ভোটের আগেই রিজার্ভে ১ বিলিয়ন যোগ হচ্ছে, স্বস্তি ফেরার আশা

ভোটের আগেই রিজার্ভে ১ বিলিয়ন যোগ হচ্ছে, স্বস্তি ফেরার আশা

ডিসেম্বরের মধ্যেই রিজার্ভ বেড়ে ২১ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছবে; সাড়ে চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সুখবর। ভোটের আগেই অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত ও উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভে ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের বেশি যোগ হচ্ছে। আর তাতে রিজার্ভ বেড়ে ২১ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছবে; সাড়ে চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ৭ জানুয়ারি দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে চলতি বছরের মধ্যেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বহুল প্রতিক্ষিত ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৬৮ কোটি ১০ লাখ ঋণ ছাড় করা হবে। সেই সঙ্গে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৪০ কোটি ডলার ছাড় করবে।

সব মিলিয়ে ১০৮ কোটি ১০ লাখ (১.০৮ বিলিয়ন) ডলার ঋণ ছাড় করবে এই দুই সংস্থা। আর এর মধ্য দিয়ে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে ২১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

আইএমএফের বোর্ড সভার সময়সূচি অনুসারে, আগামী ১২ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে সংস্থাটির সদর দপ্তরে পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় বাংলাদেশের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি অনুমোদন হওয়ার সম্ভাবনার কথা আগেই জানিয়েছিলেন গত অক্টোবরে ঋণ কর্মসূচি নিয়ে পর্যালোচনা করতে ঢাকায় আসা আইএমএফ প্রতিনিধিদলের প্রধান সংস্থাটির এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন, ১২ ডিসেম্বর আইএমএফ বোর্ড সভায় দ্বিতীয় কিস্তি ঋণের প্রস্তাবটি অনুমোদিত হবে। একই কথা বলেছেন, দীর্ঘদিন আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বপালন পালন করে আসা গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই)  নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “অক্টোবরে ঋণ কর্মসূচি নিয়ে পর্যালোচনা করতে ঢাকায় আসা আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলন করে ডিসেম্বরে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি অনুমোদন হবে বলে জানিয়েছিলেন। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই ১২ ডিসেম্বর বোর্ড সভায় বাংলাদেশের ঋণের বিষয়টি উত্থাপন হচ্ছে। তাই এই ঋণ অনুমোদন পাবে—এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।”

একই দিন অর্থাৎ ১২ ডিসেম্বর ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলায় এডিবির বোর্ড অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা হিসেবে ৪০ কোটি ডলার ঋণের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এডিবি ঢাকা অফিসের বহিঃসম্পর্ক বিভাগের প্রধান গোবিন্দ বর।

মঙ্গলবার এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “বোর্ড সভায় অনুমোদনের সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই এডিবি ঋণ ছাড় করে। সে হিসাবে ডিসেম্বরের মধ্যেই এডিবির এই ৪০ কোটি ডলার রিজার্ভে যোগ হবে—এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।”

বাংলাশে ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, “আমরা নিশ্চিত আইএমএফ ও এডিবির ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পাচ্ছি। আর সেটা ডিসেম্বরের মধ্যেই পাওয়া যাবে। তখন আমাদের রিজার্ভ বেড়ে যাবে।”

তিনি বলেন, “রেমিটেন্সের পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। ডলারের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসছে। ইতোমধ্যে ডলারের দর ৭৫ পয়সা কমেছে। আরও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর সঙ্গে আইএমএফ ও এডিবির ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি যোগ হলে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ বেড়ে ২১ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকবে। তাতে অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার দেশে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’রিজার্ভ দাবি করছে।

গত ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথামতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ওই দিন ‘গ্রস’রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, দুই পদ্ধতিতে রিজার্ভের তথ্য প্রকাশের পর গত পাঁচ মাসে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমেছে ৪ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। আর ‘গ্রস’হিসাবে কমেছে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার।

১২ জুলাইয়ের আগে শুধুমাত্র ‘গ্রস’হিসাবের রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করত বাংলাদেশ ব্যাংক।

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। ওই বছরের ২৪ আগস্ট রিজার্ভ ৪৮ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে ওঠে।

এর পর থেকে কমছেই। এক বছর আগে গত বছরের ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ৩৩ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।

চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। অনুমোদনের দুই দিনের মাথায় প্রথম কিস্তি হিসেবে বাংলাদেশ ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার রিজার্ভে যোগ হয়।

রেমিটেন্স: সৌদি থেকে ধস, আমিরাত থেকে উল্লম্ফন পরবর্তী

রেমিটেন্স: সৌদি থেকে ধস, আমিরাত থেকে উল্লম্ফন

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর