পোশাকের দাম বাড়ানোর আশ্বাস এইচঅ্যান্ডএমসহ কয়েকটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের

পোশাকের দাম বাড়ানোর আশ্বাস এইচঅ্যান্ডএমসহ কয়েকটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের

বুধবার রাজধানীর উত্তরায় তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ কার্যালয়ে শীর্ষস্থানীয় পোশাক ব্র্যান্ডগুলোর প্রতিনিধিদের সংগঠন বায়ার্স ফোরামের প্রতিনিধিদের বৈঠক। ছবি: বিজিএমইএ

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির ফলে বাড়তি যে ব্যয় হবে তা পুষিয়ে দিতে পোশাকের দাম বাড়ানোর আশ্বাস এইচঅ্যান্ডএম, মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার, ডেকাথেলন, নেক্সট সোর্সিংসহ আরও কয়েকটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান।

পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই বাড়তি মজুরির কারণে বাড়তি উৎপাদন ব্যয় মেটাতে বিদেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা তৈরি পোশাকের দাম বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।

বুধবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএর কার্যালয়ে শীর্ষস্থানীয় পোশাক ব্র্যান্ডগুলোর প্রতিনিধিদের সংগঠন বায়ার্স ফোরামের সদস্যদের এক বৈঠক হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।

বিজিএমইএ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বায়ার্স ফোরামের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি জানিয়েছে। এতে বলা হয়, বৈঠকে এইচঅ্যান্ডএম, মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার, ডেকাথেলন, নেক্সট সোর্সিং, জিইএমও, সেলিও, কনতুর, আলডি, সলস, আউচানসহ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের এদেশীয় প্রধান অথবা প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

জানতে চাইলে ফারুক হাসান এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “মজুরি নিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়ে আমরা ক্রেতাদের বুঝিয়েছি। আন্দোলনের কারণে যেসব কারখানা সময়মতো পণ্য জাহাজীকরণ করতে পারেনি, তাদের মূল্যছাড় কিংবা ক্রয়াদেশ বাতিলের মতো ব্যবস্থা না নিতে আমরা ক্রেতাদের অনুরোধ করেছি। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেবে না।”

তিনি বলেন, “গত কয়েক মাসে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ও সাম্প্রতিক সময়ে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে কারখানার উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। এ জন্য ক্রেতাদের আমরা পোশাকের দাম সমন্বয়ের অনুরোধ করেছি। বৈঠকে উপস্থিত ক্রেতাদের মধ্যে কয়েকজন প্রতিনিধি পোশাকের দাম সমন্বয়ের আশ্বাস দিয়েছেন। যদিও উপস্থিত ক্রেতাদের কেউ কেউ এ বিষয়ে চুপ ছিলেন।”

বিজিএমইএর সভাপতি আরও বলেন, “ক্রয়াদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে বায়ার্স ফোরামের সদস্যরা কিছুটা উদ্বেগ জানিয়েছেন। তবে আমরা তাদের বলেছি, তৈরি পোশাক খাত বরাবরই রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে ছিল। আশা করছি এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।”

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম, খন্দকার রফিকুল ইসলাম, পরিচালক ফয়সাল সামাদ, ভিদিয়া অমৃত খান, ইনামুল হক খান, ইমরানুর রহমান প্রমুখ।

মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে একাধিক বৈঠকের পর গত ৭ নভেম্বরের সভা শেষে মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে পোশাক শ্রমিকদের জন্য সাড়ে ১২ হাজার টাকা সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করে সরকার। এটি আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করার কথা।

সেদিন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি ঘোষণা দিয়েছিলেন।

তবে ঘোষিত মজুরিকে প্রত্যাখ্যান করে কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন। একইসঙ্গে ২৫ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির দাবিতে আগে থেকেই আন্দোলনে থাকা এসব সংগঠনের আন্দোলন আরও বেগবান করা হয়। এ সময় বেশ কিছু কারখানায় ব্যাপক ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায় অজ্ঞাতরা।

উদ্ভূত পরিস্থিতে আশুলিয়া, কাশিমপুর, মিরপুর ও কোনাবাড়ি এলাকার প্রায় ১৩০টি পোশাক কারখানা কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং কারখানার সম্পত্তি রক্ষায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিজিএমইএ।

তবে রাজধানীর মিরপুর ছাড়া অন্য এলাকায় অবস্থিত পোশাক কারখানায় বুধবার থেকে পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফারুক হাসান।

এ বিষয়ে বুধবার রাতে এক বিবৃতিতে ফারুক হাসান বলেন, “শ্রমিক ভাইবোন, শ্রমিক সংগঠন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসন, শিল্প পুলিশ, গণমাধ্যমের কর্মী, স্থানীয় জনগণের ঐকান্তিক সহযোগিতায় দেশের পোশাকশিল্প অধ্যুষিত সব এলাকায় বর্তমানে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। কারখানাগুলোতে পুরোদমে উৎপাদন কার্যক্রম চলছে।”

মিরপুরের বন্ধ হওয়া কারখানাগুলো খুলে দেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গল ও বুধবার আলোচনা হয়েছে।

“দুই দিনের আলোচনায় শ্রমিক সংগঠন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাসহ সবাই জানিয়েছেন, শ্রমিক ভাইবোনরা কারখানায় কাজে ফিরতে চান। তাই শুক্রবার থেকে মিরপুরের বন্ধ পোশাক কারখানাও খুলে দেওয়া হবে।”

শ্রমিক ও মালিকরা যাতে কোনো রকম হয়রানির শিকার না হন—এ বিষয়ে অনুরোধ জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ, কোনো প্রিয় শ্রমিক ভাইবোন বা কর্মচারী এবং মালিক যেন কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে সতর্ক থেকে কাজ করার জন্য বিশেষভাবে সতর্ক থাকুন।”

শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, বন্ধ ঘোষিত সব কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। সব কারখানায় পুরোদমে উৎপাদন চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক। দু-একদিন এভাবে চলতে থাকলে শিল্পাঞ্চল আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

পোশাক রপ্তানি: যুক্তরাজ্য ছাড়া সব বাজারেই হোঁচট পরবর্তী

পোশাক রপ্তানি: যুক্তরাজ্য ছাড়া সব বাজারেই হোঁচট

কমেন্ট