রেমিটেন্স বাড়ছে, ২০ দিনে এলো ১২৫ কোটি ডলার

রেমিটেন্স বাড়ছে, ২০ দিনে এলো ১২৫ কোটি ডলার

প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৬ কোটি ২৫ লাখ ডলার। মাসের বাকি ১১ দিনে এই হারে আসলে মাস শেষে মোট রেমিটেন্সের অঙ্ক প্রায় ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে ঠেকতে পারে বলে হিসাব বলছে।

দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত, গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়তে শুরু করেছে।

গত সেপ্টেম্বরে বড় ধসের পর অক্টোবর মাসও শুরু হয়েছিল সেই পতনের ধারায়। তবে দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আশার আলো দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিটেন্স প্রবাহের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি অক্টোবর মাসে প্রথম ২০ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১২৫ কোটি (১.২৫ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন।

প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৬ কোটি ২৫ লাখ ডলার। মাসের বাকি ১১ দিনে এই হারে আসলে মাস শেষে মোট রেমিটেন্সের অঙ্ক প্রায় ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে ঠেকতে পারে বলে হিসাব বলছে।

সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ (১.৩৬ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার।

একক মাসের হিসাবে সেপ্টেম্বর মাসের রেমিটেন্স ছিল সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

২০২০ সালের এপ্রিলে ১০৯ কোটি ২৯ লাখ (১.০৯ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এর পর গত সাড়ে তিন বছরে সেপ্টেম্বরের মত এত কম রেমিটেন্স দেশে আসেনি।

২০২০ সালের প্রথম দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। দেশে দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় লকডাউন; সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়।

কমতে শুরু করে রেমিটেন্স। সেই ধাক্কায় ২০২০ সালের মার্চে রেমিটেন্স ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ডলারে নেমে আসে। এপ্রিলে তা আরও কমে ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলারে নেমে আসে।

এর পর থেকে অবশ্য রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়তে থাকে।

শনিবার পর্যন্ত (২১ অক্টোবর) রেমিটেন্সে প্রতি ডলারের জন্য এখন ১১০ টাকা দিয়েছে ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে অক্টোবরের ২০ দিনে (১ থেকে ২০ অক্টোবর) ১৩ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা এসেছে; প্রতিদিন এসেছে ৬৮৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

সেপ্টেম্বরে প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৪৯২ কোটি টাকা।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে ১৬০ কোটি (১.৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিন এসেছিল ৫৬৭ কোটি টাকা।

অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি (১.৯৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৬৯৪ কোটি টাকা।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছিল।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই সেপ্টেম্বরে গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে রেমিটেন্স কমেছে ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আর আগস্টের চেয়ে কমেছে ১৬ শতাংশ।

রোববার থেকে রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে ১১৫ টাকা ৫০ পয়সা পাওয়া যাচ্ছে। এতে হুন্ডি কমে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ আরও বাড়বে বলে আশা করছেন ব্যাংকাররা।

মাসে কমেছে ১৩.৩৪ শতাংশ

তিন মাসের হিসাবে অর্থাৎ চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৪৯১ কোটি ৬৩ লাখ (৪.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

গত বছরের একই সময়ে পাঠিয়েছিলেন ৫৬৭ কোটি ২৮ লাখ (৫.৬৭ বিলিয়ন) ডলার।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবাসী আয় কমেছে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

রিজার্ভ নেমেছে ২১ বিলিয়নের নিচে

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী বাংলাদেশের রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলারের নিচে—২০ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। আর ‘গ্রস’ হিসাবে নেমেছে ২৬ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারে।

নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ আরও কমে আসবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

প্রতি সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর সঙ্গে রিজার্ভের তথ্যও প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তাতে দেখা যায়, এক মাস আগে ২০ সেপ্টেম্বর বিপিএম৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৭ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার।

দুই মাস আগে ২৩ আগস্ট বিপিএম৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’হিসাবে ছিল ২৯ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার।

তিন মাস আগে ২০ জুলাই বিপিএম৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’হিসাবে ছিল ২৯ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, তিন মাসে বিপিএম৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ কমেছে আড়াই বিলিয়ন বা ২ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। আর ‘গ্রস’ হিসাবে কমেছে ৩ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার।

রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে ১১৫.৫০ টাকা পাওয়া যাবে

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে সরকারের বিদ্যমান প্রণোদনার বাইরে আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিতে পারবে ব্যাংকগুলো।

শুক্রবার বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে এবিবি’র চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন জানিয়েছেন।

রোববার থেকে প্রবাসী আয়ে ডলারের এই নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সরকার এখন রেমিটেন্সে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে ২ টাকা ৫০ পয়সা বা আড়াই টাকা যোগ করে তার পরিবার-পরিজনকে (যার নামে প্রবাসী টাকা পাঠান) ১০২ টাকা ৫০ পয়সা দেওয়া হয়।

নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ১০২ টাকা ৫০ পয়সার সঙ্গে আরও আড়াই টাকা অর্থাৎ মোট ১০৫ টাকা পাবেন।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এখন থেকে কোনো প্রবাসী ১ ডলার দেশে পাঠালে, যার নামে পাঠাবেন তিনি ১১৫ টাকা ৫০ পয়সা পাবেন।

বর্তমানে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ১১০ টাকা ৫০ পয়সা।

তবে রপ্তানি আয়ে ডলারের দর আগের মতো ১১০ টাকা বহাল রাখা হয়েছে। আর আমদানিতেও ডলারের দাম আগের মতো ১১০ টাকা ৫০ পয়সা রয়েছে।

ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়তেই নতুন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।

রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে ১১৫.৫০ টাকা পাওয়া যাবে পরবর্তী

রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে ১১৫.৫০ টাকা পাওয়া যাবে

কমেন্ট