শুধু বাংলাদেশ নয়, সব দেশ থেকেই পোশাক আমদানি কমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
ফাইল ছবি
শুধু বাংলাদেশ নয়; চীন, ভিয়েতনামসহ দেশ থেকেই পোশাক আমদানি কমিয়ে দিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়াসহ নানা অস্থিরতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তারা পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আর এ কারণেই বিভিন্ন দেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ড। ফলে এই বাজারে চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মতো শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে। এই পাঁচ দেশের মধ্যে চীন, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি বেশি কমেছে। বাংলাদেশের তুলনামূলকভাবে কম কমেছে।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এমন তথ্য মিলেছে। এতে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশ থেকে ২ হাজার ৫২১ কোটি (২৫.২১ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে।
গত বছরের একই সময়ের চেয়ে এই আমদানি ২২ দশমিক ১৫ শতাংশ কম। গত বছর এই সময়ে ৩ হাজার ২৩৯ কোটি (৩২.৩৯ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক আমদানি করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ড।
অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীন ৪৫২ কোটি (৪.৫২ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। গত বছর একই সময়ে দেশটির রপ্তানি ছিল ৬৬৯ কোটি (৬.৬৯ বিলিয়ন) ডলার। এ হিসাবে এই চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি কমেছে ৩২ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
এই সময়ে দেশটিতে ভিয়েতনামের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ২৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে ৪৩৭ কোটি (৪.৩৪ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক। গত বছরের একই সময়ে তাদের রপ্তানি ছিল ৬০১ কোটি (৬.০১ বিলিয়ন) ডলার।
একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। ২০২২ সালে এই বাজারে ৯৭২ কোটি (৯.৭২ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেন বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকাররা। তার বিপরীতে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি-এপ্রিল সময়ে রপ্তানি হয়েছে ২৭০ কোটি (২.৭০ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক।
গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এই রপ্তানি ১৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। গত বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছিল ৩২৮ কোটি (৩.২৮ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক।
অন্যদিকে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১৭৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে ভারত। দেশটির রপ্তানি কমেছে ১৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ইন্দোনেশিয়ার তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ২৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এই চার মাসে দেশটি রপ্তানি করেছে ১৫১ কোটি ডলারের পোশাক।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি দ্রুত বাড়তে থাকে। গত বছরের জুনে দেশটির মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়ায়, যা ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফলে নিত্যপণ্য ও জ্বালানি ছাড়া অন্যান্য পণ্য কেনা কমিয়ে দেন দেশটির ভোক্তারা।
যদিও দেশটির মূল্যস্ফীতি কমে আসছে। গত এপ্রিলে অবশ্য তাদের মূল্যস্ফীতি কমে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়ায়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) আর্থিক বছরের তথ্য প্রকাশ করে। ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) তথ্য প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
তাতে দেখা যায়, এই দশ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ৬ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ কম।
‘যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি’ মন্তব্য করে অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক এবং দীর্ঘদিন আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা আহসান এইচ মনসুর।
এআরএইচ ডটকমকে তিনি বলেন, “আমেরিকায় সাধারণত মূল্যস্ফীতি দেড়-দুই শতাংশ থাকে। কিন্তু যুদ্ধের কারণে ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে উদ্বেগজনক পর্যায়ে উঠে গিয়েছিল। দেশটির সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপে অবশ্য তা কমে আসছে। কিন্তু মানুষের মধ্যে এখনও আতঙ্ক কাটেনি। তারা এখনও কৃচ্ছসাধন করছে।
“যুদ্ধ চলছে…। যুদ্ধের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র মেটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করছে। এই যুদ্ধ কবে শেষ হবে-তা নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছে না। সে কারণেই সে দেশের ভোক্তারা অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য পণ্য কিনছে না।”
“সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের পোশাক রপ্তানি কমে গেছে। সহসা বাড়বে বলেও মনে হচ্ছে না,” বলেন এই অর্থনীতিবিদ।
দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক; মোট রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশই আসে এই খাত থেকে।
যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমার কারণ জানতে চাইলে এই খাতের শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “কয়েক মাস ধরেই দেশটিতে আমাদের রপ্তানি কমছে। আমরা তেমনটিই আশঙ্কা করছিলাম। কারণ যুদ্ধ; যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অস্থিরতা আর মূল্যস্ফীতি। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।”
কমেন্ট