ডলার সংকটেও বাড়ছে এলসি, মে মাসে বেড়েছে ২৫ শতাংশ

ডলার সংকটেও বাড়ছে এলসি, মে মাসে বেড়েছে ২৫ শতাংশ

চট্টগ্রাম বন্দর। ফাইল ছবি

বাজারে ডলারের সংকট চলছেই। কিন্তু এরমধ্যেই পণ্য আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলার পরিমাণ বাড়ছে। সবশেষ মে মাসে ৫৩৩ কোটি (৫.৩৩ বিলিয়ন) এলসি খুলেছেন আমদানিকারকরা। এই অঙ্ক এপ্রিল মাসের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি।

একইসঙ্গে এলসি নিস্পত্তির পরিমাণও বেড়েছে। মে মাসে ৪৬৯ কোটি (৪.৬৯ বিলিয়ন) ডলারের এলসি নিস্পত্তি হয়েছে; যা এপ্রিলের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি।

আমদানিকারক বলছেন, এলসি মার্জিন রাখাসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব শর্ত মানলেও ব্যাংকগুলো চাহিদামতো এলসি খুলছে না। এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে ঘুরতে হচ্ছে এলসি খোলার জন্য। এসব কারণে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বেশি দাম দিয়েও তারা ডলার পাচ্ছেন না বলে জানান।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বেসরকারি ব্যাংকের ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “এপ্রিল মাসে ব্যাংকগুলো অনেক ধরণের কনজুমার প্রডাক্টের এলসি ও ছোট ছোট অনেক ব্যবসায়ীদের এলসি খোলা কমিয়ে দিয়েছিল। কারণ ওই মাসে কিছু ব্যাংক অধিক দামে রেমিটেন্স কেনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তাদের কর্মকর্তাদের ডেকে নিয়ে সতর্ক করেছিল। যার প্রভাব ব্যাংকগুলোর ডলারের প্রবাহে পড়েছিল; এলসি কমেছিল।”

ওই ব্যাংকার বলেন, “সাধারণত মে-জুন মাসে এলসি ওপেনিং বাড়ে। কারণ হলো সামনে কোরবানির ঈদ রয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত দামে ডলার কেনা ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শর্তসাপেক্ষে শাস্তি শিথিল করায় মে মাসে এলসি ওপেনিং বেড়েছে।”

যদিও এপ্রিলের এলসি ওপেনিং ৩২ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম  ছিল। এছাড়া এলসি নিষ্পত্তি ছিল ২১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এপ্রিলে এলসি ওপেনিং ও সেটেলমেন্ট হয়েছে যথাক্রমে ৪.৩০ বিলিয়ন ও ৪.৬৯ বিলিয়ন ডলার।

বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) মোট ৫৬.৩৬ বিলিয়ন ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২৭ শতাংশ কম।

সেইসঙ্গে এই ১০ মাসে এলসি নিস্পত্তি হয়েছে ৬২.৪০ বিলিয়ন ডলারের, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ শতাংশ কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুলাই-এপ্রিল সময়ে কম্পিউটার বা মোটরসাইকেলের মতো ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনারির এলসি খোলা কমেছে ৪৬ শতাংশ। টেক্সটাইল ফেব্রিক ও কেমিক্যালের মতো ইন্ডাস্ট্রিয়াল র’ ম্যাটেরিয়ালস বা শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি কমেছে ৩২ শতাংশ।

এছাড়া সিমেন্ট, স্ক্র্যাপ ভেসেলের মতো মধ্যবর্তী পণ্যের এলসি খোলা কমেছে ৩১ শতাংশ, চাল ও গমের মতো ভোগ্যপণ্যের এলসি খোলা কমেছে ১৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “ব্যাংকগুলোর এলসি খোলার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোন ধরণের বাধা নেই। তবে ৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি এলসিগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে রিপোর্ট করা হয়। ব্যবসায়ীদের কখনও আমদানি বাড়ে, আবার কখনও আমদানি কমে। সামনে ঈদের সময়ে আরও এলসির পরিমাণ বাড়বে; ব্যাংকগুলোর ডলার প্রবাহও স্বাভাবিক রয়েছে।”

আরেক বেসরকারি ব্যাংকের এমডি এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “মুডিস রেটিং সম্প্রতি আমাদের ব্যাংকসহ একাধিক ব্যাংককে নেগেটিভ আউটলুক দিয়েছে। এতে আমাদের ইম্পোর্ট কস্ট বেড়ে যাবে। আমাদের অনেক পেমেন্ট ডেফার্ড করে করে সময় বাড়াচ্ছি, এগুলো পরিশোধ করা ব্যাংকের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে।”

“রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ তেমন বাড়ছে না। এছাড়া বিদেশি উৎস থেকে যে লোন পাওয়া যেতো এই নেগেটিভ রেটিংয়ের কারণে তাতে অনেকটা প্রভাব পড়বে যা ব্যাংকগুলোর জন্য সমস্যা হবে।”

এই ব্যাংকার বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এখন যেকোন উপায়ে বিলাসী পণ্য আমদানি বন্ধ করতে হবে এবং হুন্ডির ব্যবহার কমাতে হবে। এক্সচেঞ্জ রেট বাড়িয়ে হুন্ডি কমানো যাবে না। কারণ দেশে ডলারের রেট বাড়ালে বিদেশে থাকা হুন্ডি কারবারিরা রেট বাড়িয়ে দেবে। কারণ তারা অবৈধ অর্থ দিয়ে ডলার কেনে।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাস ৫ দিনে (২০২২ সালের জুলাই থেকে সোমবার পর্যন্ত) বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে ব্যাংকগুলোর কাছে।

আর এতে রিজার্ভ আরও কমে গেছে। সোমবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।

৩১ মে শেষে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯.৯১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪২.২০ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে এক বছরে রিজার্ভ কমেছে ১২.২৮ বিলিয়ন ডলার।

 

সোমবার থেকেই পেঁয়াজ আমদানি পরবর্তী

সোমবার থেকেই পেঁয়াজ আমদানি

কমেন্ট