সরকারের অবস্থান বদল, ভারতে যাচ্ছে ইলিশ

সরকারের অবস্থান বদল, ভারতে যাচ্ছে ইলিশ

৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার দুই দিনের মাথায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানিয়েছিলেন দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে এ বছর বাংলাদেশ থেকে ভারতে কোনও ইলিশ মাছ পাঠানো হবে না।

ইলিশ রপ্তানি নিয়ে অবস্থান বদল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার; শেষ পর্যন্ত ভারতে যাচ্ছে ৩ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ।

গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার দুই দিনের মাথায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানিয়েছিলেন দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে এ বছর বাংলাদেশ থেকে ভারতে কোনও ইলিশ মাছ পাঠানো হবে না।

ফরিদা আখতারের ওই বক্তব্য ঘিরে ভারতে ইলিশ রপ্তানি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছিল।

এমন পরিস্থিতিতে ইলিশ রপ্তানি নিয়ে আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

শনিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সুলতানা আক্তার স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, “আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিভিন্ন রপ্তানিকারকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্ধারিত শর্তাবলীপূরণ সাপেক্ষে ৩ হাজার টন ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হলো।”

আদেশে সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীদের আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর বেলা ১২টার মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করতে বলা হয়েছে। এই সময়ের পর আর কোনও আবেদন গ্রহণ করা হবে না।

তবে আগেই যেসব রপ্তানিকারক ইলিশ রপ্তানিতে আবেদন করেছিলেন, তাদের আর নতুন করে আবেদন করতে হবে না বলেও আদেশে বলা হয়েছে।

গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বগ্রহণের পর গত ১১ আগস্ট মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানিয়েছিলেন দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে এ বছর বাংলাদেশ থেকে ভারতে কোনও ইলিশ মাছ পাঠানো হবে না।

সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওই দিন ফরিদা আখতার বলেছিলেন, “দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে তারপর ইলিশ মাছ বিদেশে রপ্তানি করা হবে। দেশের মানুষ যাতে ইলিশ মাছ পায় এবং দাম কমে, সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে। দেশের মানুষ ইলিশ পাবে না, আর রপ্তানি হবে সেটা হতে পারে না।”

“ফলে এবার দুর্গাপূজায়ও ভারতে যাতে কোনও ইলিশ না যায় তার জন্য আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছি। অবৈধ পথেও যেন কোনও ইলিশ যেতে না পারে সে বিষয়ে সীমান্ত এলাকায় কঠোর থাকতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছি,” বলেছিলেন ফরিদা আখতার।

স্বল্প আয়ের মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়া ইলিশ মাছের দাম নাগালের মধ্যে নিয়ে আসারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন উপদেষ্টা।

গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাচারের সময় ইলিশ জব্দের বেশ কিছু খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে।

দুর্গাপূজা ঘিরে প্রতি বছরের মত এবারও বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানি করতে চেয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর চিঠি দেয় ভারত।

ভারতীয় ব্যবসায়ীদের চিঠিতে বলা হয়, ১৯৯৬ সালের পর থেকে প্রতিবছর গড়ে ৫ হাজার টন ইলিশ বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হচ্ছিল। তবে ২০১২ সালের পর থেকে রপ্তানি অজ্ঞাত কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আবার গত পাঁচ বছর ধরে কেবল দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ যাচ্ছিল।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানির সুযোগ চেয়েছিলেন ভারতের ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ এবং জিডিপির প্রায় ১ শতাংশ ইলিশ মাছের অবদান। মৎস্যজীবীরা প্রতি বছর প্রায় ৬ লাখ টন ইলিশ ধরে। এর অধিকাংশই সমুদ্র থেকে ধরা হয়।

২০১৭ সালে ইলিশকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সূচক হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রপ্তানি বন্ধ ছিল।

সবশেষ গতবছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ৩ হাজার ৯৫০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দেশের ৭৯টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটিকে ৫০ টন করে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়।

ওই বছর ১১ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানিয়েছিলেন, চার বছরে ভারতে ৫ হাজার ৫৪১ মেট্রিকটন ইলিশ রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।

গত ৫ বছর ধরে ভারতে ইলিশ আমদানি হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। এবারও সেই রীতি মেনে ভারতে ইলিশ পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কাছে আবেদন করে ফিস ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন।

পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানার সনদ পেল আরও ৩ কারখানা পূর্ববর্তী

পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানার সনদ পেল আরও ৩ কারখানা

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমছেই, আরও কমার শঙ্কা পরবর্তী

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমছেই, আরও কমার শঙ্কা

কমেন্ট