১০ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি ২৫% কমেছে

১০ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি ২৫% কমেছে

এই বাজারে গত বছর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ৩৬ শতাংশ বেড়ে ৯৭৩ কোটি (৯.৭৩ বিলিয়ন) ডলারে উঠেছিল। কিন্তু চলতি বছর রপ্তানি প্রবৃদ্ধি তো দূরের কথা, উল্টো কমছে।

একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার। মোট রপ্তানি আয়ের ২০ শতাংশের মত আসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির এই দেশটি থেকে।

এই বাজারে গত বছর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ৩৬ শতাংশ বেড়ে ৯৭৩ কোটি (৯.৭৩ বিলিয়ন) ডলারে উঠেছিল। কিন্তু চলতি বছর রপ্তানি প্রবৃদ্ধি তো দূরের কথা, উল্টো কমছে।

বিদায়ী ২০২৩ সালের প্রথম দশ মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে। তবে শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্য সব দেশ থেকেও পোশাক আমদানি কমিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীন ও ভিয়েতনামের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এরপর পর্যায়ক্রমে যে সাত দেশ রয়েছে সেগুলো হলো- ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, পাকিস্তান ও কোরিয়া।

জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত—দশ মাসে এই ১০ দেশেরই পোশাক রপ্তানি কমেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ৬ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার।

এ হিসাবেই এই দশ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ কমেছে।

টেক্সটাইল ও পোশাক রপ্তানি একসঙ্গে হিসাবে করলে জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে মোট রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার; যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ দশমিক ২৫ শতাংশ কম।

২০২২ সালে টেক্সটাইল ও পোশাক মিলিয়ে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা যুক্তরাষ্ট্রে মোট ১০ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছিল। যা ছিল এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ওটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক পোশাক আমদানি ২২ দশমিক ৭১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬৭ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলারে। টেক্সটাইল ও পোশাক উভয় পণ্য মিলিয়ে ২১ দশমিক ৪৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৯০ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলারে।

চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও দেশটির পোশাকের খুচরা বিক্রেতা এবং ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে পুরনো পণ্যের মজুত থাকায় যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা পোশাক বিক্রেতা ও ব্রান্ডগুলো করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রচুর পোশাক পণ্য আমদানি করেছিল। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি বাড়েনি বলে জানান তারা।

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যেও পোশাক রপ্তানিতে আমরা ইতিবাচক ধারা ধরে রেখেছি। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা বাধা বিপত্তির মধ্যেও চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছি।”

“তবে আগামী দিনগুলোতে এই ইতিবাচক ধারা থাকবে বলে মনে হয় না। কেননা, বিশ্ব পরিস্থিতি অনুকুলে নয়। যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই। আমাদের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তনি কমছে। ইউরোপের দেশগুলোতেও প্রবৃদ্ধি কমে আসছে। জানি না কী হবে।?”

নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন থেকেই দেশটিতে পোশাকের চাহিদা কম। এ কারণে ক্রয়াদেশও কম। মূল্যস্ফীতি কমলেও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়ায়নি।”

আগামী বছরের শেষ দিকে দেশটিতে নির্বাচন। তত দিন পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি থাকতে পারে বলে আমাদের ক্রেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন।”

অবশ্য প্রতিযোগী দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকে এখনো সন্তোষজনক বলেই মনে করেন মোহাম্মদ হাতেম।

তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের প্রধান প্রতিযোগী চীন ও ভিয়েতনাম। চীনের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে। তার রেশে ভিয়েতনাম সমস্যায় আছে।

তবে আশার কথা শুনিয়েছে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা। ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশন (এনআরএফ) নামের এই সংস্থাটি সম্প্রতি পূর্বাভাস দিয়েছে, নভেম্বর ও ডিসেম্বরের ছুটির মৌসুমে ভোক্তাদের ব্যয় রেকর্ড স্তরে পৌঁছাবে এবং ২০২২ সালের চেয়ে ৩ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯৫৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার থেকে ৯৬৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে থাকবে।

এনআরএফের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী ম্যাথিউ শাই বলেন, “ছুটির মৌসুমে বিক্রির প্রবৃদ্ধি মহামারির আগের পর্যায়ে ফিরে আসায় অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ এখন সামগ্রিকভাবে সবার আর্থিক অবস্থা ভালো অবস্থায় আছে এবং ভোক্তাদের ব্যয় করার এই সক্ষমতা অব্যাহত থাকবে।”

করোনা মহামারিতে অনলাইন শপিং ভোক্তাদের আচরণে বড় পরিবর্তন দেখেছে। এ বছর অনলাইন ও অন্যান্য নন-স্টোর বিক্রয় ৭ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ২৭৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যা গত বছর ছিল ২৫৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।

এনআরএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ জ্যাক ক্লেইনহেঞ্জ বলেন, “মূল্যস্ফীতি, গ্যাসের উচ্চমূল্য, কঠোর ক্রেডিট শর্ত এবং উচ্চ সুদের হার সত্ত্বেও ভোক্তারা চালকের আসনে আছেন ও স্থিতিশীল অবস্থায় আছেন।”

বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা উড়িয়ে দিলেন বাণিজ্য সচিব ও রপ্তানিকারকরা পরবর্তী

বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা উড়িয়ে দিলেন বাণিজ্য সচিব ও রপ্তানিকারকরা

কমেন্ট