১১ মাসে ৪৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি
অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়ার কল্যানেই সার্বিক পোশাক রপ্তানিতে এখনও ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বজায় আছে বলে মনে করছেন পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচ ধারা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। বিদায়ী ২০২৩ সালের প্রথম ১১ মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি-নভেম্বর সময়ে ৪২ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।
এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। এই বাজারে মোট পোশাকের ২০ শতাংশের মতো রপ্তানি হয়। এই ১১ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৯ মতাংশ। তবে ইউরোপের দেশগুলোতে (ইইউভূক্ত দেশগুলো) জানুয়ারি নভেম্বর সময়ে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় ২ দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়েছে।
অন্যদিকে অপ্রচলিত বাজারগুলোতে রপ্তানি বেশ বেড়েছে; বলা যায় উল্লম্ফন হয়েছে। জানুয়ারি-নভেম্বর সময়ে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি আয় দেশে এসেছে।
আর অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়ার কল্যানেই সার্বিক পোশাক রপ্তানিতে এখনও ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বজায় আছে বলে মনে করছেন পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমাটা আমাদের জন্য উদ্বেগের। ইউরোপের বাজারের অবস্থাও ভালো নয়; নামমাত্র পৃবৃদ্ধি আছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, অপ্রচলিত বাজারগুলোতে আমাদের রপ্তানি বেশ বেড়েছে।”
ফারুক হাসান বলেন, “আমরা প্রচলিত বাজারের পাশাপাশি অপ্রচলিত (নতুন) বাজারেও রপ্তানি বাড়ানোর দিকে জোর দিয়েছিলাম। তারই ইতিবাচক ফল এখন আমরা পাচ্ছি। ভারতের পাশাপাশি জাপান, চীন, অষ্ট্রেলিয়া ও তুরস্কসহ অন্যান্য নতুন বাজারে রপ্তানি বাড়ছে। এমনকি যুদ্ধের কারণে নানা বাধার মধ্যেও রাশিয়াতেও এখন রপ্তানি বাড়ছে।”
তিনি বলেন, “রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় আমাদের প্রধান দুই বাজার আমেরিকা-ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার কারণে আমরা পোশাক রপ্তানিতে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। ওই দেশগুলোর মানুষ এখন পোশাক কেনা কমিয়ে দিচ্ছেন। সে অবস্থায় অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়ায় আমাদের সাহস জোগাচ্ছে।”
বৈশ্বিকভাবে ২০২৩ সালটি পোশাক খাতের জন্য ২০২২ সালের মতো অতটা ভালো ছিলো না। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালের বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫৭৬ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালে তা কিছুটা কমবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কেননা, ইতোমধ্যেই ইউরোপ ও আমেরিকার পোশাক আমদানি কমেছে।
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক। মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশের মতো আসে এই খাত থেকে।
নতুন বছর কেমন যাবে—এ প্রশ্নের উত্তরে বিজিএমইএ পরিচালক ও ডেনিম এক্সপার্ট-এর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “২০২৪ সালটি কেমন যাবে এটা বলা কঠিন। কারণ, একদিকে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি কোথায় যায়—সেটি আমাদের দেখতে হবে। এর সাথে জড়িয়ে আছে সাপ্লাই চেইন, মূল্যস্ফীতি, ইত্যাদি বিষয়।”
“সেই সাথে আমাদের অভ্যন্তরীন অর্থিনীতিতেও কিছু চাপ তৈরী হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ নিম্নমুখী, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাটাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আবার শিল্পখাতগুলোকেও সুরক্ষা দিতে হবে, যেন বিনোয়োগ আসে আর আমরা কম্পিটিটিভ থাকতে পারি। তাই ২০২৪ এ সার্বিকভাবে আমরা একটু চাপের মধ্যেই থাকব।
“তবে আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বাড়বে বলে আমরা ইঙ্গিত পাচ্ছি। আমরা যদি আমাদের অভ্যন্তরীন সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে পারি; আর নতুন পণ্য ও বাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে পারি, তাহলে আমরা আমাদের কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারবো,” বলেন মহিউদ্দিন রুবেল।
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালে ৪৫ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। ২০২১ সালে এই অঙ্ক ছিল ৩৫ বিলিয়ন ডলার।
কমেন্ট