প্রথম চালানে ভারতে গেল ১৮ টন ইলিশ
রপ্তানির আগে ইলিশের মান পরীক্ষা চলছে। ছবি: সংগৃহীত
দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রথম চালান গেল ভারতে। বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোরের বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১৮ মেট্রিকটনের এই চালান গেছে বলে জানিয়েছেন বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক রাশেদুল সজিব নাজির।
এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “বেলা ৩টা পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে আটটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এই ইলিশের চালানগুলো ভারতে পাঠিয়েছে। এতে প্রতিকেজি ইলিশের রপ্তানি মূল্য ধরা হয়েছে ১০ মার্কিন ডলার।”
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) রাশেদুল সজীব নাজির বলেন, ভারতের কলকাতার দুই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আর এস এন্টারপ্রাইজ ও আর জে এন্টারপ্রাইজের পাঁচটি ট্রাকে করে ১৮ টন ইলিশ বেনাপোল থেকে ভারতের প্রেট্রাপোল বন্দরে পৌঁছেছে।
তিনি জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে এবার মোট ২ হাজার ৪২০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি হবে। ১২ অক্টোবর পর্যন্ত রপ্তানি করতে পারবে অনুমোদন পাওয়া ৪৯টি প্রতিষ্ঠান।
গত শনিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে তিন হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয় সরকার। তবে পরে সেখান থেকে সরে এসে শেষ পর্যন্ত দুই হাজার ৪২০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে সরকার।
প্রজ্ঞাপনে ৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়। ৪৮টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ৫০ টন করে আর একটি প্রতিষ্ঠান লোকজ ফ্যাশন ২০ টন ইলিশ রপ্তানির শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন পেয়েছে। বেশির ভাগ ইলিশ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি হয়।
অনুমোদনের চিঠিতে বলা হয়, সরকার মৎস্য আহরণ ও পরিবহনের ক্ষেত্রে কোনো রকম বিধিনিষেধ আরোপ করলে তা কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রপ্তানির এ অনুমতির মেয়াদ শেষ হবে।
আবার সরকার প্রয়োজন মনে করলে রপ্তানির এই আদেশ যেকোনো সময় বন্ধও করতে পারবে বলে অনুমোদনের শর্তে বলা হয়েছে।
পদ্মার ইলিশ পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের কাছে প্রিয় হলেও দেশের চাহিদা বিবেচনায় বিভিন্ন সময় তা রপ্তানি বন্ধ রাখে বাংলাদেশ সরকার।
২০১২ সালের আগে ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা হতো। ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়ায় ২০১২ সালের পর ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় সরকার।
ইলিশ রপ্তানি বন্ধ থাকলেও দুর্গোৎসবে ভারতের বাঙালিদের এই মাছের স্বাদ দিতে বিশেষ বিবেচনায় গতবছর ৭৯ প্রতিষ্ঠানকে ৩ হাজার ৫০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদনের অনুকূলে বেনাপোল দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৬৩১ দশমিক ২৪ টন।
২০২২ সালে ৫৯ প্রতিষ্ঠানকে ২৯০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদনের অনুকূলে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ১৩০০ টন। ২০২১ সালে ১১৫ প্রতিষ্ঠানকে ৪ হাজার ৬০০ মেট্রিকটন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমোদন দেয় সরকার।
২০২০ সালে দুর্গাপূজা উপলক্ষে এক হাজার ৪৫০ টন এবং ২০১৯ সালে ৫০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছিল সরকার।
বাংলাদেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ এবং জিডিপির প্রায় ১ শতাংশ ইলিশ মাছের অবদান। মৎস্যজীবীরা প্রতি বছর প্রায় ৬ লাখ টন ইলিশ ধরে। এর অধিকাংশই সমুদ্র থেকে ধরা হয়।
২০১৭ সালে ইলিশকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সূচক হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রপ্তানি বন্ধ ছিল।
গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার দুই দিনের মাথায় ১১ আগস্ট মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানিয়েছিলেন দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে এ বছর বাংলাদেশ থেকে ভারতে কোনও ইলিশ মাছ পাঠানো হবে না।
ফরিদা আখতারের ওই বক্তব্য ঘিরে ভারতে ইলিশ রপ্তানি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছিল।
এমন পরিস্থিতিতে ইলিশ রপ্তানি নিয়ে আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
গত শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সুলতানা আক্তার স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, “আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিভিন্ন রপ্তানিকারকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্ধারিত শর্তাবলীপূরণ সাপেক্ষে ৩ হাজার টন ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হলো।”
আদেশে সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীদের আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর বেলা ১২টার মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করতে বলা হয়েছে। এই সময়ের পর আর কোনও আবেদন গ্রহণ করা হবে না।
তবে আগেই যেসব রপ্তানিকারক ইলিশ রপ্তানিতে আবেদন করেছিলেন, তাদের আর নতুন করে আবেদন করতে হবে না বলেও আদেশে বলা হয়েছে।
কমেন্ট