রেমিটেন্সে বাড়ছে, প্রতিদিন আসছে ৭০৫ কোটি টাকা
২৭ দিনের এই রেমিটেন্স গত সেপ্টেম্বর মাসের পুরো সময়ের চেয়েও ২৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। আর গত বছরের অক্টোবরের পুরো মাসের চেয়ে বেশি ৮ দশমিক ১১ শতাংশ।
দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত, গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ফের উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে বড় ধসের পর অক্টোবর মাসও শুরু হয়েছিল সেই পতনের ধারায়। তবে দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আশার আলো দেখা যাচ্ছে।
ব্যাংকগুলোর আড়াই শতাংশ বাড়তি প্রণোদনায় রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয় বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিটেন্স প্রবাহের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি অক্টোবর মাসে প্রথম ২৭ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১৬৫ কোটি (১.৬৫ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন।
২৭ দিনের এই রেমিটেন্স গত সেপ্টেম্বর মাসের পুরো সময়ের চেয়েও ২৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। আর গত বছরের অক্টোবরের পুরো মাসের চেয়ে বেশি ৮ দশমিক ১১ শতাংশ।
গত সেপ্টেম্বরে ১৩৩ দশমিক ৪৪ কোটি (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ২০২২ সালের অক্টোবরে এসেছিল ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ (১.৫২ বিলিয়ন) ডলার।
এই ২৭ দিনে প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৬ কোটি ১১ লাখ ডলার। মাসের বাকি চার দিনে এই হারে আসলে মাস শেষে মোট রেমিটেন্সের অঙ্ক প্রায় ১৯০ কোটি (১.৯০ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে ঠেকতে পারে বলে হিসাব বলছে।
সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৪ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। একক মাসের হিসাবে সেপ্টেম্বর মাসের রেমিটেন্স ছিল সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
২০২০ সালের এপ্রিলে ১০৯ কোটি ২৯ লাখ (১.০৯ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এর পর গত সাড়ে তিন বছরে সেপ্টেম্বরের মত এত কম রেমিটেন্স দেশে আসেনি।
২০২০ সালের প্রথম দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। দেশে দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় লকডাউন; সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়।
কমতে শুরু করে রেমিটেন্স। সেই ধাক্কায় ২০২০ সালের মার্চে রেমিটেন্স ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ডলারে নেমে আসে। এপ্রিলে তা আরও কমে ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলারে নেমে আসে।
এর পর থেকে অবশ্য রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়তে থাকে।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে সরকারের বিদ্যমান প্রণোদনার বাইরে গত ২২ অক্টোবর থেকে আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।
সরকার রেমিটেন্সে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে ২ টাকা ৫০ পয়সা বা আড়াই টাকা যোগ করে তার পরিবার-পরিজনকে (যার নামে প্রবাসী টাকা পাঠান) ১০২ টাকা ৫০ পয়সা দেওয়া হয়।
২২ অক্টোবর থেকে ১০২ টাকা ৫০ পয়সার সঙ্গে আরও আড়াই টাকা অর্থাৎ মোট ১০৫ টাকা পাবেন।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এখন থেকে কোনো প্রবাসী ১ ডলার দেশে পাঠালে, যার নামে পাঠাবেন তিনি ১১৫ টাকা ৫০ পয়সা পাবেন।
সে হিসাবে অক্টোবরের ২৭ দিনে (১ থেকে ২৭ অক্টোবর) ১৯ হাজার ৫০ কোটি টাকা এসেছে; প্রতিদিন এসেছে ৭০৫ কোটি টাকা।
সেপ্টেম্বরে প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৪৯২ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে ১৬০ কোটি (১.৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিন এসেছিল ৫৬৭ কোটি টাকা।
অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি (১.৯৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৬৯৪ কোটি টাকা।
তার পরও রিজার্ভ কমছে
রেমিটেন্সে গতি ফিরলেও রিজার্ভ বাড়ছে না; উল্টো কমছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার। আর ‘গ্রস’হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার।
নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। হিসাব বলছে, সেই বিল যদি ১ বিলিয়ন ডলারও হয়, তাহলেও রিজার্ভ আরও কমে ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসবে।
আগের সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলারের নিচে—২০ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ‘গ্রস’হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পাওয়া যাবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে।
তার আগে রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়ার খুব একটা সম্ভাবনা নেই। বিদেশি ঋণ-সহায়তা ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগও (এফডিআই) নিম্মমূখী।
এ পরিস্থিতিতে আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ না পাওয়া পর্যন্ত রিজার্ভ বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর।
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আকুর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ আরও কমে আসবে বলে হিসাব দিয়েছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।
এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “প্রণোদনা বাড়িয়ে রেমিটেন্সের ইতিবাচক ধারা বেশি দিন ধরে রাখা রাখা যাবে না। সত্যিকার অর্থে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স বাড়াতে হলে হুন্ডি বন্ধ করতে হবে।”
কমেন্ট