রেমিটেন্স প্রবাহে গতি ফিরছে, ১৩ দিনে এলো ৭৮ কোটি ডলারের বেশি
প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৬ কোটি ডলারের কিছু বেশি। মাসের বাকি ১৮ দিনে এই হারে আসলে মাস শেষে মোট রেমিটেন্সের অঙ্ক দাঁড়াবে ১৮৬ কোটি ২৮ লাখ ডলার।
দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত, গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে কিছুটা গতি ফিরেছে।
গত সেপ্টেম্বরে বড় ধসের পর অক্টোবর মাসও শুরু হয়েছিল সেই পতনের ধারায়। তবে দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিটেন্স প্রবাহের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি অক্টোবর মাসে প্রথম ১৩ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ৭৮ কোটি ১২ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন।
প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৬ কোটি ডলারের কিছু বেশি। মাসের বাকি ১৮ দিনে এই হারে আসলে মাস শেষে মোট রেমিটেন্সের অঙ্ক দাঁড়াবে ১৮৬ কোটি ২৮ লাখ ডলার।
সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ (১.৩৬ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার।
একক মাসের হিসাবে সেপ্টেম্বর মাসের রেমিটেন্স ছিল সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
২০২০ সালের এপ্রিলে ১০৯ কোটি ২৯ লাখ (১.০৯ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এর পর গত সাড়ে তিন বছরে সেপ্টেম্বরের মত এত কম রেমিটেন্স দেশে আসেনি।
চলতি অক্টোবর মাসে প্রথম ছয় দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ৩২ কোটি ৫১ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার।
২০২০ সালের প্রথম দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। দেশে দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় লকডাউন; সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়।
কমতে শুরু করে রেমিটেন্স। সেই ধাক্কায় ২০২০ সালের মার্চে রেমিটেন্স ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ডলারে নেমে আসে। এপ্রিলে তা আরও কমে ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলারে নেমে আসে।
এর পর থেকে অবশ্য রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়তে থাকে।
রেমিটেন্সে প্রতি ডলারের জন্য এখন ১১০ টাকা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে অক্টোবরের ১৩ দিনে ৮ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা এসেছে; প্রতিদিন এসেছে ৬৬১ কোটি টাকা।
সেপ্টেম্বরে প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৪৯২ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে ১৬০ কোটি (১.৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিন এসেছিল ৫৬৭ কোটি টাকা।
অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি (১.৯৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৬৯৪ কোটি টাকা।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছিল।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই সেপ্টেম্বরে গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে রেমিটেন্স কমেছে ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আর আগস্টের চেয়ে কমেছে ১৬ শতাংশ।
৩ মাসে কমেছে ১৩.৩৪ শতাংশ
তিন মাসের হিসাবে অর্থাৎ চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৪৯১ কোটি ৬৩ লাখ (৪.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
গত বছরের একই সময়ে পাঠিয়েছিলেন ৫৬৭ কোটি ২৮ লাখ (৫.৬৭ বিলিয়ন) ডলার।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবাসী আয় কমেছে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
গত সপ্তাহে রিজার্ভ কমেনি
রেমিটেন্সে গতি ফেরায় গত সপ্তাহে রিজার্ভ কমেনি; বিপিএম৬ হিসাবে রিজার্ভ সামান্য বেড়েছে।
গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক শূন্য সাত বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।
আগের সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বিপিএম৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক শূন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার।
কমেন্ট