জ্বালানি সংকট ও আমদানি হ্রাসে শিল্পে উৎপাদন কমবে: বিশ্ব ব্যাংক

জ্বালানি সংকট ও আমদানি হ্রাসে শিল্পে উৎপাদন কমবে: বিশ্ব ব্যাংক

ছবি-বিশ্ব ব্যাংক

জ্বালানি সংকট এবং পণ্য আমদানির লাগাম টেনে ধরার কারণে বাংলাদেশে শিল্প উৎপাদন কমে যাবে। সেইসঙ্গে সেবা খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর এর ফলে কাঙ্খিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) অর্জিত হবে না।

বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থা বিশ্ব ব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে নিয়ে এ সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৭ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

১ জুলাই থেকে যে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শুরু হবে-সেই বছরে অর্জিত হবে ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা কিছুটা বেড়ে ৬ দশমিক ৪ শতাংশে গিয়ে পৌঁছতে পারে।

গত এপ্রিলে প্রকাশিত বাংলাদেশের উন্নয়নবিষয়ক হালনাগাদ প্রতিবেদনেও একই পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক। তবে ওই প্রতিবেদনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির কোনো পূর্বাভাস ছিল না।

বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছিল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) হিসাব কষে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলেছে, এই অর্থবছরে ৬ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

এদিকে বৈশ্বিক বাস্তবতা আর নানামুখী চাপের মধ্যে দাঁড়িয়েও ‘স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে’যাত্রার চ্যালেঞ্জ নিয়ে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য গত ১ জুন উচ্চাভিলাষী বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। তিনি তার এবারের বাজেটেও মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) ৭ দশমিক ৫ শতাংশ অর্জিত হবে বলে লক্ষ্য ধরেছেন।

আর বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে আটকে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।

২৬ জুন এই বাজেট পাস হবে; ১ জুলাই থেকে শুরু হবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর।

তবে দেশের অর্থনীতি যখন নানামুখী চাপের মধ্যে, সেই সময় নতুন অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সাফ বলে দিয়েছেন, বিরাজমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ‘পূরণ হবে না।

এইআরএইচ ডটকমকে তিনি বলেন, “মূল্যস্ফীতির চাপ, আমদানি কমে যাচ্ছে; বিনিয়োগ কমে যাবে-এই পরিবেশে প্রবৃদ্ধি খুব একটা যে হবে, সেটা আশা করা ঠিক না। এ বছর বলা হচ্ছে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ হবে। আমার বিবেচনায় সেটাও কমে হয়তো ৫-এর ঘরে চলে আসবে। আগামী বছর যে খুব একটা ব্যতিক্রম কিছু হবে তা মনে হয় না। তাহলে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কোন জাদুবলে আসবে। এটা অসম্ভব; অবাস্তব লক্ষ্য। অতি আশাবাদের বদলে বাস্তবতা ও ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্য ধরাই উচিত ছিল সরকারের।”

তিনি বলেন, ‘গড় মূল্যস্ফীতি এখন প্রায় ১০ শতাংশ। সেই মূল্যস্ফীতি কীভাবে ৬ শতাংশে নেমে আসবে- এটাও আমার কাছে অকল্পনীয় মনে হয়। অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে প্রধান গুরুত্বে রেখে সরকারকে কাজ করা উচিত বলে আমি মনে করি।’

অবশ্য বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেছেন, “বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে আসা, দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় এবং খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগের প্রভাবে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকবে এবং বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়াবে বলে আশা করি।”

মূল্যস্ফীতি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে মঙ্গলবার প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, নীতিগত অনিশ্চয়তা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। যা আগের অর্থবছরে চেয়ে ১ দশমিক ৯ শতাংশ পয়েন্ট কম।

২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৭ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-শিল্প উদ্যোক্তারাও গ্যাস-বিদুতের সংকটের জন্য হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন শনিবার প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জ্বলানি সংকটের কথা বলেছেন।

সংবাদ সম্মেলন চলাকালে বিদুৎ চলে যাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে এফবিসিসিআই সভাপতি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই দেখেন অবস্থা। এমন হলে কিভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য চলবে? কলকারখানা চলবে?”

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মে) আমদানি কমেছে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর দশ মাসে অর্থাৎ জুলাই-এপ্রিল সময়ে পণ্য আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে প্রায় ২৭ শতাংশ।   

২০২৩ সালে বিশ্ব প্রবৃদ্ধি হবে ২.১ শতাংশ

বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি তীব্রভাবে মন্থর হয়েছে এবং বৈশ্বিক সুদের হার বৃদ্ধির কারণে উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতিকে চাপ ও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

এ পরিস্থতিতে ২০২৩ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে ২ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসবে। ২০২২ সালে বিশ্বে ৩ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবৃদ্ধি

বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে চলতি ২০২৩ সালে দক্ষিণ এশিয়া অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসবে। আর আগামী বছরে (২০২৪) বছরে তা আরও কমে ৫ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসবে।

 

ডলার সংকটেও বাড়ছে এলসি, মে মাসে বেড়েছে ২৫ শতাংশ পরবর্তী

ডলার সংকটেও বাড়ছে এলসি, মে মাসে বেড়েছে ২৫ শতাংশ

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর