নভেম্বরেও রপ্তানি আয়ে ধাক্কা, কমেছে ৬ শতাংশ

নভেম্বরেও রপ্তানি আয়ে ধাক্কা, কমেছে ৬ শতাংশ

নভেম্বর মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৫২৫ কোটি ৪০ লাখ (৫.২৫ বিলিয়ন) ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।

অক্টোবরের পর নভেম্বরেও দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস রপ্তানি আয় হোঁচট খেয়েছে।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৪৭৮ কোটি ৪৮ লাখ (৪.৭৮ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে ৬ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ কম। আর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৯ শতাংশ আয় কম এসেছে।

তবে আগের মাস অক্টোবরের চেয়ে ২৭ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়েছে। আক্টোবরে পণ্য রপ্তানি করে ৩৭৬ কোটি ২০ লাখ (৩.৭৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। যা ছিল গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ছিল ২৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ নভেম্বরে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমার একটি কারণ বলে জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা। তারা বলেছেন, শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে বেশ কয়েক দিন রাজধানী ঢাকা, সাভার ও গাজীপুরে বেশকিছু পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। উৎপাদন হয়নি, রপ্তানি ব্যহত হয়েছে। তার একটা নেতিবাচক প্রভাব সার্বিক রপ্তানিতে পড়েছে।  

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সোমবার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, নভেম্বর মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৫২৫ কোটি ৪০ লাখ (৫.২৫ বিলিয়ন) ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।

গত বছরের নভেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫০৯ কোটি ২৫ (৫.০৯ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছিল। এ হিসাবেই গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে এই নভেম্বরে আয় কমেছে ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ। আর লক্ষ্যের চেয়ে কমেছে ৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

টানা দুই মাস প্রবৃদ্ধি কমায় সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির গতিও কমে গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাস শেষে (জুলাই–অক্টোবর) পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ।

কিন্তু নভেম্বর মাসে রপ্তানি কমায় পাঁচ মাসের হিসাবে অর্থাৎ জুলাই–নভেম্বর সময়ে প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম এসেছে ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ।

এই পাঁচ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ২ হাজার ২২৩ কোটি ২৩ লাখ (২২.২৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের একই সময়ে আয়ের অঙ্ক ছিল ২১ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার।

ইপিবি তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২৬ মাস পর সবচেয়ে কম রপ্তানি আয় দেশে আসে গত অক্টোবর মাসে। ২০২১ সালের আগস্টে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৩৮ কোটি ৩০ লাখ (৩.৩৮ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিলেন বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা।

অক্টোবর মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৫২৫ কোটি ১০ লাখ (৫.২৫ বিলিয়ন) ডলার। গত বছরের অক্টোবরে আয় হয়েছিল ৪৩৫ কোটি ৬৬ লাখ (৪.৩৫ বিলিয়ন) ডলার।

৮৪.৭০ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই-অক্টোবর সময়ে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প থেকে এসেছে ১৮ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

এর মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ১০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ৭ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার; গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় কমেছে ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ।

এই পাঁচ মাসে পোশাক খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ২০ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ১৮ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার।

ইপিবির হিসাব বলছে, জুলাই-নভেম্বর—এই পাঁচ মাসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ দশমিক ৭০ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে।

নভেম্বরে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৭.৪৫ শতাংশ

মূলত পোশাক রপ্তানিতে কমার কারণেই অক্টোবরের পর নভেম্বরেও সার্বিক রপ্তানিতে ধাক্কা লেগেছে। এই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে ৪ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ কম।

গত বছরের নভেম্বরে পোশাক রপ্তানি থেকে ৪ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিলেন এ খাতের রপ্তানিকারকরা।

নভেম্বরে ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের নভেম্বরে আয়ের অঙ্ক ছিল ১ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার। কমেছে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

এই মাসে নিট পোশাক থেকে এসেছে ২ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের নভেম্বরে এসেছিল ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। কমেছে ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।

পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “শ্রমিক অসন্তোষ না থাকলে নভেম্বরে রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতো। নানা বাধা বিপত্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু আমরা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা এখনও লেগে আছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ায় আমাদের প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকার মানুষ পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছে। তাদের এখন খাবারের পেছনে বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমাদের এখন খারাপ সময় যাচ্ছে।”

অন্যান্য খাত

তৈরি পোশাক ছাড়া অন্য সব খাতেই রপ্তানি আয় কমেছে। আর সে কারণেই সার্বিক রপ্তানিতে বড় হোঁচট খেয়েছে।

অন্যান্য খাতের মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-অক্টোবর) হিমায়তি মাছ রপ্তানি কমেছে ১৫ দশমিক ৮৮শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় কমেছে ২০ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে আয় কমেছে ১১ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল রপ্তানি থেকে আয় কমেছে ৪২ দশমিক ২৭ শতাংশ।

তবে এই পাঁচ মাসে ওষুধ রপ্তানি থেকে আয় ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়েছে। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে ১৪ দশমিক ৯০ শতাংশ।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৬২ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার। এর মধ্যে ৮৪ দশমিক ৩০ শতাংশ (৫২ দশমিক ২৭ বিলিয়ন) তৈরি পোশাক থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে সব মিলিয়ে ৫৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৪৭ বিলিয়ন ডলারই এসেছিল তৈরি পোশাক থেকে।

বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা উড়িয়ে দিলেন বাণিজ্য সচিব ও রপ্তানিকারকরা পূর্ববর্তী

বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা উড়িয়ে দিলেন বাণিজ্য সচিব ও রপ্তানিকারকরা

পোশাকের দাম বাড়ানোর আশ্বাস এইচঅ্যান্ডএমসহ কয়েকটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের পরবর্তী

পোশাকের দাম বাড়ানোর আশ্বাস এইচঅ্যান্ডএমসহ কয়েকটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের

কমেন্ট