রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে ১১৫.৫০ টাকা পাওয়া যাবে
সরকার এখন রেমিটেন্সে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে ২ টাকা ৫০ পয়সা বা আড়াই টাকা যোগ করে তার পরিবার-পরিজনকে (যার নামে প্রবাসী টাকা পাঠান) ১০২ টাকা ৫০ পয়সা দেওয়া হয়। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ১০২ টাকা ৫০ পয়সার সঙ্গে আরও আড়াই টাকা অর্থাৎ মোট ১০৫ টাকা পাবেন।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে সরকারের বিদ্যমান প্রণোদনার বাইরে আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিতে পারবে ব্যাংকগুলো।
শুক্রবার বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে এবিবি’র চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন জানিয়েছেন।
রোববার থেকে প্রবাসী আয়ে ডলারের এই নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সরকার এখন রেমিটেন্সে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে ২ টাকা ৫০ পয়সা বা আড়াই টাকা যোগ করে তার পরিবার-পরিজনকে (যার নামে প্রবাসী টাকা পাঠান) ১০২ টাকা ৫০ পয়সা দেওয়া হয়।
নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ১০২ টাকা ৫০ পয়সার সঙ্গে আরও আড়াই টাকা অর্থাৎ মোট ১০৫ টাকা পাবেন।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এখন থেকে কোনো প্রবাসী ১ ডলার দেশে পাঠালে, যার নামে পাঠাবেন তিনি ১১৫ টাকা ৫০ পয়সা পাবেন।
বর্তমানে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ১১০ টাকা ৫০ পয়সা।
তবে রপ্তানি আয়ে ডলারের দর আগের মতো ১১০ টাকা বহাল রাখা হয়েছে। আর আমদানিতেও ডলারের দাম আগের মতো ১১০ টাকা ৫০ পয়সা রয়েছে।
ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়তেই নতুন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ধস নেমেছে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ (১.৩৬ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। একক মাসের হিসাবে এই রেমিটেন্স সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালের এপ্রিলে এত কম প্রবাসী আয় এসেছিল। ওই মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ১০৯ কোটি ডলার।
রেমিটেন্স কমায় রিজার্ভও কমছেই। বৃহস্পতিবার বিপিএম৬ হিসাবে রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলারের নিচে—২০ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। ‘গ্রস’হিসাবে নেমেছে ২৬ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারে।
নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ আরও কমে আসবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
ডলার-সংকটের এ সময়ে প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় ডলার-সংকট আরও প্রকট হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম বেশি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। যদিও কিছু ব্যাংক দুই সপ্তাহ ধরে বেশি দামে প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স কিনছে।
গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকে বেসরকারি খাতের ১৫টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে সভা করেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে রিজার্ভ আরও কমে যেতে পারে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম বাজারভিত্তিক করা হবে।
এমন সিদ্ধান্তের পেছনে তিনটি কারণ উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের চলতি হিসাব, আর্থিক হিসাব ও রাজস্ব হিসাব—এই তিন গুরুত্বপূর্ণ সূচক এখন ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে।
তবে বেশি দামে প্রবাসী আয় কেনার ক্ষেত্রে কোনো আপত্তি করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এমন পরিস্থিতিতে প্রবাসী আয়ে আড়াই শতাংশ বেশি দাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের শীর্ষ খাতের একটি হল দেড় কোটির বেশি প্রবাসীর পাঠানো অর্থ।
এই অর্থ অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমেও আসছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার বৈধ পথে অর্থ পাঠানো উৎসাহিত করতে রেমিটেন্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করে।
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে রেমিটেন্সে প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করে সরকার।
এখন ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিয়ে রেমিটেন্স সংগ্রহ করতে পারবে।
এ প্রসঙ্গে এবিবি’র চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আশা করছি এতে দেশে রেমিট্যান্স বাড়বে; ডলার সংকট কেটে যাবে। রিজার্ভ বাড়বে।
২০২২ সালে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে চাকরির জন্য গেছেন। যা আগের বছরের (২০২১ সাল) ৬ লাখ ১৭ হাজারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।
কিন্তু জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও রেমিটেন্স বাড়ছে না। উল্টো কমছে।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বলছেন, কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে ডলারের দাম বেশি হওয়ায়, অনেক প্রবাসী হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। সে কারণেই ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স কম আসছে।
খোলাবাজারে প্রতি ডলার ১১৯ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠালে প্রতি ডলারে ৫/৬ টাকা বেশি পাচ্ছিলেন প্রবাসীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংক হুন্ডি বন্ধে নানা ধরনের পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। একইসঙ্গে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স বাড়তে সরকারি আড়াই শতাংশ প্রণোদনার সঙ্গে বাড়তি আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিয়ে রেমিটেন্স সংগ্রহের অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কমেন্ট