ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে কোটা চেয়ে ফের চিঠি

ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে কোটা চেয়ে ফের চিঠি

পণ্য সাতটি হচ্ছে–চাল, গম, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, চিনি ও মসুর ডাল।

চাল রপ্তানি বন্ধ এবং পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের মধ্যে ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে কোটা চেয়ে নতুন করে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। 

ভারত থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় ছয় পণ্য আমদানিতে বার্ষিক কোটা (নির্ধারিত পরিমাণ) পাওয়ার বিষয়টি ঝুলে গেলেও নতুন করে আবার আলোচনায় এসেছে। শুধু তা–ই নয়, আগের প্রস্তাবে মসুর ডাল ছিল না। নতুন প্রস্তাবে এটিও যুক্ত হয়েছে। সে হিসেবে পণ্য দাঁড়িয়েছে ছয়টির বদলে সাতটি। আবার কিছু পণ্যের চাহিদাও বেড়েছে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রোববার এক চিঠিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বাংলাদেশের সাত পণ্যের নতুন চাহিদার কথা জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার সেই চিঠি ভারত সরকারকে পাঠিয়েছে এবং জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে বলে জানা গেছে। 

পণ্য সাতটি হচ্ছে–চাল, গম, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, চিনি ও মসুর ডাল। 

রোববার বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষের নেতৃত্বে ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পণ্যের সংখ্যা ও পরিমাণ সংশোধন করে রোববারই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। 

শিগগিরই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা প্রস্তাব আকারে ভারত সরকারের কাছে পাঠাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের বাড়তি চাহিদা অনুযায়ী বিশ্ববাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে পণ্যভিত্তিক সুনির্দিষ্ট টাইম লাইনসহ সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। 

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বেসরকারি খাতের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করে এসব পণ্যের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। 

এআরএইচ ডটকমকে তিনি বলেন, “রোববারের বৈঠকে কোটা দেওয়ার বিষয়ে ভারত বেশ ইতিবাচক ছিল। বৈঠকের সিদ্ধান্তের আলোকে আবারও প্রস্তাব পাঠাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে “ 

তিনি আরও বলেন, ভারত সরকারের নির্ধারিত রপ্তানি শুল্ক পরিশোধ করেই কোটার আওতায় পণ্য আমদানি করতে হবে। তবে কোটা পাওয়ার সুবিধা হচ্ছে, ভারত কোনো পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও নির্ধারিত কোটা পর্যন্ত পণ্য পাবে বাংলাদেশ। কোটা না থাকায় দেশটি হঠাৎ করে কোনো পণ্য রপ্তানি বন্ধ করলে তার প্রভাব পড়ে দেশের বাজারে।

আট মাস আগে গত বছরের ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি প্রথম ভারত থেকে আট ধরনের নিত্যপণ্যে কোটা চেয়ে প্রস্তাব দেন। 

প্রস্তাবের মূল কথা হচ্ছে পণ্যগুলো আমদানিতে বাংলাদেশের জন্য ভারত যেন বার্ষিক কোটা বরাদ্দ রাখে। ভারতের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী প্রিয়ুশ গয়ালের পক্ষ থেকে লিখিত প্রস্তাবের পরামর্শ দিয়ে তখন এ বিষয়ে সম্মতিও জানানো হয়। 

বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ সোমবার রাতে এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “আমরা আশা করছি, ভারত এখন দ্রুততম সময়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) তৈরি করবে। এরপর বাংলাদেশও করবে এমওইউ।’ 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতকে আগে যে ছয় পণ্য আমদানিতে কোটা চেয়েছিল, তার মধ্যে ছিল চাল ১৫ লাখ টন, গম ২৫ লাখ টন, চিনি ১০ লাখ টন, পেঁয়াজ ৬ লাখ টন, আদা ১ লাখ টন ও রসুন ৫০ হাজার টন। 

রোববার নতুন করে চাওয়া হয়েছে চাল ১৫ লাখ ৫০ হাজার টন, গম ২৬ লাখ টন, চিনি ১০ লাখ টন, পেঁয়াজ ৮ লাখ টন, আদা ৫০ হাজার টন, রসুন ৭০ হাজার টন ও মসুর ডাল ১ লাখ টন। 

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে আগে জানানো হয়েছিল, চালের কোটায় ৮ থেকে ১০ লাখ টন আমদানি করা হবে সরকারিভাবে। বাকিটা আমদানি করবে বেসরকারি খাত। আর গমের কোটায় সরকার ৫ থেকে ৭ লাখ টন আনবে, বাকিটা আসবে বেসরকারিভাবে। 

বাংলাদেশ ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারত থেকে ১ হাজার ৩৬৯ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করে। তার আগের অর্থবছরে দেশটি থেকে আমদানি করা হয় ৮৫৯ কোটি ডলারের পণ্য। 

গত জানুয়ারিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে সভাপতি করে পাঁচ সদস্যের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ১৫ লাখ টন চাল, ২৫ লাখ টন গম, ৬ লাখ টন পেঁয়াজ, ১০ লাখ টন চিনি, ১ লাখ টন আদা এবং ৫০ হাজার টন রসুনের কোটার প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। 

এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, ভারতের সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের কর্তৃপক্ষ একটি ভার্চুয়াল সভার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী। তাই রোববার দুই দেশের মধ্যে বৈঠক হয়। 

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অবশ্য নতুন করে চাওয়া হয়েছে চাল ১৫ লাখ ৫০ হাজার টন, গম ২৬ লাখ টন, চিনি ১০ লাখ টন, পেঁয়াজ ৮ লাখ টন, আদা ৫০ হাজার টন, রসুন ৭০ হাজার টন ও মসুর ডাল ১ লাখ টন। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে ভারত পেঁয়াজ ও গম রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় সমস্যায় পড়ে বাংলাদেশ। সম্প্রতি চাল রপ্তানি বন্ধ করেছে ভারত। কিন্তু নিত্যপণ্য আমদানিতে বার্ষিক কোটা দিলে সামগ্রিকভাবে কোনো পণ্যের রপ্তানি বন্ধ করলে বাংলাদেশ তার আওতায় থাকবে না। ভুটান ও মালদ্বীপকে এ সুবিধা দিয়ে আসছে ভারত। 

গত ২০ জুলাই দেশের ভেতরে চালের উর্ধ্বমূখী দাম সামাল দিতে ভারত সরকার বাসমতি ছাড়া আর সব ধরনের সাদা চালের রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। 

আর শনিবার পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, “দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়াতে সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।” 

বাংলাদেশের বাজারে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চালের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল থাকলেও পেঁয়াজ, আদা, রসুন, চিনি ও মসুর ডালের দাম বেড়েই চলেছে। 

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিদিনের খুচরা বাজার দর অনুযায়ী, সোমবার রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতিকেজি ভালো দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকায়।  

একদিন আকে রোববার দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৮৫ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজের দর ছিল ৬৫ টাকা। এক মাস আগে ২১ জুলাই দেশি পেঁয়াজের দর ছিল ৬৫ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৫০ টাকায়।  

বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম এমনিতেই ঊর্ধ্বমূখী ছিল। ভারত শুল্ক আরোপ করায় তা আরও বেড়ে গেছে। বাড়তি শুল্ক আরোপের আমদানি করা পেঁয়াজ এখনও দেশে আসেনি। এর পরও খুচরা বাজারে কেজিতে দাম দুই দিনের ব্যবধানে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে।

পেঁয়াজ আমদানিতে সব শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ ট্যারিফ কমিশনের পরবর্তী

পেঁয়াজ আমদানিতে সব শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ ট্যারিফ কমিশনের

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর