রেমিটেন্স বাড়াতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চান অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী বলেন, “বর্তমানে অনেক লোক দেশের বাইরে যাচ্ছেন। তবে সেই অনুপাতে রেমিটেন্স বাড়ছে না। তাই প্রবাসী আয় বাড়াতে কাঠামোগত সংস্কারের পথ খুঁজছে সরকার।” ফাইল ছবি
বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়াতে বিশেষজ্ঞদের উদ্ভাবনী পরামর্শ চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “বর্তমানে অনেক লোক দেশের বাইরে যাচ্ছেন। তবে সেই অনুপাতে রেমিটেন্স বাড়ছে না। তাই প্রবাসী আয় বাড়াতে কাঠামোগত সংস্কারের পথ খুঁজছে সরকার।”
এজন্য সংশ্লিষ্টদেরকে উদ্ভাবনী পরামর্শ নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল।
“প্রবাসী আয় বাড়ানো গেলে অর্থনীতির চলমান সব সমস্যা সমাধান সম্ভব,” বলেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, সরকার দুই-শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার পর দেশে প্রবাসী আয়ের যে প্রবাহ তৈরি হয়েছিল, তা ধরে রাখা যায়নি। প্রতিবছর অনেক মানুষ কাজের জন্য বিদেশে যাচ্ছেন। বর্তমানে এক কোটি মানুষ বিদেশে কাজ করছেন, কিন্তু প্রবাসী আয় সেভাবে বাড়ছে না।
সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে পাবলিক ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট বা পিএফএম সামিট-২০২৩ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে এই সম্মেলন আয়োজন করেছে।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের গভর্ন্যান্স গ্লোবাল প্র্যাকটিস দপ্তরের ব্যবস্থাপক হিশাম ওয়ালি ও বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশপ্রধান (কান্ট্রি ডিরেক্টর) আবদুলায়ে সেক।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খান, মোহাম্মদ তারেক, ফজলে কবীর, মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
অনুষ্ঠানে প্রবাসী আয় বাড়াতে দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার হাতে নেওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী। বলেন, “এটি করা গেলে এক প্রবাসীর আয় দিয়েই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ অনেক সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।”
এ সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে মুস্তফা কামাল বলেন, “প্রবাসী আয় বাড়ানোর জন্য আপনারা এভিডেন্স বা তথ্য-প্রমাণনির্ভর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করুন। মাইক্রো লেভেলে কেস টু কেস উদাহরণ দেখুন; তাহলে আমাদের প্রবাসী আয় ও রাজস্ব বাড়বে।”
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশপ্রধান (কান্ট্রি ডিরেক্টর) আবদুলায়ে সেক বলেন, “পাবলিক ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট (পিএফএম) হচ্ছে দেশের সুশাসন কাঠামোর মেরুদণ্ড। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, পিএফএফের মাধ্যমে উন্নত পরিষেবা দেওয়া, দারিদ্র্য দূরীকরণ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা।”
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের গভর্ন্যান্স গ্লোবাল প্র্যাকটিস দপ্তরের ব্যবস্থাপক হিশাম ওয়ালি বলেন, “অনেক সমস্যার সমাধান হচ্ছে সুশাসন। সুশাসনের কেন্দ্রে আছে পিএফএম। সরকারের পিএফএম কার্যক্রম দুর্বল থাকলে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নেও দুর্বলতা থাকে।”
“সে জন্য সরকারের স্থানীয় ও অন্য দেশের পিএফএম কার্যক্রমের সফলতা ও ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, “কার্যকর পাবলিক ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্টের জন্য এই খাতে পেশাদারত্ব তৈরি করা প্রয়োজন। একজন মানুষ সব কাজ করবে—এই ধারণা থেকে বের হয়ে একেক বিষয়ে একেকজন পারদর্শী হবেন, সেই লক্ষ্যে কাজ করা উচিত।”
সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্ট্রাটেজিক প্ল্যানিং বিভাগ থেকে অপারেশনাল প্ল্যানিং কার্যক্রম আলাদা করার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী। ভারতে এমনটা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ ছাড়া স্থানীয় সরকারের বাজেট তৈরি ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করায় জোর দেন সাবেক মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী।
এখন সম্পদ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ তারেক।
তিনি বলেন, “দেশের পিএফএম ব্যবস্থা এখনো অনেক দুর্বল। এক বছরের জন্য বাজেট করা হয়। এ কারণে নির্দিষ্ট দপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের সম্পদ সম্পর্কে জানা যায় না। তাই সব সরকারি সংস্থায় অভ্যন্তরীণ বাজেট ও নিরীক্ষাব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন।”
আরেক সাবেক অর্থসচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফজলে কবির বলেন, “আমলাতন্ত্রে বিদ্যমান ব্যবস্থার যেকোনো পরিবর্তনের বিষয়ে একধরনের বিপরীত চিন্তা আছে। ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য এ ধরনের চিন্তা থেকে বের হয়ে আসা প্রয়োজন।”
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স কমছেই। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ৩৫৭ কোটি ২৬ লাখ (৩.৫৭ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম।
চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ২২ দিনে (১ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১০৫ কোটি ৪৯ লাখ (১.০৫ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৪ কোটি ৭৯ লাখ ডলার।
রেমিটেন্সে প্রতি ডলারের জন্য এখন ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে এই ২২ দিনে এসেছে ১১ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা। প্রতিদিনে এসেছে ৫২৫ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে ১৬০ কোটি (১.৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল গত ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।
গত ফেব্রুয়ারিতে ১৫৬ কোটি (১.৫৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
চলতি মাসের ২২ দিনে যে রেমিটেন্স এসেছে, মাসের বাকি ৮ দিনে সেই হারে রেমিটেন্স আসলে মাস শেষে মোট রেমিটেন্সের অঙ্ক ১৪৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলারে গিয়ে ঠেকবে।
সে হিসাবে আগস্টের চেয়েও সেপ্টেম্বরে কম রেমিটেন্স আসবে। আর সেটা হবে দেড় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেড় বিলিয়ন ডলারের কম, ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
কমেন্ট