পোশাক কারখানা খুলছে বুধবার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মূচিকে ঘিরে সহিংসতার আশঙ্কায় সব কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিল বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।
দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের সব কারখানা খোলা রাখার ঘোষণা দিয়েছে এ খাতের ব্যবসায়ীদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালা বদল হয় সোমবার। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার থেকে সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানা চালু রাখতে বলেছিল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে পোশাকশিল্পের মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-এর ঘোষণা অনুযায়ী রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা মঙ্গলবার বন্ধ রেখেছিলেন পোশাকশিল্পের মালিকরা।
বুধবার থেকে তা খোলা রাখার ঘোষণা দিয়েছে এই দুই সংগঠন।
মঙ্গলবার রাতে ওভেন পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “আজ (মঙ্গলবার) বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত এক জরুরী বোর্ড সভায় আগামীকাল (বুধবার) থেকে ফ্যাক্টরি খোলা রাখার ব্যপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।”
একই কথা বলেছেন নিট পোশাক শিল্পমাল্কিদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “বুধবার থেকে আমাদের সব নিট পোশাক কারখানা খোলা থাকবে।”
এর আগে রবিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মূচিকে ঘিরে সহিংসতার আশঙ্কায় সব কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিল বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে গত মাসেও এক সপ্তাহ বন্ধ ছিল পোশাক কারখানা।
এদিকে শিল্পকারখানার পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের দারস্থ হয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এ কে আজাদ।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে মঙ্গলবার বিকেলে বিজিএমইএর নেতারা বৈঠক করেন।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সংগঠনের সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব, নাছির উদ্দিন, পরিচালক শোভন ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এতে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ এবং বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সাবেক সভাপতি ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী অংশ নেন।
বৈঠক শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিজিএমইএ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বুধবার থেকে তৈরি পোশাক কারখানা চালু হবে।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “বৈঠকে কারখানা খোলার পাশাপাশি ব্যবসার বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়েছে। অধিকাংশ নেতাই অর্থনীতি সচল রাখতে কারখানা খুলে দেওয়ার পক্ষে মত দেন। কারণ কারখানা খুলে দেওয়ার সঙ্গে ব্যবসা ধরে রাখার পাশাপাশি সময়মতো শ্রমিকদের বেতন–ভাতা পরিশোধের বিষয়ও জড়িত।
“ফলে কারখানা চালু ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। বর্তমানে নিরাপত্তা নিয়ে একধরনের শঙ্কা রয়েছে। তবে নিজেদের শ্রমিকদের দিয়েই নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজটি করা হবে।”
এই বৈঠক শেষে শিল্পকারখানার পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে বঙ্গভবনে যান এ কে আজাদ।
যাওয়ার আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আগামীকাল বুধবার থেকে কারখানা খুলে দেওয়া হবে। তার আগে কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ কে আজাদ বলেন, বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর হচ্ছে, অগ্নিসংযোগ হচ্ছে। পুলিশ কাজ করতে পারছে না। নিরাপত্তা না দিলে কারখানা চালু করা সম্ভব হবে না। পুলিশ কারখানার নিরাপত্তা দিতে পারছে না। দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দিতে হবে।
কমেন্ট