পোশাক কারখানায় চাঁদাবাজি হচ্ছে: এ কে আজাদ

পোশাক কারখানায় চাঁদাবাজি হচ্ছে: এ কে আজাদ

আজাদ বলেছেন, “কিছু কিছু জায়গায় পোশাক কারখানাগুলোতে এখন প্রচুর চাঁদাবাজি হচ্ছে। কারখানা চালাতে এটা এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সমস্যা।”

রাজনৈতিক সরকারের পর নির্দলীয় সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিলেও পোশাক শিল্প কারখানাগুলোয় চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ এনেছেন ব্যবসায়ী নেতা এ কে আজাদ। এই সমস্যা সমাধানে সরকারের সহায়তা চেয়েছেন তিনি।

আজাদ বলেছেন, “কিছু কিছু জায়গায় পোশাক কারখানাগুলোতে এখন প্রচুর চাঁদাবাজি হচ্ছে। কারখানা চালাতে এটা এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সমস্যা।”

মঙ্গলবার অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে দেখা করে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক কারখানাগুলো ব্যাপক চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কে আজাদ বলেন, “কিছু কিছু জায়গায় চাঁদাবাজি হচ্ছে, প্রচুর চাঁদাবাজি হচ্ছে। সেই বিষয়গুলো আমরা উপদেষ্টাকে জানিয়েছি। উনি বলেছেন, এসব বিষয়ে উন্নতির চেষ্টা করছেন।”

রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) উপদেষ্টার দপ্তরে তার সঙ্গে বৈঠক করেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) প্রতিনিধিরা। আইসিসিবির সভাপতি মাহবুবুর রহমান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।

বৈঠকে আইসিসিবির সহ-সভাপতি হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান এ কে আজাদসহ পোশাক খাতের কয়েকটি ব্র্যান্ড ক্রেতা প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।

এ কে আজাদ ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি। সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়ান এবং ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

তবে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর দ্বাদশ সংসদ বিলুপ্ত করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ফলে অন্যান্য সংসদ সদস্যদের মতো পদ হারান তিনিও।

দেশের শিল্প কারখানা এলাকাগুলোয় নিরাপত্তাহীনতার কারণে ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা উদ্বেগের মধ্যে পড়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ থেকে যেসব বড় বড় কাস্টমার পোশাক নেয় যেমন- এইচ অ্যান্ড এম, ইন্ডিটেক্স, মার্ক অ্যান্ড স্পেন্সার এসেছিল। এছাড়া অন্য সব বায়ার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আজকে জুম মিটিং হবে। তাদের মেইন কনসার্ন (মূল চিন্তা) আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন ঘটানো।”

এ মুহূর্তে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নের দিকে সরকারের নজর দেওয়া উচিত বলে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা। সেই সঙ্গে স্যাম্পল কালেকশন ক্লিয়ারেন্স এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সমস্যাগুলোরও যত দ্রুত সম্ভব উন্নয়নের কথাও উপদেষ্টাকে বলেছেন।

অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা এসব বিষয়ে সহায়তার নিশ্চয়তা নিয়েছেন বলেও জানান এ কে আজাদ।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শিল্প এলাকায় কীভাবে কারখানার নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখন সেনাবাহিনী অঞ্চল ভাগ করে কাজ করছে। শিল্প পুলিশও আস্তে আস্তে ইফেক্টিভ হচ্ছে। উপদেষ্টা জানিয়েছেন, র‌্যাবকেও কাজে লাগিয়ে সমন্বিতভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থার ব্যবস্থা করা হবে।”

বিশ্বের অনেক বড় বড় কোম্পানি বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা করে জানিয়ে এ কে আজাদ বলেন, “বাংলাদেশ সরকার তাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে তারা অন্য দেশে চলে যেতে পারে।”

এছাড়াও বিমান বন্দর এবং সমুদ্র বন্দরে রপ্তানিকারকরা নানা ধরনের সমস্যায় পড়ে উল্লেখ করে এসব সমস্যা দ্রুত সমাধানের দাবিও তিনি শিল্প উপদেষ্টার কাছে জানিয়েছেন।

আজাদ বলেন, “আমাদের কাউন্টার পার্ট যেমন সুইডেন বা আমেরিকা জিজ্ঞাসা করে যে, তুমি যদি বিপদে পড় তোমার ওখানে যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগ, তাহলে তুমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করবে? কে তোমাকে উদ্ধার করবে? পুলিশ তো এখনও স্থিতিশীল হয়নি।”

ক্রেতাদের আস্থা দ্রুত ফিরিয়ে আনা উচিত বলেও মনে করেন এই ব্যবসায়ী।

এসময় রপ্তানি খাতে জিএসপি সুবিধা প্রাপ্তি কমপক্ষে তিন বছর বাড়িয়ে ২০২৯ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে কাজ করার অনুরোধও জানান তিনি।

ব্র্যান্ড-ক্রেতাদের সঙ্গে কি আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে এ কে আজাদ বলেন, বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলেন বিদেশি ব্র্যান্ড–ক্রেতারা। কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়া, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বন্দরে কনটেইনার জট–এসব কারণে সময়মত পণ্য পাবে কিনা এ নিয়ে তাদের মধ্যে উদ্বেগ ছিল। পরিস্থিতি অনুকূল না হলে অন্য দেশে রপ্তানি আদেশ সরিয়ে নেওয়ার ভাবনাও ছিল তাদের মধ্যে।

“তবে আজ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর তারা আশ্বস্ত হয়েছেন। উপদেষ্টা বলেছেন, ব্যবসার পরিবেশ ইতোমধ্যে অনেক উন্নত হয়েছে। এখন আর তেমন সমস্যা নেই। এতে ক্রেতারা আশ্বস্ত হয়েছেন। সেনাবাহিনী জোরালোভাবে কাজ করছে। পুলিশ এবং শিল্প পুলিশও তৎপরতা বাড়িয়েছে।”

এ কে আজাদ জানান, উপদেষ্টার সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণের বিষয়ে তারা বলেছেন, উত্তরণে আরও কমপক্ষে তিন বছর সময় চান তারা। কারণ, ২০২৬ সালে উত্তরণের জন্য এ মুহূর্তে দেশের ব্যবসায়ী সমাজ প্রস্তুত নয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সংস্কার প্রসঙ্গে আজাদ বলেন, “এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছেন তারা। কারণ, বিগত দিনে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোতে রাজনৈতিকভাবে নেতা নির্বাচন করা হতো এখন কোন রকম সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে আবারও একই সমস্যা হবে।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) এবং নগদ সহায়তা প্রত্যাহার করা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। এই সুবিধা যাতে বহাল রাখা হয় সে ব্যাপারে উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেছি আমরা। পাশাপাশি আমদানিতে নগদ পরিশোধ করতে হয়। রপ্তানির অর্থ না আসলে পরিশোধ কি ভাবে হবে। ডলার সংকটের এ ধরনের একটা অভিঘাত আসতে পারে এবং অনেক কারখানা বসে যেতে পারে–এই উদ্বেগগুলা উপদেষ্টাকে জানানো হয়েছে।

“উপদেষ্টা বলেছেন এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি।”

স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা তপন চৌধুরী এবং নিট পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম অন্যদের মধ্যে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্বের শীর্ষ ১০০ পরিবেশবান্ধব কারখানার ৬০টিই বাংলাদেশে পরবর্তী

বিশ্বের শীর্ষ ১০০ পরিবেশবান্ধব কারখানার ৬০টিই বাংলাদেশে

কমেন্ট