অবশেষে ডিম আমদানির অনুমতি
চার প্রতিষ্ঠানকে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি করে ডিম আমদানি করবে।
অবশেষে ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। দামের লাগাম টানতে পাশের দেশে ভারত থেকে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
চার প্রতিষ্ঠানকে এই চার কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা হায়দার আলী এআরএইচ ডটকমকে জানিয়েছেন।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি করে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “চারটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি এক কোটি করে ডিম আমদানি করবে। আমাদের লক্ষ্য দেশের বাজারে ডিমের দাম কমিয়ে আনা। সেজন্য আমদানির অনুমতি দেওয়া শুরু হয়েছে। ডিমের দাম না কমা পর্যন্ত আমরা এটা চালিয়ে যাবো।”
দেশে ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার পর কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ডিম আমদানি করতে অনুমতি চেয়েছিল। তাদের মধ্য থেকে চারটি প্রতিষ্ঠানকে রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম আমদানির এই অনুমতি দেয়।
বাজারে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কিছুদিন ধরেই ডিম আমদানি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সংবাদ সম্মেলনে আলু ও পেঁয়াজের সঙ্গে ডিমের দামও বেঁধে দেন।
প্রতিটি ডিমের দাম ১২টাকা নির্ধারণ করে দিয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “বেঁধে দেওয়া দামে ডিম বিক্রি করা না হলে আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে।”
তারই ধারাবাহিকতায় ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা হায়দার আলী।
তিনি বলেন, “বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রোববার দেশের চার প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি করে মোট চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। আমদানি করা ডিম খুচরা পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত দাম প্রতি পিস ১২ টাকায় বিক্রি হবে।”
“আমদানি করা ডিম লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার এক সপ্তাহের মধ্যে এসে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।”
অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠান চারটি হচ্ছে– মেসার্স মীম এন্টারপ্রাইজ, প্রাইম এনার্জি ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড সাপ্লাইয়ার্স, টাইগার ট্রেডিং এবং অর্নব ট্রেডিং লিমিটেড।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে প্রতিদিন চার কোটি ডিমের প্রয়োজন হয়। এজন্য দেশের বাজারে ডিমের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে প্রাথমিক পর্যায়ে সরকার আমদানির পর বাজার স্থিতিশীল আছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করবে এবং বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, “ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকা হওয়ায় আমরা এই দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি। প্রতি পিস ডিম এখন থেকে ১২ টাকায় বিক্রি কাতে হবে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।”
ওই দিন ডিম আমদানির সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেছিলেন, “বাজার পর্যালোচনা করে সীমিত আকারে ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে। যদি ডিম প্রতি পিস ১২ টাকায়ই খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করা হয়, তাহলে আমদানির বিষয়টি অত গুরুত্ব পাবে না, সীমিত আকারে করা হবে।”
“কিন্তু দাম ১২ টাকায় সীমিত না থেকে বাড়ানো হয়, কিংবা সুযোগ নেওয়া হয়, তাহলে বেশি করে আমদানি করা হবে। বাজার ঠিক রাখার জন্যই আমদানি করা হবে।”
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিদিনের খুচরা বাজার দর অনুযায়ী, সোমবার রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি হালি ফার্মের ডিম ৪৮ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তবে কারওয়ান বাজার ও শেওড়াপাড়া বাজারেে প্রতি পিচ ডিম সাড়ে ১২ টাকা, হালি ৫০ টাকা, ডজন ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
কিছুদিন আগে প্রতি ডজন ডিম ১৭০ টাকায় উঠেছিল। প্রতি হালির দাম উঠেছিল ৬০ টাকায়; একটা ডিমের দাম পড়ত ১৫ টাকা।
যে চার শর্তে অনুমতি
ডিম আমদানি করার ক্ষেত্রে চারটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। এর প্রথমটি হলো-এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু মুক্ত দেশ থেকে ডিম আমদানি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমদানি করা ডিমির প্রতিটি চালানের জন্য রপ্তানিকারক দেশের সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের দেওয়া এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু ভাইরাস ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মুক্ত সনদ দাখিল করতে হবে।
এ ছাড়া নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি করা যাবে না এবং সরকারের অন্যান্য বিধি–বিধান প্রতিপালন করতে হবে–এমন দুটো শর্তের কথা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানিয়েছেন, ঠিক কবে ডিম আমদানি হবে তা চার প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। তবে তাদেরকে বলা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব ডিম আমদানি করতে হবে। তিনি বলেন, যেহেতু ঋণপত্র খুলে আমদানি করতে হবে, সেক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
আমদানি করা ডিমের দাম কী হবে- এ প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্য সচিব বলেন, বাজারে যেহেতু ডিমের খুচরা মূল্য ১২ টাকা করে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, তাই আমদানি করা ডিমও প্রতিটি ১২ টাকার বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, দেশে প্রতি দিন চার কোটি ডিমের চাহিদা রয়েছে। ডিমের ওই চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে এক দিনের চাহিদা পূরণ করা যায়, শুরুতে সেই সংখ্যক ডিম আমদানি করা হবে।
তবে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, প্রয়োজন হলে আরও ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। ডিমের বাজারে সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কমেন্ট