পেঁয়াজ আমদানিতে সব শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ ট্যারিফ কমিশনের
বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারত সীমান্তে ট্রাকভর্তি পেঁয়াজ। ফাইল ছবি
পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে রান্নায় অত্যাবশ্যকীয় মসলাজাতীয় এ পণ্য আমদানিতে সব শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনবিটিটিসি।
সোমবার রাজস্ব রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে বিটিটিসি অনুরোধ জানায়, আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানিতে যেন কোনো শুল্ক না নেওয়া হয়। কারণ, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ায় বাংলাদেশে পণ্যটির দাম বেড়ে গেছে।
এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিমের কাছে লেখা জরুরি চিঠিতে বিটিটিসি বলেছে, ভারত সরকার শনিবার পেঁয়াজ রপ্তানির উপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম টনপ্রতি ২৮০-৩০০ ডলার থেকে বেড়ে ৪০০-৪২০ ডলার হবে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রতি বছর আগস্ট থেকে জানুয়ারি সময়ের মধ্যে পেঁয়াজ আমদানি বৃদ্ধি পায়।
পেঁয়াজ আমদানিতে বাংলাদেশের আমদানিকারকদের ৫ শতাংশ শুল্কসহ মোট ১০ শতাংশ আমদানি কর দিতে হয়।
বিটিটিসির উপ-প্রধান (বাণিজ্য নীতি) মাহমুদুল হাসানের সই করা চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ভারত রপ্তানি শুল্ক আরোপের পর বাংলাদেশের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আমদানি শুল্ক মওকুফ করাসহ বেসরকারি খাত ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (টিসিবি) মিয়ানমার, তুরস্ক ও মিশরের মতো বিকল্প উৎস থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে উৎসাহিত করার পরামর্শও দিয়েছে বিটিটিসি।
কমিশন বলছে, বাংলাদেশে পেঁয়াজের চাহিদার ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব হয়। ঘাটতি মেটাতে বাকিটা আমদানি করতে হয়, যার প্রায় পুরোটাই আমদানি করা হয় ভারত থেকে।
পাশের দেশ হওয়ায় পরিবহন খরচ কম এবং দ্রুততর সময়ের মধ্যে পণ্যটি দেশে আসায় বরাবরই ভারত থেকে বেশি পেঁয়াজ আমদানি করা হয়।
তবে ভারত সরকার নিজেদের প্রয়োজনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অন্যান্য পণ্যের মতো পেঁয়াজ রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞাসহ আরোপ করে। কখনও কখনও বাড়তি শুল্ক আরোপ করে।
কিছু দিন আগে চাল রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি। শনিবার পেঁয়াজ রপ্তানির উপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, “দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়াতে সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।”
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিদিনের খুচরা বাজার দর অনুযায়ী, সোমবার রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতিকেজি ভালো দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকায়।
একদিন আকে রোববার দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৮৫ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজের দর ছিল ৬৫ টাকা। এক মাস আগে ২১ জুলাই দেশি পেঁয়াজের দর ছিল ৬৫ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৫০ টাকায়।
বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম এমনিতেই ঊর্ধ্বমূখী ছিল। ভারত শুল্ক আরোপ করায় তা আরও বেড়ে গেছে। বাড়তি শুল্ক আরোপের আমদানি করা পেঁয়াজ এখনও দেশে আসেনি। এর পরও খুচরা বাজারে কেজিতে দাম দুই দিনের ব্যবধানে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে।
বছরের পর বছর ধরে বাজারে একই চিত্র দেখা গেলেও সরকার কখনও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
এ বিষয়ে সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “ইচ্ছা করলেই বাজার মনিটরিং করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। আসলে চাহিদা ও সরবরাহের উপর নির্ভর করে। সরবরাহ বেশি হলে দাম অটো কমবে, এটাই হলো মূল কথা।”
সাংবাদিকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, “আপনারা যতই বলেন, আমরা কেন সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছি না… আসলে সিন্ডিকেট ভাঙা অনেক কঠিন।”
সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে এ সব কথা বলেন আব্দুর রাজ্জাক।
ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর সরকারের সিদ্ধান্ত জানাতে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে আসেন মন্ত্রী। তিনি জানান, এখন থেকে চীন, জাপান, ইরান, মিশর ও তুরস্ক থেকেও পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, “নিত্যপণ্যের বাজারে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙা অনেক কঠিন। ইচ্ছা করলেই মনিটরিং করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। দাম নির্ভর করবে সরবরাহের ওপর।”
কমেন্ট