রেমিটেন্সে ঢল, প্রতিদিন আসছে ৮৫০ কোটি টাকা

রেমিটেন্সে ঢল, প্রতিদিন আসছে ৮৫০ কোটি টাকা

ফাইল ছবি

ঈদের আগে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ঢল নেমেছে। ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ মাস জুনের ২৩ দিনে ১৮০ কোটি (১.৮০ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৭ কোটি ৮৩ লাখ ডলার।

রেমিটেন্সে প্রতি ডলারের জন্য এখন ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে চলতি মাসের এই ২৩ দিনে (১ থেকে ২৩ জুন) এসেছে ১৯ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা, প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৮৫০ কোটি টাকা।

২০২২ সালের জুন মাসের এই ২৩ দিনে ১২৬ কোটি (১.২৬বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই ২৩ দিনে প্রবাসী আয়ে ৪৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

আর এই রেমিটেন্সের উপর ভর করেই বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ আবার ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

রোববার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩০ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশের রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে রেমিটেন্স। এই সূচক বাড়ায় রিজার্ভে যে টান পড়েছে, তা অনেকটাই কেটে যাবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

গত মে মাসে ১৬৯ কোটি ১৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে; প্রতিদিনের গড় অঙ্ক ছিল ৫ কোটি ৬৩ লাখ ডলার বা ৬১০ কোটি টাকা।

২৯ জুন দেশে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। তার আগে রেমিটেন্স আরও বাড়বে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। ২১ দিনে যে রেমিটেন্স এসেছে মাসের বাকি দিনগুলোতে এ হারে আসলেও জুন মাসে ২ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন (২৩৪ কোটি) ডলার আসবে বলে হিসাব বলছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিবারের মতো এবারও ঈদের আগে রেমিটেন্স আরও বাড়বে। মাসের একেবারের শেষ দিকে ঈদ উদযাপিত হবে। তার আগে করোবানির পশু কেনাসহ ঈদের অন্যান্য খরচের জন্য পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি টাকা পাঠাবেন প্রবাসীরা।

সে কারণে জুন মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স আড়াই বিলিয়ন (২৫০ কোটি) ডলারে গিয়ে পৌঁছতে পারে বলে আশা করছেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র সরোয়ার হোসেন এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “প্রবাসী আয় বাড়ছে। ঈদের বাকি কয়দিনে আরও বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। জুন মাসে রেমিটেন্স আড়াই বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে বলে আমরা করছি। আর এর মধ্য দিয়ে ডলার সংকট ধীরে ধীরে কেটে যাবে।”

মে মাসের ১৬৯ কোটি ১৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স ছিল এপ্রিল মাসের চেয়ে দশমিক ৪ শতাংশ বেশি; তবে গত বছরের মে মাসের চেয়ে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ কম ছিল।

এপ্রিল মাসে ১৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। গত বছরের মে মাসে এসেছিল ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার।

আগের মাস মার্চে ২০২ কোটি ২৫ লাখ (২.০২ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল। গত বছরের এপ্রিলে এসেছিল ২০১ কোটি ৮ লাখ ডলার।

রোজার মাসে সব সংসারেই বাড়তি খরচ হয়। প্রয়োজনীয় সেই ব্যয়ের বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই প্রবাসীরা পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি অর্থ দেশে পাঠানোয় মার্চে রেমিটেন্স বেড়েছিল। ধারণা করা হয়েছিল সেই ধারাবাহিকতায় ঈদের মাস এপ্রিলেও রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়বে। কিন্তু ঈদের মাসে রেমিটেন্স না বেড়ে উল্টো কমেছিল। ২২ এপ্রিল দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়।

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। পরের মাস আগস্টে আসে কিছু কম, ২ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলার। এর পরের ছয় মাসের কোনো মাসেই প্রবাসী আয় ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়নি। মার্চে তা ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আসে।

বিদায়ী অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) সব মিলিয়ে ১৯ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি।

রেমিটেন্সে প্রতি ডলারের জন্য এখন ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। তবে কার্ব মার্কেটে ডলারের দর ১১২ থেকে ১১৩ টাকা। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠালে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেয় সরকার। এর পরও অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠালে প্রতি ডলারে ৩-৪ টাকা বেশি পাওয়া যায়। সে কারণেই হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠান অনেক প্রবাসী।

গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১.০৩ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের বছরের (২০২০-২১) চেয়ে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কম।

তবে বেশ উল্লম্ফনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছর; প্রথম মাস জুলাইয়ে ২১০ কোটি (২.১ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠান প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে আসে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ (২.০৩ বিলিয়ন) ডলার।

পরের মাস সেপ্টেম্বরে হোঁচট খায়; এক ধাক্কায় নেমে আসে ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলারে। অক্টোবরে তা আরও কমে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলারে নেমে আসে। পরের তিন মাস টানা বেড়েছে; নভেম্বরে আসে ১৫৯ কোটি ৫২ লাখ ডলার। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে আসে ১৭০ কোটি ডলার।

২০২৩ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে আসে আরও বেশি, ১৯৬ কোটি ডলার। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে তা বেশ কমে ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ডলারে নেমে আসে।

 

২১ দিনেই ১৮ হাজার কোটি টাকা পাঠালেন প্রবাসীরা পরবর্তী

২১ দিনেই ১৮ হাজার কোটি টাকা পাঠালেন প্রবাসীরা

কমেন্ট