২১ দিনেই ১৫ হাজার কোটি টাকা পাঠালেন প্রবাসীরা
রেমিটেন্সে প্রতি ডলারের জন্য এখন ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে এই তিন সপ্তাহে দিনে ১৫ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসী ভাই-বোনেরা। ফাইল ছবি
কোরবানির ঈদের পরও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের উল্লম্ফন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের ২১ দিনেই ১৪২ কোটি ৬১ লাখ (১.৪৩ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাছিয়েছেন প্রবাসীরা।
রেমিটেন্সে প্রতি ডলারের জন্য এখন ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে এই তিন সপ্তাহে দিনে ১৫ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসী ভাই-বোনেরা।
প্রতিদিনের গড় হিসাবে পাঠিয়েছেন ৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার বা ৭৩৭ কোটি টাকা।
প্রতিবারই মত দুই ঈদের পর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এবার তার উল্টোটা দেখাা যাচ্ছে। ২১ দিনে দেশে যে রেমিটেন্স এসেছে, মাসের বাকি ১০ দিনে সেই হারে আসছে জুন মাসের মত জুলাই মাসেও রেমিটেন্সের অঙ্ক ২২০ কোটি (২.২ বিলিযন) ডলারে গিয়ে পৌঁছবে বলে হিসাব বলছে।
ঈদের মাস জুনে ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ( প্রায় ২.২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয় দেশে এসেছিল। টাকা অঙ্কে যা ছিল ২৩ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা।
প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৭ কোটি ৩৩ লাখ ডলার বা প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।
২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ মাস জুনের রেমিটেন্স ছিল একক মাসের হিসবে বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স। যা ছিল তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিটেন্স প্রবাহের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি জুলাই মাসের ২১ দিন (১ থেকে ২১ জুলাই) ১৪২ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার ডলারের যে রেমিটেন্স এসেছে, তারমধ্যে ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৮ কোটি ১৪ লাখ ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫ কোটি ডলার।
৪২টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১১৯ কোটি ডলার। আর ৯টি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হাজার ১৬১ কোটি (২১.৬১ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।
২০২১-২২ অর্থবছরে ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার এসেছিল।
রিজার্ভ কমেছে
রেমিটেন্স বাড়ার পরও বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ বাড়ছে না; উল্টো কমছে। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে রিজার্ভ বাড়ছে না বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে রেমিটেন্স। এই রেমিটেন্স বাড়ায় ঈদের আগে রিজার্ভ বেড়ে ৩১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল।
কিন্তু চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মে-জুন মেয়াদের ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ আবার ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে।
গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের ছিল ২৯ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। তবে এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবের রিজার্ভ। বিপিএম৬ পদ্ধতিতে রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার।
গত ১৩ জুলাই থেকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কথামতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম৬ পদ্ধতি অসুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
১৩ জুলাই ‘গ্রস’ রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম৬ পদ্ধতিতে রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার।
গত মে মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৬ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে ২৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ দিয়ে চার মাসের কম সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।
দীর্ঘদিন ধরে আইএমএফ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিপিএম৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) পদ্ধতি অনুসরণ করে রিজার্ভের হিসাব করতে বাংলাদেশ সরকার তথা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরামর্শ দিয়ে আসছিল।
কিন্তু বাংলাদেশ সে বিষয়টি আমলে নেয়নি। আমদানি দায় পরিশোধ করতে গিয়ে বাংলাদেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঘাটতি দেখা দেয়। সেই ঘাটতি সামাল দিতে গত জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের কাছে ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণ পেতে সমঝোতা করে বাংলাদেশ।
ঋণ সমঝোতার পর আন্তর্জাতিক এ সংস্থার পরামর্শ আসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গণনায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিপিএম৬ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
বাাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফের সেই শর্ত বা পরামর্শ মেনেই এখন রিজার্ভের দুই ধরনের তথ্যই প্রকাশ করছে।
কমেন্ট