জুনে রপ্তানি আয় কমেছে ৫.৭৯ শতাংশ

জুনে রপ্তানি আয় কমেছে ৫.৭৯ শতাংশ

বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে রপ্তানি আয়ের এই তথ্য দেওয়া আছে।

অবশেষে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ মাস জুনের রপ্তানি আয়ের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ওই মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৪৬ কোটি ৫০ লাখ (৩.৪৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) জুনের চেয়ে ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ কম।

গত বছরের জুন মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৬৭ কোটি ৮০ লাখ (৩.৬৭ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে রপ্তানি আয়ের এই তথ্য দেওয়া আছে।

তবে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এখনও জুন মাসের রপ্তানি আয়ের তথ্য প্রকাশ করেনি। এতদিন ইপিবি প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে আগের মাসের রপ্তানি আয়ের তথ্য প্রকাশ করত। বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোসহ (বিবিএস) সরকারের অন্যান্য সংস্থা সেই তথ্য ব্যবহার করত।

কিন্তু গত জুলাই মাসের প্রথম দিকে রপ্তানির হিসাবে বড় ধরনের গরমিল ধরা পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে বিদায়ী সরকার। এরপর থেকে রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করছে না ইপিবি।

রপ্তানিকারকরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছিলেন যে, ইপিবি রপ্তানি আয়ের ফোলানো-ফাঁপানো তথ্য দিচ্ছে। ‘প্রকৃত তথ্য’ প্রকাশ করছে না।

এদিকে রপ্তানির তথ্য সংশোধনের ফলে প্রবৃদ্ধিতে থাকা রপ্তানি আয় নেতিবাচক হয়ে যায়। আর এতে অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর হিসাবনিকাশ ওলটপালট হয়ে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে (২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন) পণ্য রপ্তানি থেকে মোট ৪ হাজার ৮১ কোটি (৪০.৮১ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) চেয়ে ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ কম।

রপ্তানির তথ্য সংশোধনের ফলে গত অর্থবছরের রপ্তানি আয় অনেক কমে গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৩ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার প্রকৃত রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। অথচ ইপিবি গত অর্থবছরের ১১ মাসের (জুলাই-মে) পণ্য রপ্তানি যে তথ্য প্রকাশ করেছিল, তাতে ৫ হাজার ১৫৪ কোটি ২৭ লাখ (৫১.৫৪ বিলিয়ন) ডলার আয়ের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছিল।

সংশোধিত হিসাবে বিশাল অঙ্কের এই রপ্তানি আয় কমে যাওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) ওলটপালট হয়ে গেছে। চলতি হিসাব ও আর্থিক হিসাবে হঠাৎ বড় পরিবর্তন এসেছে; উদ্বৃত্ত থাকা চলতি হিসাবে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আর বড় ঘাটতিতে থাকা আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত দেখা দিয়েছে।

চলতি হিসাবে ঘাটতি ৬.৫১ বিলিয়ন ডলার

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, সংশোধিত হিসাবে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে ৬ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছর।

অথচ পুরনো হিসাবে অর্থবছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকে ৫ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। আট মাসে অর্থাৎ জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে এই উদ্বৃত্ত ছিল ৪ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। জুলাই-জানুয়ারি উদ্বৃত্ত ছিল ৩ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার। ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ছিল ১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার।

আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ১৮ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল ২০২১-২২ অর্থবছর। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই কোনো অর্থবছরে ব্যালান্স অব পেমেন্টে এতো ঘাটতি দেখা যায়নি।

আমদানি কমায় গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই ঘাটতি ৩৩৩ কোটি (৩.৩৩ বিলিয়ন) ডলারে নেমে এসে অর্থবছর শেষ হয়েছিল।

পুরনো হিসাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যালান্স অব পেমেন্টে ঘাটতি ছিল ৪ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত ৪.৫৪ বিলিয়ন ডলার

সংশোধিত হিসাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। পুরনো হিসাবে জুলাই-মার্চ সময়ে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি বেড়ে ছিল ৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার।

পুরনো হিসাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি নিয়ে অর্থবছর শেষ হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই সূচকে ১৫ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বড় উদ্বৃত্ত ছিল।

বাণিজ্য ঘাটতি ২২.৪৩ বিলিয়ন ডলার

সংশোধিত হিসাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৪৩ কোটি ২০ লাখ (২২.৪৩ বিলিয়ন) ডলার। গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৭ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার।

গত অর্থবছরে ৬ হাজার ৩২৪ কোটি ২০ লাখ (৬৩.২৪ বিলিয়ন) ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ কম।২০২২-২৩ অর্থবছরের ৭০ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল।

অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৪০ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ কম।

২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৩ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল।

এ হিসাবেই গত অর্থবছরের পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার।

পোশাক কারখানায় চাঁদাবাজি হচ্ছে: এ কে আজাদ পরবর্তী

পোশাক কারখানায় চাঁদাবাজি হচ্ছে: এ কে আজাদ

কমেন্ট