রপ্তানির তথ্যে কোনো ত্রুটি নেই, পার্থক্য হতে পারে: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

রপ্তানির তথ্যে কোনো ত্রুটি নেই, পার্থক্য হতে পারে: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, দেশে রপ্তানির তথ্যে কোনো ত্রুটি বা ঘাটতি নেই; তবে পরিবেশনে পার্থক্য থাকতে পারে। তথ্য সংগ্রহ ও পরিবেশনের এই পার্থক্যকে ভুল বলা যায় না।

শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য জাতীয় রপ্তানি ট্রফি প্রদান উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ইপিবি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যসচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে ইপিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০২১-২২ বছরের জন্য ২৮ খাতের ৭৭টি প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২৮ প্রতিষ্ঠান স্বর্ণ, ২৭ প্রতিষ্ঠান রৌপ্য ও ২১ প্রতিষ্ঠান ব্রোঞ্জ ট্রফি পাবে। আর সব খাতের মধ্যে সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় অর্জনকারী একটি প্রতিষ্ঠান পাচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রপ্তানি ট্রফি’ নামে আলাদা স্বর্ণপদক।

রপ্তানির হিসাবে বড় ধরনের গরমিল বের হওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার। রপ্তানিকারকরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছিলেন যে, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ( ইপিবি) রপ্তানি আয়ের ফোলানো-ফাঁপানো তথ্য দিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, গত ১০ অর্থবছরে রপ্তানি বেশি দেখানো হয়েছে প্রায় ৬৫ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১১৮ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৭ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা। যা ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেটের প্রায় সমান।

এ বিষয়ে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম বলেন, “জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে তথ্য নিয়ে ইপিবি রপ্তানি পণ্যের সম্পূর্ণ মূল্য হিসাব করে। রপ্তানির সে তথ্য এনবিআরে নথিভুক্ত হওয়ার পরও অনেক সময় ক্রয়াদেশ বাতিল, জাহাজীকরণে বিলম্ব কিংবা পেমেন্ট (রপ্তানি আয়) দেশে আসতে সময় লাগে। এসব তথ্য পরে সমন্বয় করতে হয়।

“এসব কারণে তথ্যের পার্থক্য হতে পারে। তবে এটাকে ভুল তথ্য বলা যায় না।”

এরপরও তথ্যে যেন কোনো বিভ্রাট না হয়, এ জন্য ইপিবি কাজ করছে বলে জানান আহসানুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “ইপিবি এখন থেকে সরাসরি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান, সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সমিতি, এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তথ্য সংগ্রহ করবে। এভাবে একটি তথ্যভান্ডার করা হবে। এরপর নির্মোহভাবে সেই পরিসংখ্যান প্রকাশিত হবে। তখন যে যার প্রয়োজনমতো তথ্য ব্যবহার করবে। তবে এসব তথ্য সমন্বয়ের কাজ করবে না ইপিবি।”

রবিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেরা রপ্তানিকারকদের হাতে ট্রফি তুলে দেবেন।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে থাকবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম, বাণিজ্যসচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যসচিব সেলিম উদ্দিন বলেন, নির্দিষ্ট অর্থবছরের রপ্তানি আয়, আয়ের প্রবৃদ্ধি, নতুন পণ্য সংযোজন, নতুন বাজারে প্রবেশ, কমপ্লায়েন্স পরিপালন ইত্যাদি বিষয় মূল্যায়ন করে পুরস্কারের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্বাচিত করা হয়েছে। রপ্তানি নীতি ২০১৩ অনুসারে, মোট ৩২টি খাতে এ পুরস্কার দেওয়ার কথা; কিন্তু উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান না পাওয়ায় ২০২১-২২ বছরের জন্য ২৮ খাতে এ ট্রফি দেওয়া হবে।

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, রপ্তানিতে উৎসাহিত করতে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন মেলার আয়োজন ও রপ্তানির বিপরীতে প্রণোদনা প্রদানের মতো বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে তার সংস্থার। এর ধারাবাহিকতায় রপ্তানির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সেরা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি দেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম বলেন, “আমাদের সামনে রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও আয় বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। রপ্তানির ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক খাতের ওপর নির্ভরতা কমাতে হলে অন্যান্য খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। তাই আমরা বিশ্বাস করি, দেশের ব্যবসায়ীরা এ স্বীকৃতিতে রপ্তানি বাণিজ্যে আরও উৎসাহিত হবেন।”

