বৃহত্তর স্বার্থে ভারতে ইলিশ রপ্তানি: সালেহউদ্দিন
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “প্রতি বছর ৫ লাখ ৩০ হাজার টন ইলিশ উৎপদান হয়। এর মধ্যে ৩ হাজার টন রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে; যা উৎপাদনের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশও নয়। এ পরিমাণ চাঁদপুর ঘাটের একদিনের থেকেও কম।”
দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ভারতে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেছেন, “আমি মনে করি না, এটা বিরাট কোনো ক্ষতির কারণ হয়ে গেছে। এর প্রভাবে দীর্ঘ মেয়াদে এটি একটি পজিটিভ ইস্যু হবে।”
রবিবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “প্রতি বছর ৫ লাখ ৩০ হাজার টন ইলিশ উৎপদান হয়। এর মধ্যে ৩ হাজার টন রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে; যা উৎপাদনের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশও নয়। এ পরিমাণ চাঁদপুর ঘাটের একদিনের থেকেও কম।”
“ভারত পার্শ্ববর্তী দেশ, তাদের ফ্যামিলি কান্ট্রি হিসেবে আমরা বলি। এ বিষয়ে যারা ইমোশনালি কথা বার্তা বলে বলুক। তবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমি বিভিন্ন মহল থেকে বাহবা পাচ্ছি। অনেকেই এটাকে ভালো সিদ্ধান্ত বলে জানাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “ইলিশ রপ্তানি করে বাণিজ্য দিক দিয়েও সুবিধা রয়েছে। কিছু বৈদেশিক মুদ্রা আসবে। এমটিতেই চোরাচালান হয়ে চলে যাচ্ছে। সব সিদ্ধান্ত সবার সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হবে এমনটি নয়। সরকারে একজন হয়তো এর বিরোধী করলেও আরও উচ্চ পর্যায় বলেছে রপ্তানি করা যেতে পারে।”
“সার্বিকভাবে দেশের স্বার্থে অনেক বিবেচনা করেই ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। হ্যাঁ কিছু লোকের অসুবিধা হতে পারে। তবে বিরাট কোনো ক্ষতির কারণ হবে না। কারণ দীর্ঘ মেয়াদে এটি একটি পজিটিভ ইস্যু হবে। আমরা প্রতিবেশী হিসেবে থাকতে চাই।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েনের মধ্যে প্রতিবেশী দেশটিতে ইলিশ রপ্তানি না করার পক্ষে অবস্থান জানিয়েছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেছিলেন, ইলিশ আগে দেশের মানুষ পাবে, তারপরে রপ্তানি।
কিন্তু গত শনিবার দূর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ৩ হাজার টন (৩০ লাখ কেজি) ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমোদন দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা হয়।
এ বিষয়টি নিয়ে রবিবার সকালে সাংবাদিকরা উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের মুখোমুখি হলে তিনি বলেন, “দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। এটা তাদের সিদ্ধান্ত। আমার বক্তব্যের বিষয়ে আমি আগের অবস্থানেই আছি।”
উপদেষ্টা বলেন, “বাণিজ্য মন্ত্রণালয় স্বাধীনভাবে এটা (রপ্তানির অনুমোদন) দিয়েছে। তারা একটা অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে দিয়েছে। ভারতের দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিশেষ অনুরোধ ছিল। সে অনুযায়ী তারা করেছে। তাদের তো আমি জোর করতে পারি না।”
গত ১১ আগস্ট মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানিয়েছিলেন দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে এ বছর বাংলাদেশ থেকে ভারতে কোনও ইলিশ মাছ পাঠানো হবে না।
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওই দিন ফরিদা আখতার বলেছিলেন, “দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে তারপর ইলিশ মাছ বিদেশে রপ্তানি করা হবে। দেশের মানুষ যাতে ইলিশ মাছ পায় এবং দাম কমে, সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে। দেশের মানুষ ইলিশ পাবে না, আর রপ্তানি হবে সেটা হতে পারে না।”
“ফলে এবার দুর্গাপূজায়ও ভারতে যাতে কোনও ইলিশ না যায় তার জন্য আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছি। অবৈধ পথেও যেন কোনও ইলিশ যেতে না পারে সে বিষয়ে সীমান্ত এলাকায় কঠোর থাকতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছি,” বলেছিলেন ফরিদা আখতার।
স্বল্প আয়ের মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়া ইলিশ মাছের দাম নাগালের মধ্যে নিয়ে আসারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন উপদেষ্টা।
গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাচারের সময় ইলিশ জব্দের বেশ কিছু খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে।
দুর্গাপূজা ঘিরে প্রতি বছরের মত এবারও বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানি করতে চেয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর চিঠি দেয় ভারত।
ভারতীয় ব্যবসায়ীদের চিঠিতে বলা হয়, ১৯৯৬ সালের পর থেকে প্রতিবছর গড়ে ৫ হাজার টন ইলিশ বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হচ্ছিল। তবে ২০১২ সালের পর থেকে রপ্তানি অজ্ঞাত কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আবার গত পাঁচ বছর ধরে কেবল দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ যাচ্ছিল।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানির সুযোগ চেয়েছিলেন ভারতের ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ এবং জিডিপির প্রায় ১ শতাংশ ইলিশ মাছের অবদান। মৎস্যজীবীরা প্রতি বছর প্রায় ৬ লাখ টন ইলিশ ধরে। এর অধিকাংশই সমুদ্র থেকে ধরা হয়।
২০১৭ সালে ইলিশকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সূচক হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রপ্তানি বন্ধ ছিল।
সবশেষ গতবছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ৩ হাজার ৯৫০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দেশের ৭৯টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটিকে ৫০ টন করে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়।
ওই বছর ১১ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানিয়েছিলেন, চার বছরে ভারতে ৫ হাজার ৫৪১ মেট্রিকটন ইলিশ রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।
গত ৫ বছর ধরে ভারতে ইলিশ আমদানি হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। এবারও সেই রীতি মেনে ভারতে ইলিশ পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কাছে আবেদন করে ফিস ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন।
কমেন্ট