রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি আর আন্তঃব্যাংক দর সমান

রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি আর আন্তঃব্যাংক দর সমান

বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির বিক্রির দর আরও বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার এক লাফে এই দর ২ টাকা ৮৫ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। আর এর ফলে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির দাম ১০৮ টাকা ৮৫ পয়সায় উঠেছে। 

সোমবার এই দরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে কখনই একদিনে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির দর এত বেশি বাড়ানো হয়নি; ৫০ পয়সা বা ১ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। 

এর মধ্য দিয়ে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি আর আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারের ডলারের দর প্রায় সমান হয়ে গেলো। সোমবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দর ছিল ১০৮ টাকা ৭০ পয়সা। 

গত ১৮ জুন ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছিলেন, রিজার্ভ থেকে কম দামে আর ডলার বিক্রি করা হবে না। 

সেই ঘোষণা বাস্তবায়নের জন্যই একদিনে ডলারের দর ২ টাকা ৮৫ পয়সা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। 

ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ-এবিবি এবং বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন-বাফেদা আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দর নির্ধারণ করে থাকে। 

এতদিন প্রতিমাসে ৫০ পয়সা বা ১ টাকা করে এ দর বাড়ানো হচ্ছিল। সোমবার এ দর ২ টাকা ৮৫ পয়সা বাড়িয়ে ১০৮ টাকা ৮৫ পয়সা করা হয়েছে। এ দিন এই দরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে ৭ কোটি ২০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

আর এর মধ্য দিয়ে নতুন অর্থবছরে প্রথম ডলার বিক্রি করল বাংলাদেশ ব্যাংক। 

বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে সব মিলিয়ে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কাছে  ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

এতদিন রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির দর ছিল ১০৬ টাকা। গত ১ জুন এই দর নির্ধারণ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

এতদিন দেখা গেছে, এবিবি ও বাফেদা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স, রপ্তানি আয় ও আমদানির ক্ষেত্রে   ডলারের দর বাড়ানোর পর বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির দর বাড়িয়েছে। 

কিন্তু এবার ‘সব ক্ষেত্রে ডলারের এক দাম’ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলারের দর একদিনে ২ টাকা ৮৫ পয়সা বাড়িয়েছে। 

মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছিলেন, “বাণিজ্যিক ব্যাংকের চাহিদা মেটাতে রিজার্ভ থেকে চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত ১৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করা হয়েছে। রিজার্ভ কমার এটাও একটি কারণ। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক আর ডিসকাউন্ট রেটে ডলার বিক্রি করবে না। বাজার দর অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে সবাইকে ডলার কিনতে হবে।” 

অর্থাৎ এখন থেকে আন্ত:ব্যাংকে ডলারের যে দর উঠবে সেই দরে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

 ‘অস্তির ডলারের বাজার সুস্থির করতে’ ২০২১-২২ অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এলসি বা ঋণপত্র খোলার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার নেয়। কারণ সরকারি এলসিতে জ্বালানি তেলসহ আরও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস আমদানি করতে হয়। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এলসি খোলার ক্ষেত্রে অর্ধেক ডলার নিজেদের থেকে এবং বাকি অর্ধেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেয়। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “ডলার বিক্রির দর আরও বাড়ানো হয়েছে যেন রিজার্ভের ওপর চাপ কম পড়ে।” 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ৪ মে থেকে রিজার্ভ থেকে প্রতি ডলার ১০৪ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করা হচ্ছিল। জুন মাসে দুই দফায় তা ১ টাকা ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১০৬ টাকা করা হয়েছিল। 

তবে সব ব্যাংক এই দরে ডলার পায়নি। সরকারের প্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্য ব্যাংকগুলোকে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ডলার কিনে আমদানি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়েছে। 

বর্তমানে প্রতি ডলারে রেমিটেন্সে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা এবং রপ্তানি বিল নগদায়নে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারিত আছে।   

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এতে সংকট আরও বেড়ে যায়।  

পরে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ব দেওয়া হয় এবিবি ও বাফেদাকে।  

এর পর থেকে এই দুই সংগঠন মিলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে।  

 

আমদানি বিল ১০৯ টাকার মধ্যে রাখার নির্দেশ পরবর্তী

আমদানি বিল ১০৯ টাকার মধ্যে রাখার নির্দেশ

কমেন্ট