সংবাদ সম্মেলনে শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও হয়রানি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। এর জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সব রাজা-মহারাজার সময়েই দুর্নীতিবাজ ছিল। তারা কোনো দলের লোক নয়। তবে আমরা কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”

যেসব প্রতিষ্ঠান রপ্তানি ট্রফি পাবে

২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়েছে রিফাত গার্মেন্টস। তৈরি পোশাক (ওভেন) খাতের এই প্রতিষ্ঠানকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রপ্তানি ট্রফি দেওয়া হবে।

২০২১-২২ অর্থবছরে তৈরি পোশাক (ওভেন) খাত থেকে উইন্ডি অ্যাপারেলস স্বর্ণপদক, অ্যাপারেল গ্যালারি রৌপ্য ও চিটাগাং এশিয়ান অ্যাপারেলস ব্রোঞ্জপদক পাচ্ছে। নিট পোশাক খাতে লিবার্টি নিটওয়্যার স্বর্ণ, ডিভাইন ইন্টিমেটস রৌপ্য ও ফ্ল্যামিংগো ফ্যাশনস ব্রোঞ্জপদক পাবে।

সব ধরনের সুতা খাতে বাদশা টেক্সটাইলসকে স্বর্ণ, স্কয়ার টেক্সটাইলসকে রৌপ্য ও কামাল ইয়ার্নকে ব্রোঞ্জ এবং টেক্সটাইল ফেব্রিকস খাতে নাইস ডেনিম মিলসকে স্বর্ণ, হা-মীম ডেনিমকে রৌপ্য ও ফোর এইচ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিংকে ব্রোঞ্জপদক দেওয়া হবে।

হোম ও স্পেশালাইজড টেক্সটাইল খাত থেকে স্বর্ণপদক পাচ্ছে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিকস; আর মমটেক্স এক্সপো রৌপ্য ও এসিএস টেক্সটাইলস (বাংলাদেশ) ব্রোঞ্জপদক পাবে। টেরিটাওয়েল খাত থেকে নোমান টেরিটাওয়েল মিলস স্বর্ণ ও এসিএস টাওয়েল রৌপ্যপদক পাচ্ছে।

হিমায়িত পণ্য খাতে থেকে ছবি ফিশ প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ স্বর্ণ, প্রিয়াম ফিশ এক্সপোর্ট রৌপ্য ও এমইউসি ফুডস ব্রোঞ্জ পাচ্ছে।

কাঁচা পাট খাত থেকে পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ স্বর্ণ, তানফিয়া জুট ট্রেডিং রৌপ্য ও ইন্টারন্যাশনাল জুট ট্রেডার্স ব্রোঞ্জপদক পাবে।

পাটজাত দ্রব্য খাতে জনতা জুটল মিলস স্বর্ণ ও আকিজ জুট মিলস রৌপ্য; চামড়াজাত পণ্যে পিকার্ড বাংলাদেশ স্বর্ণ ও এবিসি ফুটওয়্যার রৌপ্য এবং সব ফুটওয়্যারে বে-ফুটওয়্যার স্বর্ণ, এডিসন ফুটওয়্যার রৌপ্য ও এফবি ফুটওয়্যার ব্রোঞ্জপদক পাচ্ছে।

কৃষিপণ্য শ্রেণিতে ইনডিগো করপোরেশন স্বর্ণ, মনসুর জেনারেল ট্রেডিং রৌপ্য ও সিএসএস ইন্টারন্যাশনাল ব্রোঞ্জ এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণে হবিগঞ্জ অ্যাগ্রো স্বর্ণ, প্রাণ অ্যাগ্রো রৌপ্য ও প্রাণ ফুডস ব্রোঞ্জপদক পাচ্ছে।

