ভারত জাপান অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানিতে আগের মতোই ৩% নগদ সহায়তা মিলবে
নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সংশোধিত নগদ সহায়তার এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে। এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি এ–সংক্রান্ত যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল, সেখানে ১ জানুয়ারি থেকে তা কার্যকরের কথা বলা হয়েছিল।
নগদ সহায়তা কমানোর প্রজ্ঞাপন সংশোধন করেছে সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া আগের মতোই নতুন বাজার হিসেবে গণ্য হবে। এসব বাজারে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ নগদ সহায়তা মিলবে।
নগদ সহায়তা কমানোর সার্কুলার জারির ১৩ দিনের মাথায় তা আবার সংশোধন করা হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্তের পর সোমবার এ বিষয়ক সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নতুন সার্কুলারে বলা হয়েছে, সংশোধিত নগদ সহায়তার এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে। এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি এ–সংক্রান্ত যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল, সেখানে ১ জানুয়ারি থেকে তা কার্যকরের কথা বলা হয়েছিল।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া আগের মতোই নতুন বাজার হিসেবে গণ্য হবে। এসব বাজারে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ নগদ সহায়তা পাওয়া যাবে।
নগদ সহায়তা বিষয়ে নতুন সার্কুলারে অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারতকে আবারও নতুন বাজার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে এসব বাজারে রপ্তানিতে ৩ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়া হবে।
এর আগে গত ৩০ জানুয়ারির সার্কুলারে পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা কমানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সার্কুলারে আলোচিত এই তিনটি রপ্তানি গন্তব্যকে প্রচলিত বাজারের আওতাভুক্ত করা হয়েছিল। যেখানে রপ্তানিতে দেওয়া হয় মাত্র শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ সহায়তা।
এ ছাড়া আগের প্রজ্ঞাপনে পাঁচ এইচএস কোডের বিপরীতে রপ্তানি হওয়া ৫ পণ্যে নগদ সহায়তা প্রত্যাহার করা হলেও নতুন প্রজ্ঞাপনে সেসব পণ্যে নগদ সহায়তার সুবিধা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ পাঁচ পণ্য হচ্ছে নিট কাপড়ের তৈরি টি-শার্ট, শার্ট, ট্রাউজার, ওভেন কাপড়ের জ্যাকেট ও ব্লেজার। এর বাইরে ৩০ জানুয়ারি জারি হওয়া প্রজ্ঞাপনে যেসব খাতে নগদ সহায়তা যা কমানো হয়েছিল, তা বহাল থাকবে বলেও নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
সোমবার বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে,২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ হলে আর কোনো নগদ সহায়তা দেওয়া যাবে না। উত্তরণ–পরবর্তী সময়ে নগদ সহায়তা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা হলে রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। তাই নগদ সহায়তার হার ধীরে ধীরে কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এর আগে নগদ সহায়তা কমানোর প্রজ্ঞাপন জারির পর ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ) এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) নেতারা অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আমরা অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি এ মুহূর্তে এটা বন্ধ রাখার জন্য। অর্থমন্ত্রী বলেছেন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দেবেন।”
বিকেএমইএ নেতারাও রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ৩০ জুন পর্যন্ত এ প্রজ্ঞাপন স্থগিতের আবেদন জানিয়েছেন। তবে সোমবার জারি হওয়া প্রজ্ঞাপনে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী ৩০ জুন পর্যন্ত তা স্থগিত করা হয়নি।
সংশোধিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, রপ্তানিমুখী দেশীয় বস্ত্র খাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র-ব্যাকের পরিবর্তে নগদ সহায়তা হবে ৪ শতাংশের বদলে ৩ শতাংশ, আর ইউরো অঞ্চলে বস্ত্র খাতের রপ্তানিকারকদের অতিরিক্ত বিশেষ সহায়তা হবে ৩ শতাংশের বদলে ১ শতাংশ।
তবে পোশাক খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানার বাড়তি সুবিধা ৪ শতাংশ বহাল থাকবে। নতুন পণ্য বা নতুন বাজারে সম্প্রসারণ সহায়তা ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়। নতুন বাজারের ক্ষেত্রে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাজ্য ছাড়া বাকি সব দেশ।
রপ্তানিতে তৈরি পোশাকের পরের অবস্থানেই চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থাকলেও এ খাতের নগদ সহায়তা ১৫ থেকে কমিয়ে ১২ শতাংশ করা হয়েছে। ক্রাস্ট লেদার রপ্তানিতে নগদ সহায়তা পুরোপুরি তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে ফিনিশড লেদারে ১০ থেকে কমিয়ে করা হয় ৭ শতাংশ।
কৃষিপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যে সহায়তা ২০ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। এ ছাড়া পাটপণ্য রপ্তানিতে সহায়তা ২০ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ, পাটজাত পণ্যে ১২ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ এবং পাট সুতায় ৭ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
একইভাবে হালকা প্রকৌশল পণ্যে ১৫ থেকে কমিয়ে ১২ শতাংশ, ওষুধের কাঁচামালে ২০ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ এবং শতভাগ হালাল মাংসে ২০ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে নগদ সহায়তার পরিমাণ। মোটরসাইকেল, আসবাবপত্র, ব্যাটারি, আলু, চা, জাহাজ, প্লাস্টিক দ্রব্য, হিমায়িত চিংড়ি, পেট বোতল ফ্লেক্স, টুপি, শস্য ও শাকসবজির বীজ, আগর, আতর ইত্যাদি খাতেও কমানো হয় নগদ সহায়তা।
অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮ হাজার ৬৯০ কোটি টাকার নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রপ্তানিমুখী বস্ত্র খাত একাই পেয়েছে ৫ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা।
কমেন্ট