চীন ছাড়া অন্য সব দেশের ট্রাম্প শুল্ক ৯০ দিন স্থগিত
বুধবার রাতে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে এই ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি লিখেছেন, “চীন বিশ্বের বাজারগুলোর প্রতি শ্রদ্ধার যে ঘাটতি দেখিয়েছে, তার ভিত্তিতে আমি যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ ধার্য করছি। এটা অবিলম্বে কার্যকর হবে।”
বিশ্বজুড়ে রীতিমতো বাণিজ্য যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়ে যে ঝড় তুলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তা থেকে কিছুটা সরে এসেছেন। চীন ছাড়া অন্য সব দেশের জন্য ধার্য করা যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ৯০ দিন স্থগিত করা হয়েছে। এই সময় দেশগুলোর পণ্যে পাল্টা শুল্ক ন্যূনতম ১০ শতাংশ কার্যকর হবে। তবে চীনের পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বুধবার রাতে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে এই ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি লিখেছেন, “চীন বিশ্বের বাজারগুলোর প্রতি শ্রদ্ধার যে ঘাটতি দেখিয়েছে, তার ভিত্তিতে আমি যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ ধার্য করছি। এটা অবিলম্বে কার্যকর হবে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, “আশা করি, নিকট ভবিষ্যতে চীন ও অন্যান্য দেশ উপলব্ধি করতে পারবে যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণার দিন আর থাকবে না বা গ্রহণযোগ্য হবে না।”
“প্রকৃত অবস্থার ভিত্তিতে ৭৫টির বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এসব প্রতিনিধির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ, অর্থ বিভাগ ও ইউএসটিআর (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি) রয়েছে। দেশগুলো বাণিজ্য, বাণিজ্য বাধা, শুল্ক, মুদ্রা কারসাজি ও অশুল্ক বাধাসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সমাধানে পৌঁছাতে সমঝোতা আলোচনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।”
এ পরিপ্রেক্ষিতে চীন বাদে অন্য সব দেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, “আমি ৯০ দিনের জন্য পাল্টা শুল্ক স্থগিত অনুমোদন করেছি। একই সঙ্গে এই সময়ের জন্য পাল্টা শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। এটাও অবিলম্বে কার্যকর হবে।”
ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানিকারক শতাধিক দেশের পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক হার পুনর্নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তাতে বাংলাদেশের পণ্যে নতুন করে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ হয়েছে। যা এতদিন ছিল ১৫ শতাংশ।
একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার। মোট রপ্তানি আয়ের ২০ শতাংশের মতো আসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির এই দেশ থেকে।
অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২২ সালে এই বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৩৬ শতাংশ বেড়ে ৯৭৩ কোটি (৯.৭৩ বিলিয়ন) ডলারে উঠেছিল। পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধি তো দূরের কথা, উল্টো ২৫ শতাংশ কমেছিল।
সেই নেতিবাচক ধারা চলে ২০২৪ সালেও। তবে বছরের শেষ দিকে এসে গতি বাড়ায় শেষ পর্যন্ত নামমাত্র প্রবৃদ্ধি দিয়ে শেষ হয়েছিল বছর। গত বছর বাংলাদেশ থেকে ৭৩৪ কোটি (৭.৩৪ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে, যা ছিল ২০২৩ সালের তুলনায় শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।
এদিকে ট্রাম্প শুল্কের প্রভাব পড়তে শুরু করেছিল বাংলাদেশে; যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকদের কাছ থেকে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থগিতের নির্দেশনা আসতে শুরু করে।
অথচ বছরের শুরুতেও এমনটা ভাবেননি বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা। কারণ ২০২৫ সালের শুরুটা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের উল্লম্ফন দিয়ে।
গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ১৫০ কোটি (১.৫০ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের, যা গত বছরের এই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি।
তা দেখে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মালিকরা বেজায় খুশি হয়ে ব্যবসা আরও বাড়ার আশা যখন করছিলেন। হিসাব কষে দেখছিলেন, এবছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি ২৫ শতাংশ বাড়বে।
ঠিক তখনই আঘাত হয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন বাণিজ্য নীতি। গত ২ এপ্রিল শতাধিক দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি। তাতে বাংলাদেশের পণ্যে যোগ হয় ৩৭ শতাংশ শুল্ক। আগের ১৫ শতাংশের সঙ্গে মিলে সর্বমোট শুল্ক দাঁড়ায় ৫২ শতাংশ।
বুধবার থেকে নতুন শুল্কহার কার্যকরের কথা ছিল। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধান তাদের দেশের উপর আরোপ করা পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানান।
বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপ করা সম্পূরক শুল্ক পুনর্বিবেচনা করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে গত ৭ এপ্রিল চিঠি দেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরে পাঠানো ওই চিঠিতে শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত তিন মাস স্থগিতের অনুরোধ করেছিলেন তিনি।
কমেন্ট