দেশে সবুজ পোশাক কারখানা এখন ২০৯টি
নতুন যে দুটি পোশাক কারখানা সবুজ কারখানার সনদ পেয়েছে সেগুলো হচ্ছে—টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের গোরাইয়ে অবস্থিত কমফিট, ইকো ভিলে এবং নারায়ণগঞ্জের কায়েমপুরে অবস্থিত ফকির ইকো নিটওয়্যারস লিমিটেড।
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য সুখবর। আরও দুটি তৈরি পোশাক কারখানাকে সবুজ কারখানা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)।
নতুন যে দুটি পোশাক কারখানা সবুজ কারখানার সনদ পেয়েছে সেগুলো হচ্ছে—টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের গোরাইয়ে অবস্থিত কমফিট, ইকো ভিলে এবং নারায়ণগঞ্জের কায়েমপুরে অবস্থিত ফকির ইকো নিটওয়্যারস লিমিটেড। নতুন স্বীকৃতি পাওয়া উভয় কারখানাই ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে ‘প্লাটিনাম’ সনদ পেয়েছে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
এ নিয়ে দেশে সবুজ কারখানার সনদ পাওয়া মোট পোশাক কারখানার সংখ্যা দাঁড়াল ২০৯টিতে। এর মধ্যে প্লাটিনাম মানের কারখানা ৭৯টি ও গোল্ড মানের কারখানা ১১৬টি। এ ছাড়া ১০টি সিলভার ও ৪টি সার্টিফায়েড কারখানা রয়েছে।
বিজিএমইএর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি পরিবেশবান্ধব কারখানার মধ্যে ৫৪টি এবং শীর্ষ ২০টি লিড সনদপ্রাপ্ত গ্রিন কারখানার ১৮টিই বাংলাদেশে অবস্থিত।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “বাংলাদেশে লিড স্বীকৃত পরিবেশবান্ধব কারখানার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এই সংখ্যা দেশের টেকসই তৈরি পোশাকশিল্পের বিষয়ে আমাদের যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তার প্রমাণ। আমাদের সদস্যরা পরিবেশবান্ধব চর্চা, জ্বালানি সাশ্রয়ী পদক্ষেপ ও পানির ব্যবহার কমানোর মতো উদ্যোগ গ্রহণ করে যাচ্ছেন। এ কাজে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোও এগিয়ে আসছে এবং বিনিয়োগ করছে; যা খুবই ইতিবাচক।”
এআরএইচ ডট নিউজকেতিনি বলেন, “এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববাজারে আমাদের পোশাকের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে। রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এই অর্জন পরিবেশগত তত্ত্বাবধায়ক, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার প্রতি বাংলাদেশের দৃঢ় প্রতিশ্রুতিকে স্পষ্ট করে।
ফারুক জানান, এ ধরনের সনদ অর্জন করতে হলে কারখানাকে কার্বন নিঃসরণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবহার সীমিতকরণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কারখানার অভ্যন্তরের পরিবেশ উন্নত করাসহ বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে হয়।
বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ইউএসজিবিসি এই কারখানাগুলোকে এই স্বীকৃতি দিয়েছে।
পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা সাজ্জাদুর রহমান মৃধার হাত ধরে ২০১২ সালে প্রথম পরিবেশবান্ধব কারখানার যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশে। পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে তিনি স্থাপন করেন ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও। তার দেখানো পথ ধরেই দেশে একটার পর একটা পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা গড়ে উঠছে। উজ্জ্বল হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। ২০১৪ সালে সবুজ কারখানা স্থাপন করা হয় ৩টি। ২০১৫ সালে হয় ১১টি। ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে স্থাপন করা হয় যথাক্রমে ১৬, ১৮ ও ২৪টি।
২০১৯ সালে আরও ২৮টি সবুজ পোশাক কারখানা স্থাপন করেন পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। ২০২০ ও ২০২১ সালে ২৪টি করে আরও ৪৮টি কারখানা গড়ে উঠেছে দেশে।
২০২২ সালে আরও ৩০টি সবুজ পোশাক কারখানা স্থাপন করেন পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। গত বছর অর্থাৎ২০২৩ সালে ২৪টি ‘গ্রিন’ কারখানা গড়ে উঠেছে দেশে। চলতি বছর এ পর্যন্ত ৩টি পোশাক কারখানা সবুজ কারখানার সনদ পেয়েছে।
আর এভাবেই সব মিলিয়ে দেশে মোট পরিবেশবান্ধব সবুজ পোশাক কারখানার সংখ্যা এখন ২০৯টিতে দাঁড়িয়েছে।
এ ছাড়া ৫৫০টি পোশাক কারখানা পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা হতে ইউএসজিবিসির অধীনে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ফারুক হাসান।
বিশ্বের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে একটি যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল-ইউএসজিবিসি। তারা ‘লিড’ নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। লিডের পূর্ণাঙ্গ রূপ লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন।
সনদটি পেতে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। ভবন নির্মাণ শেষ হলে কিংবা পুরোনো ভবন সংস্কার করেও আবেদন করা যায়।
১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউএসজিবিসি। সংস্থাটির অধীনে কলকারখানার পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভবন, স্কুল, হাসপাতাল, বাড়ি, বিক্রয়কেন্দ্র, প্রার্থনাকেন্দ্র ইত্যাদি পরিবেশবান্ধব স্থাপনা হিসেবে গড়ে তোলা যায়।
লিড সনদের জন্য ৯টি শর্ত পরিপালনে মোট ১১০ পয়েন্ট আছে। এর মধ্যে ৮০ পয়েন্টের ওপরে হলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ৬০-৭৯ হলে ‘লিড গোল্ড’, ৫০-৫৯ হলে ‘লিড সিলভার’ এবং ৪০-৪৯ হলে ‘লিড সার্টিফায়েড’ সনদ মেলে।
সাধারণত অন্যান্য স্থাপনার চেয়ে পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ৫-২০ শতাংশ খরচ বেশি হয়। তবে বাড়তি খরচ করলেও দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাওয়া যায়। ইউএসজিবিসি লিড সনদ পেতে স্থাপনা নির্মাণে ৯টি শর্ত পরিপালন করতে হয়। তার মধ্যে আছে এমন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে হয়, যাতে কার্বন নিঃসরণ কম হয়। এ জন্য পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে তৈরি ইট, সিমেন্ট ও ইস্পাত লাগে। বিদ্যুৎ খরচ কমাতে সূর্যের আলো, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতি ও সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হয়। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি পানি সাশ্রয়ী কল ও ব্যবহৃত পানি প্রক্রিয়াজাত করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করতে হয়।
এ ছাড়া স্থাপনায় পর্যাপ্ত খোলা জায়গা রাখার বাধ্যবাধকতা আছে। সব মিলিয়ে পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ২৪-৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ, ৩৩-৩৯ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ এবং ৪০ শতাংশ পানি ব্যবহার কমানো সম্ভব। তার মানে দেশে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সংখ্যা যত বেশি হবে, ততই তা পরিবেশের ওপর চাপ কমাবে।
কমেন্ট