নভেম্বরে রেমিটেন্স বেড়েছে ২১ শতাংশ

নভেম্বরে রেমিটেন্স বেড়েছে ২১ শতাংশ

বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে রেমিটেন্স। গত সেপ্টেম্বরে বড় ধসের পর অক্টোবর মাসে রেমিটেন্সে উল্লম্ফন দেখা যায়। নভেম্বর মাসেও সেই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে।

অক্টোবরের পর নভেম্বর মাসেও প্রায় ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। অক্টোবরে পাঠিয়েছিলেন ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ (১.৯৮ বিলিয়ন) ডলার; নভেম্বরে পাঠিয়েছেন ১৯৩ কোটি (১.৯৩ বিলিয়ন) ডলার।

নভেম্বরের এই রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয় গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালের নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৫২ লাখ (১.৫৯ বিলিয়ন) প্রবাসী আয় দেশে এসেছিল।

বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে রেমিটেন্স। গত সেপ্টেম্বরে বড় ধসের পর অক্টোবর মাসে রেমিটেন্সে উল্লম্ফন দেখা যায়। নভেম্বর মাসেও সেই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে। তবে নভেম্বরের চেয়ে ২ দশমিক ৪ শতাংশ কম এসেছে।

ব্যাংকগুলোর আড়াই শতাংশ বাড়তি প্রণোদনায় প্রবাসী আয় বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিটেন্স প্রবাহের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, সদ্য সমাপ্ত নভেম্বর ১৯৩ কোটি ডলার ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছে। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৬ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।

অক্টোবর মাস ছিল ৩১ দিনে। সে হিসাবে প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার।

নভেম্বর মাসে রেমিটেন্সের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, অক্টোবরের মতো নভেম্বরেও রেমিটেন্স প্রবাহে উল্লম্ফন নিয়ে মাস শুরু হয়েছিল। তবে মাসের মাঝামাঝি সময়ে এসে ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়; শেষের দিকে ফের উল্লম্ফনের মধ্য দিয়ে মাস শেষ হয়ে।

নভেম্বর মাসের রেমিটেন্সের তথ্যে দেখা যায়, ১ থেকে ৩ নভেম্বর দেশে রেমিটেন্স আসে ২০ কোটি ৫৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার। প্রতিদিনের গড় গিসাবে আসে ৬ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। ৪ থেকে ১০ নভেম্বর আসে প্রায় ৫৯ কোটি ডলার; প্রতিদিন আসে ৮ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।

১১ থেকে ১৭ নভেম্বর প্রবাসীরা পাঠান ৩৯ কোটি ৩৩ লাখ ডলার; প্রতিদিন পাঠান ৫ কোটি ৬২ লাখ ডলার। ১৮ থেকে ২৪ নভেম্বর—সপ্তাহে আসে ৩০ কোটি ৫২ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এই সাত দিনে প্রতিদিনের গড় হিসাবে আসে ৪ কোটি ৩৬ লাখ ডলার।

সবশেষ ২৫ থেকে ৩০ নভেম্বর—ছয় দিনে এসেছে ৪৩ কোটি ৭১ লাখ ডলার। প্রতিদিনের গড় গিসাবে এসেছে ৭ কোটি ২৮ লাখ ডলার।

গত সেপ্টেম্বরে ১৩৩ দশমিক ৪৪ কোটি (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। একক মাসের হিসাবে যা ছিল সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

২০২২ সালের অক্টোবরে এসেছিল ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ (১.৫২ বিলিয়ন) ডলার।

২০২০ সালের প্রথম দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। দেশে দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় লকডাউন; সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়।

কমতে শুরু করে রেমিটেন্স। সেই ধাক্কায় ২০২০ সালের মার্চে রেমিটেন্স ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ডলারে নেমে আসে। এপ্রিলে তা আরও কমে ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলারে নেমে আসে।

এর পর থেকে অবশ্য রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়তে থাকে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, নভেম্বরে বেসরকারি ৪৩ ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ (১.৭২ বিলিয়ন) ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৪ কোটি ৪২ লাখ ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫ কোটি ৩২ লাখ ডলার।

এর বাইরে ৯ বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫৯ লাখ ২০ হাজার ডলার।

বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসের কর্মকর্তারা বলছেন, নভেম্বর মাসের শুরুতে প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম ১২৪ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। ফলে বৈধ পথে (ব্যাংকিং চ্যানেল) প্রবাসী আয় পাঠানো বেড়েছে।

গত ২২ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে আমদানি, রপ্তানি ও রেমিটেন্স—সব পর্যায়ে ডলারের দর ৫০ পয়সা করে কমানোর ঘোষণা দেয় বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি)। ২৩ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়।

সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম ১১০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে ১১০ টাকায় নেমে আসে। নভেম্বর ২৯ আরও ২৫ পয়সা কমিয়ে ১০৯ টাকা ৭৫ পয়সা করা হয়। যা রোববার থেকে কার্যকর হয়েছে।

কিন্তু কোনো ব্যাংকই এই দরে রেমিটেন্স সংগ্রহ করছে না; ১৪/১৫ টাকা বেশি দামে রেমিটেন্স দেশে আনছে।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে সরকারের বিদ্যমান প্রণোদনার বাইরে গত ২২ অক্টোবর থেকে আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।

সরকার রেমিটেন্সে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে ২ টাকা ৫০ পয়সা বা আড়াই টাকা যোগ করে তার পরিবার-পরিজনকে (যার নামে প্রবাসী টাকা পাঠান) ১০২ টাকা ৫০ পয়সা দেওয়া হয়।

২২ অক্টোবর থেকে ১০২ টাকা ৫০ পয়সার সঙ্গে আরও আড়াই টাকা অর্থাৎ মোট ১০৫ টাকা পাচ্ছেন।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি (১.৯৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে ১৬০ কোটি (১.৬ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে রেমিটেন্স প্রবাহে ধস নামে; আসে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।

তারপরও রিজার্ভ কমছে

রেমিটেন্সের ইতিবাচক ধারার পরও রিজার্ভ কমছে। গত ৭ নভেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের ১ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ নামে ২৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার সবশেষ অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর পাশপাশি রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, ওই দিনে বিপিএম-৬ হিসাবে হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। আর ‘গ্রস’হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক দুই শূন্য বিলিয়ন ডলার।

সবশেষ গত সেপ্টেম্বর মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৪ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ’ হিসেবে দাবি করছে। সে হিসাবে বর্তমানের ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ দিয়ে চার মাসের কম সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।

রেমিটেন্স: সৌদি থেকে ধস, আমিরাত থেকে উল্লম্ফন পূর্ববর্তী

রেমিটেন্স: সৌদি থেকে ধস, আমিরাত থেকে উল্লম্ফন

রেমিটেন্সে ফের ধীরগতি, ২৪ দিনে এসেছে ১৪৯ কোটি ডলার পরবর্তী

রেমিটেন্সে ফের ধীরগতি, ২৪ দিনে এসেছে ১৪৯ কোটি ডলার

কমেন্ট