যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্সে ধস
জুলাই-আগস্ট সময়ে সব দেশ থেকেই রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে। তবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স কমেছে সবচেয়ে বেশি; এক ধাক্কায় দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ অবস্থানে নেমে এসেছে।
বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস রেমিটেন্স প্রবাহে বেশ বড় ধাক্কা লেগেছে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে ১৬০ কোটি (১.৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে। এই অঙ্ক গত ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।
গত ফেব্রুয়ারিতে ১৫৬ কোটি (১.৫৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
আগস্ট মাসে গত বছরের আগস্টের চেয়ে ২১ দশমিক ৪৭ শতাংশ কম রেমিটেন্স দেশে এসেছে। আর আগের মাস জুলাইয়ের কম এসেছে ১৯ শতাংশ।
দুই মাসের হিসাবে অর্থাৎ জুলাই-আগস্ট সময়ে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে কমেছে ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দেশভিত্তিক রেমিটেন্সের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই দুই মাসে সব দেশ থেকেই রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে। তবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স কমেছে সবচেয়ে বেশি; এক ধাক্কায় দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ অবস্থানে নেমে এসেছে।
বরাবরের মতই গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছিল সৌদি আরব থেকে, ৩৭৬ কোটি ৫৩ লাখ (৩.৭৬ বিলিয়ন) ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে, ৩৫২ কোটি ২০ লাখ (৩.৫২ বিলিয়ন) ডলার।
সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছিল ৩০৩ কোটি ৩৮ লাখ (৩.০৩ বিলিয়ন) ডলার; অবস্থান ছিল তৃতীয়। চতুর্থ অবস্থানে ছিলৈ যুক্তরাজ্য; এসেছিল ২০৮ কোটি ৪ লাখ (২.০৮ বিলিয়ন) ডলার।
তার আগের অর্থবছরেও (২০২১-২২) এই চার দেশের অবস্থান ছিল একই। সবচেয়ে বেশি এসেছিল সৌদি আরব থেকে, ৪ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছিল ৩ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্য থেকে এসেছিল যথাক্রমে ২ দশমিক শূন্য সাত বিলিয়ন ডলার ও ২ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার।
কিন্তু চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) এই চার দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম রেমিটেন্স এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে, ৩৭ কোটি ডলার।
এই দুই মাসে বেশি রেমিটেন্সে এসেছে সৌদি আরব থেকে, ৫৯ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। আরব আমিরাত থেকে এসেছে ৫৬ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। আর যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ৪৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার।
অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে অবশ্য সৌদি আরবকে পেছনে ফেলে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয় আহরণের শীর্ষে উঠে এসেছিল আরব আমিরাত। দেশটি থেকে ৩৩ কোটি ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছিল। সৌদি আরব থেকে এসেছিল ৩০ কোটি ৭৫ লাখ ডলার।
যুক্তরাজ্য থেকে এসেছিল ২২ কোটি ১২ লাখ ডলার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছিল ২০ কোটি ডলার।
দ্বিতীয় মাস আগস্টে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে সৌদি আরব থেকে, ২৯ কোটি ১৩ লাখ ডলার। আরব আমিরাত থেকে এসেছে ২৩ কোটি ৮৪ লাখ ডলার।
যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ২১ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। যথারীতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে কম ১৭ কোটি ডলার এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সৌদি আরবের চেয়েও বেশি রেমিটেন্স এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে। স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসছে যে দেশ থেকে, সেই সৌদি আরবকে পেছনে ফেলে ওই ছয় মাসে শীর্ষস্থানে চলে এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর অর্থনীতির দেশটিতে বসবাসকারী প্রবাসীরা ১৯৬ কোটি ৬৭ লাখ (১.৯৭ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন। আর সৌদি আরব থেকে এসেছিল ১৯০ কোটি ৯১ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার।
ওই ছয় মাসের চার মাসেই সৌদির চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি রেমিটেন্স এসেেছিল দেশে।
সবশেষ ডিসেম্বর মাসে ব্যবধান সবচেয়ে বেশি। এ মাসে সৌদি আরব থেকে এসেছে ৩০ কোটি ৬৪ লাখ ডলার আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ৪২ কোটি ৮৩ লাখ ডলার।
হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স এত কম আসার কারণ জানতে চাইলে অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “সব দেশ থেকেই কিন্তু রেমিটেন্স বেশ কম এসেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে হঠাৎ করে এত কমে যাওয়া একটা উদ্বেগের বিষয়। কেননা, গত কয়েক বছর ধরেই রেমিটেন্সে বেশ ভালো আশা দেখাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র।”
“আমার যেটা মনে হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী সব মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। সেখানে আমাদের যে সব প্রবাসী থাকেন, তাদের খরচ আগের থেকে বেড়ে গেছে। সে কারণে তারা দেশে পরিবার-পরিজনের কাছে আগের চেয়ে কম টাকা পাঠাচ্ছেন। যার ফলে দেশটি থেকে এখন কম রেমিটেন্স আসছে।”
“তবে দুই মাসের তথ্য দিয়ে বিষয়টি পরিস্কার হওয়া যাবে না। আরও কয়েক মাস গেলে প্রকৃত অবস্থা বোঝা যাবে।”
কমেন্ট