এক বছরে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় ডিসেম্বরে
বিদায়ী ২০২৩ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৫৩০ কোটি ৮১ লাখ ডলার দেশে এনেছেন রপ্তানিকারকরা। একক মাসের হিসাবে এই আয় এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি; আর বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
নানা উদ্বেগ-উৎকষ্ঠার মধ্যেও রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে। অনেক দিন পর এক মাসে ৫ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) ডলারের বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছে।
বিদায়ী ২০২৩ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৫৩০ কোটি ৮১ লাখ (৫.৩১ বিলিয়ন) ডলার দেশে এনেছেন রপ্তানিকারকরা।
একক মাসের হিসাবে এই আয় এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি; আর বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫৩৬ কোটি ৫২ লাখ (৬.৩৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। যা ছিল একক মাসের হিসাবে সর্বোচ্চ।
সদ্য শেষ হওয়া ডিসেম্বর মাসে আগের মাস নভেম্বরের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। নভেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪৭৮ কোটি ৪৮ লাখ (৪.৭৮ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছিল।
তবে ডিসেম্বরে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে ১ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ কম আয় দেশে এসেছে। লক্ষমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
ডিসেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে আয়ের লক্ষ্য ছিল ৫৬২ কোটি ১০ লাখ (৫.৬২ বিলিয়ন) ডলার।
সব মিলিয়ে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) পণ্য রপ্তানি থেকে ২ হাজার ৭৫৪ কোটি (২৭.৫৪ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি। তবে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ কম।
২০২২-২৩ অর্থবছরের এই ছয় মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ২৭ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল।
অক্টোবর মাসে রপ্তানি আয়ে ধস নেমেছিল। ওই মাসে পণ্য রপ্তানি করে ৩৭৬ কোটি ২০ লাখ (৩.৭৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। যা ছিল আগের বছরের অক্টোবরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ছিল ২৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
অক্টোবরের রপ্তানি আয় ছিল ২৬ মাস পর সবচেয়ে কম। রপ্তানি আয় দেশে এসেছে সদ্য শেষ হওয়া অক্টোবর মাসে। ২০২১ সালের আগস্টে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৩৮ কোটি ৩০ লাখ (৩.৩৮ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিলেন বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা।
তবে পরের মাস নভেম্বরে রপ্তানি আয় বেশ খানিকটা বাড়ে; আসে ৪৭৮ কোটি ৪৮ লাখ (৪.৭৮ বিলিয়ন) ডলার। দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে কয়েক দিন বেশ কিছু পোশাক কারখানা বন্ধ থাকার পরও নভেম্বরে অক্টোবরের চেয়ে বেশি আয় দেশে এসেছিল।
সবশেষ ডিসেম্বর মাসে এক লাফে বেড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে; এসেছে ৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি মুদ্রা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে তিন মাসে কেবল ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছিল। এর মধ্যে ২০২২ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে আসে যথাক্রমে ৫ দশমিক শূন্য নয় বিলিয়ন ও ৫ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। বিদায়ী বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে এসেছিল ৫ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) মঙ্গলবার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, সদ্য শেষ হওয়া ডিসেম্বর মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৫ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবেই ডিসেম্বরে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাস শেষে (জুলাই–অক্টোবর) পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ। তবে টানা তিন মাস (অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর) প্রবৃদ্ধি কমায় সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির গতি কমে দশমিক ৮৪ শতাংশে নেমে এসেছে।
৮৫ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প থেকে এসেছে ২৩ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
এর মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ১৩ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ৯ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার; গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে আয় কমেছে ৪ দশমিক ১২ শতাংশ।
এই পাঁচ মাসে পোশাক খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ২৫ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ২২ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার।
ইপিবির হিসাব বলছে, জুলাই-ডিসেম্বর—এই পাঁচ মাসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ দশমিক ৯৩ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে।
ডিসেম্বরে পোশাক রপ্তানি কমেছে ২.৬৭%
মূলত পোশাক রপ্তানিতে আয় কমার কারণেই সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি কমে এসেছে। ডিসেম্বর মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে ৪ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ কম।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে পোশাক রপ্তানি থেকে ৪ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিলেন এ খাতের রপ্তানিকারকরা।
ডিসেম্বরে ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ২ দশমিক শূন্য ছয় বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের ডিসেম্বরে এসেছিল ২ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার। কমেছে ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
এই মাসে নিট পোশাক থেকে এসেছে ২ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের ডিসেম্বরে এসেছিল ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। কমেছে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ।
পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “নানা বাধা বিপত্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু আমরা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা এখনও লেগে আছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ায় আমাদের প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকার মানুষ পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছে। তাদের এখন খাবারের পেছনে বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমাদের এখন খারাপ সময় যাচ্ছে।”
“ডিসেম্বরে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি আমাদের আশান্বিত করেছে। প্রতি বছরই ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় বাড়ে। এবারও তার ব্যতয় হয়নি। তবে আগামী দিনগুলোতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে কী না—চিন্তায় আছি আমরা।”
অন্যান্য খাত
তৈরি পোশাক ছাড়া অন্য সব খাতেই রপ্তানি আয় কমেছে। আর সে কারণেই সার্বিক রপ্তানিতে বড় হোঁচট খেয়েছে।
অন্যান্য খাতের মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) হিমায়তি মাছ রপ্তানি কমেছে ১২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় কমেছে ১৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে আয় কমেছে ১০ দশমিক ২৪ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল রপ্তানি থেকে আয় কমেছে ৩৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
তবে এই ছয় মাসে ওষুধ রপ্তানি থেকে আয় ৮ দশমিক ২৬ শতাংশ বেড়েছে। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে ১৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৬২ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার। এর মধ্যে ৮৪ দশমিক ৩০ শতাংশ (৫২ দশমিক ২৭ বিলিয়ন) তৈরি পোশাক থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে সব মিলিয়ে ৫৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৪৭ বিলিয়ন ডলারই এসেছিল তৈরি পোশাক থেকে।
কমেন্ট