রেমিটেন্সে সুখবর নেই, রিজার্ভ কমছেই

রেমিটেন্সে সুখবর নেই, রিজার্ভ কমছেই

বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস রেমিটেন্স প্রবাহে সুখবর নেই; আর সে কারণে রিজার্ভ কমছেই। সদ্য সমাপ্ত মে মাসে ১৬৯ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার (১.৬৯ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

এই অঙ্ক গত এপ্রিল মাসের চেয়ে দশমিক ৪ শতাংশ বেশি; তবে গত বছরের মে মাসের চেয়ে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ কম।

এপ্রিল মাসে ১৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। গত বছরের মে মাসে এসেছিল ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার।

গত মার্চ মাসে ২০২ কোটি ২৫ লাখ (২.০২ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। গত বছরের এপ্রিলে এসেছিল ২০১ কোটি ৮ লাখ ডলার। রোজার মাসে সব সংসারেই বাড়তি খরচ হয়। প্রয়োজনীয় সেই ব্যয়ের বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই প্রবাসীরা পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি অর্থ দেশে পাঠানোয় মার্চে রেমিটেন্স বেড়েছিল। ধারণা করা হয়েছিল সেই ধারাবাহিকতায় ঈদের মাস এপ্রিলেও রেমিটেন্সপ্রবাহ বাড়বে। কিন্তু ঈদের মাসে রেমিট্যান্স না বেড়ে উল্টো কমেছিল। ২২ এপ্রিল দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়।

ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম বেশি হওয়ায় প্রবাসীরা অনেকেই ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে টাকা না পাঠিয়ে অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানোয় ব্যাংকে রেমিট্যান্স কমছে বলে ধারণা করছেন জনশক্তি রপ্তানিকারক, অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। পরের মাস আগস্টে আসে কিছু কম, ২ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলার। এর পরের ছয় মাসের কোনো মাসেই প্রবাসী আয় ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়নি। মার্চে তা ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আসে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) সব মিলিয়ে ১৯ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।

রেমিট্যান্সে প্রতি ডলারের জন্য এখন ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। তবে কার্ব মার্কেটে ডলারের দর ১১৩ থেকে ১১৪ টাকা। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেয় সরকার। এর পরও অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রতি ডলারে ৪-৫ টাকা বেশি পাওয়া যায়। সে কারণেই হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠান অনেক প্রবাসী।

বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক হচ্ছে রেমিট্যান্স। কেননা এই সূচকের বাড়া-কমার ওপর অনেকটাই নির্ভর করে রিজার্ভের উত্থান-পতন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১.০৩ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের বছরের (২০২০-২১) চেয়ে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কম।

তবে বেশ উল্লম্ফনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর; প্রথম মাস জুলাইয়ে ২১০ কোটি (২.১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে আসে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ (২.০৩ বিলিয়ন) ডলার। পরের মাস সেপ্টেম্বরে হোঁচট খায়; এক ধাক্কায় নেমে আসে ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলারে। অক্টোবরে তা আরও কমে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলারে নেমে আসে। পরের তিন মাস টানা বেড়েছে; নভেম্বরে আসে ১৫৯ কোটি ৫২ লাখ ডলার। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে আসে ১৭০ কোটি ডলার। ২০২৩ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে আসে আরও বেশি, ১৯৬ কোটি ডলার। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে তা বেশ কমে ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ডলারে নেমে আসে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার রেমিট্যান্স প্রবাহের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, মে মাসে যে রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৮ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে প্রায় ৬ কোটি ডলার। ৪২টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১৩৩ কোটি ৬২ লাখ ডলার। আর ৯টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৬৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

রিজার্ভ ২৯.৯ বিলিয়ন ডলার

আমদানি ব্যয় কমছেই। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের গতিও মন্দ নয়। রপ্তানি আয় এখনও  ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। আইএমএফের পর বিশ্বব্যাংকের বাজেট সহায়তার ৫০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ রিজার্ভে যোগ হয়েছে। এর পরও বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে না। বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভ ছিল ২৯ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার।

গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের ১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছিল। মাঝে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণে ভর করে ৩০ বিলিয়ন ডলারের উপরে উঠেছিল।

বাজারে ডলারের চাহিদা মেটাতে রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে অব্যাহতভাবে ডলার বিক্রির ফলে রিজার্ভ কমছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল। এর পর থেকেই কমছে রিজার্ভ। এক বছর আগে ৩১ মে রিজার্ভ ছিল ৪২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

ঈদকে সামনে রেখে বাড়ছে রেমিটেন্স

পূর্ববর্তী

ঈদকে সামনে রেখে বাড়ছে রেমিটেন্স

কমেন্ট