩.০৩%, ৪৫.৪৪%, এবং ২৯.৮৫% বৃদ্ধি পেয়েছে।
সামগ্রিক হিসাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি।
২০২২-২৩ অর্থবছরের এই চার মাসে ১৩ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল।
অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়ায় এই চার মাসে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “বেশ কিছুদিন ধরে আমরা প্রচলিত বাজারের পাশাপাশি অপ্রচলিত (নতুন) বাজারেও রপ্তানি বাড়ানোর দিকে জোর দিয়েছি। তারই ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে এখন।”
“রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় আমাদের প্রধান দুই বাজার আমেরিকা-ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার কারণে আমরা পোশাক রপ্তানিতে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। ওই দেশগুলোর মানুষ এখন পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। সে অবস্থায় অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়ায় আমরা এখনও প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছি।”
“তবে অপ্রলিত বাজারগুলোর মধ্যে ভারতে রপ্তানি কমায় নতুন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে,” বলেন ফারুক হাসান।
কমেন্ট