হস্তশিল্পজাত পণ্য খাতে কারুপণ্য রংপুর স্বর্ণ, বিডি ক্রিয়েশন রৌপ্য ও ক্ল্যাসিক্যাল হ্যান্ডমেড প্রোডাক্টস ব্রোঞ্জপদক পাবে।

মেলামাইনে ডিউরেবল প্লাস্টিক স্বর্ণ; প্লাস্টিক পণ্যে অলপ্লাস্ট স্বর্ণ, আকিজ বায়াক্স ফিল্মস রৌপ্য ও বঙ্গ প্লাস্টিক ইন্টারন্যাশনাল ব্রোঞ্জ এবং সিরামিকে শাইনপুকুর সিরামিকস স্বর্ণ, আর্টিসান সিরামিকস রৌপ্য ও প্রতীক সিরামিকস ব্রোঞ্জপদক পাচ্ছে।

হালকা প্রকৌশল খাতে এমঅ্যান্ডইউ সাইকেলস স্বর্ণ, মেঘনা বাংলাদেশ রৌপ্য ও রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ ব্রোঞ্জ; ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক খাতে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ স্বর্ণ ও বিআরবি কেব্‌ল ইন্ডাস্ট্রিজ রৌপ্যপদক পাচ্ছে।

অন্যান্য শিল্পজাত পণ্য খাতে মেরিন সেফটি সিস্টেম স্বর্ণ, এশিয়া মেটাল মেরিন সার্ভিস রৌপ্য ও তাসনিম কেবলস ব্রোঞ্জপদক পাবে।

ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস স্বর্ণ, ইনসেপটা ফার্মা রৌপ্য ও স্কয়ার ফার্মা ব্রোঞ্জপদক পাচ্ছে।

কম্পিউটার সফটওয়্যারে সার্ভিস ইঞ্জিনকে স্বর্ণ ও গোল্ডেন হারভেস্ট ইনফোটেককে রৌপ্যপদক দেওয়া হবে।

ইপিজেডভুক্ত শতভাগ বাংলাদেশি মালিকানাধীন তৈরি পোশাকশিল্পে (নিট ও ওভেন) ইউনিভার্সেল জিনস স্বর্ণ, প্যাসিফিক জিনস রৌপ্য ও শামা ডেনিমস ব্রোঞ্জপদক পাবে। ইপিজেডভুক্ত শতভাগ বাংলাদেশি মালিকানাধীন অন্যান্য পণ্য ও সেবা খাতে স্টার প্যাকেজিং অ্যান্ড অ্যাকসেসরিজকে স্বর্ণ, পদ্মা স্পিনিং অ্যান্ড কম্পোজিটকে রৌপ্য ও ফারদিন অ্যাকসেসরিজকে ব্রোঞ্জপদক দেওয়া হবে।

প্যাকেজিং ও অ্যাকসেসরিজ খাতে এমঅ্যান্ডইউ প্যাকেজিং স্বর্ণ, মনট্রিমস লিমিটেড রৌপ্য ও ইউনিগ্লোরি পেপার অ্যান্ড প্যাকেজিং ব্রোঞ্জপদক পাবে। অন্যান্য প্রাথমিক পণ্য খাতে হেয়ার স্টাইল ফ্যাক্টরিকে স্বর্ণ, রায় ট্রেড ইন্টারন্যাশনালকে রৌপ্য ও ইকো ফ্রেশ ইন্টারন্যাশনালকে ব্রোঞ্জপদক দেওয়া হবে। অন্যান্য সেবা খাতে এক্সপো ফ্রেইট স্বর্ণ ও মীর টেলিকম রৌপ্যপদক পাচ্ছে।

এ ছাড়া নারী উদ্যোক্তা বা রপ্তানিকারকদের জন্য সংরক্ষিত খাত থেকে পাইওনিয়ার নিটওয়্যারসকে স্বর্ণ, বী-কন নিটওয়্যারকে রৌপ্য ও ইব্রাহিম নিট গার্মেন্টসকে ব্রোঞ্জপদক দেওয়া হবে।

রপ্তানি আয়: ১১ মাসে ১১ বিলিয়ন ডলার ‘উধাও’ পরবর্তী

রপ্তানি আয়: ১১ মাসে ১১ বিলিয়ন ডলার ‘উধাও’

কমেন্ট