ডিসেম্বর থেকে শতভাগ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেবে চীন
বাংলাদেশ ও চীনের পতাকা
চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশকে শতভাগ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর অর্থনীতির দেশ চীন। সোমবার ঢাকার চীনা দূতাবাস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গত ৫ সেপ্টেম্বর চীন-আফ্রিকান শীর্ষ সম্মেলনে আফ্রিকার ৩৩টি দেশসহ চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকা স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশগুলোকে শতভাগ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেওয়ার এ ঘোষণা দেন।
স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে ট্যারিফ কোটা ব্যবস্থাপনার আওতাধীন সব ধরনের পণ্য রপ্তানিতে শতভাগ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাবে। কোটার পরিমাণ অতিক্রম করা পণ্যের ক্ষেত্রে মূল শুল্ক হার প্রযোজ্য হবে।
১৯৭৫ সালের ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। একই দিনে বাংলাদেশের জন্য এই বাণিজ্য সুবিধা চালু করতে যাচ্ছে চীন।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার চীন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ চীন থেকে ১৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের পণ্য আমদানি করে। আর বাংলাদেশ থেকে চীনে রপ্তানি হয় ৬৭৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য।
২০২২ সালে চীন ৯৮ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়, যার মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যসহ ৩৮৩টি নতুন পণ্য ছিল; ২০২০ সালে যা ছিল ৯৭ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যে।
এদিকে চলতি বছরের ২৮ মার্চ সচিবালয়ে ‘বাংলাদেশ-চীন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনে খসড়া যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন হস্তান্তর’ উপলক্ষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ করার আশা প্রকাশ করেন।
চীনা দূত সেদিন বলেন, “অনেক বাংলাদেশি আমাকে প্রশ্ন করেন যে, চীন কেন বাংলাদেশের সঙ্গে এফটিএ করতে আগ্রহী। এর দুইটা কারণ। দুই দেশ একই সঙ্গে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে চাই এবং নির্বিঘ্ন উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চাই। দ্বিতীয়ত, আমরা চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই।”
বাংলাদেশ এলডিসি থেকে ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গণ্য হবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, এলডিসি থেকে কোনো দেশের উত্তরণ ঘটলে সেই দেশ আর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় না।
তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আরো তিন বছর ওই সুবিধা অব্যাহত থাকবে।
শুল্কমুক্ত সুবিধা উঠে গেলেও এফটিএ চুক্তির মাধ্যমে চীনের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে পারে বাংলাদেশ। ওই চুক্তি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেও আশাবাদী চীনা দূত।
তিনি বলেছিলেন, “বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগকেও এফটিএ সহজ করে তুলবে। এসব কারণে আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে চীন বাংলাদেশের সঙ্গে এফটিএ করতে আগ্রহী।”
চীন বিশ্বের ২৯টি অংশী দেশের সঙ্গে ২২টি এফটিএ চুক্তি করেছে। এসব চুক্তির মধ্যে উন্নয়নশীল ও উন্নত– দুই ধরনের দেশই আছে।
রপ্তানিকারকরা মনে করেন, শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধায় চীনে পণ্য রপ্তানি নিঃসন্দেহে বাড়বে। তবে এ ঘোষণার শতভাগ সুবিধা আদায় করতে হলে তৈরি পোশাকের বাইরে অন্যান্য পণ্যেও মনোযোগ দিতে হবে।
জানতে চাইলে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত নিট পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিটিএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “এটা আমাদের জন্য খুবই খুশির খবর। চীনে মূলত আমরা পোশাক রপ্তানি করি। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশটি শতভাগ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেওয়ায় আমাদের রপ্তানি বাড়বে। তবে, মনে রাখতে হবে চীনে আমাদের রপ্তানি একেবারেই কম, ৬০ কোটি ডলারের মতো। শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ায় সেটা হয়ত ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডলার হবে।”
“সত্যিকার অর্থে চীনে আমাদের রপ্তানি বাড়াতে হলে রপ্তানি তালিকায় অনেক পণ্য যোগ করতে হবে। তানাহলে আমরা এ সুবিধা শতভাগ কাজে লাগাতে পারব না।”
তিনি বলেন, আমরা শিল্পের কাঁচামালসহ এমন কোনো পণ্য নেই যা চীন থেকে আমদানি করি না। ফলে সরকারি পর্যায়ে ঘোষণার সুবিধা আদায় করতে হলে পোশাকের পাশাপাশি রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতেই হবে। না হলে এই ঘোষণা শেষ পর্যন্ত পৃথিবীকে খুশি করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে।”
কমেন্ট