রেমিটেন্সে উল্লম্ফন, ১৫ দিনেই ১০৭ কোটি ডলার

রেমিটেন্সে উল্লম্ফন, ১৫ দিনেই ১০৭ কোটি ডলার

মাসের বাকি ১৬ দিনে এই হারে রেমিটেন্স আসলে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ২ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে।

বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত ও উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে।

অক্টোবর, নভেম্বরের পর বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরেও রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়ের ঊর্ধ্বমূখী ধারা দেখা যাচ্ছে।

অক্টোবরের পর নভেম্বর মাসেও প্রায় ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। অক্টোবরে পাঠিয়েছিলেন ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ (১.৯৮ বিলিয়ন) ডলার; নভেম্বরে এসেছিল ১৯৩ কোটি (১.৯৩ বিলিয়ন) ডলার।

নভেম্বরের এই রেমিটেন্স ছিল গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালের নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৫২ লাখ (১.৫৯ বিলিয়ন) প্রবাসী আয় দেশে এসেছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিটেন্স প্রবাহের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, বিদায়ী ২০২৩ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরের প্রথম ১৫ দিনে (১ থেকে ১৫ ডিসেম্বর) ১০৬ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছে। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৭ কোটি ১৩ লাখ ডলার।

মাসের বাকি ১৬ দিনে (১৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বর) এই হারে রেমিটেন্স আসলে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ২ দশমিক ২১ বিলিয়ন (২২১ কোটি ১৩ লাখ) ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে।

গত বছরের ডিসেম্বরে ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৫ কোটি ৪৮ লাখ ডলার।

অক্টোবরে প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৬ কোটি ৩৫ লাখ ডলার; নভেম্বরে এসেছিল ৬ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।

ব্যাংকগুলোর আড়াই শতাংশ বাড়তি প্রণোদনায় প্রবাসী আয় বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। এছাড়া অনেক ব্যাংক বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে রেমিটেন্স সংগ্রহ করায় প্রবাসী আয় বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তারা।

গত সেপ্টেম্বরে ১৩৩ দশমিক ৪৪ কোটি (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। একক মাসের হিসাবে যা ছিল সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

২০২০ সালের প্রথম দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। দেশে দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় লকডাউন; সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়।

কমতে শুরু করে রেমিটেন্স। সেই ধাক্কায় ২০২০ সালের মার্চে রেমিটেন্স ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ডলারে নেমে আসে। এপ্রিলে তা আরও কমে ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলারে নেমে আসে।

এর পর থেকে অবশ্য রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়তে থাকে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ডিসেম্বরের ১৫ দিনে বেসরকারি ৪৩ ব্যাংকের মাধ্যমে ৯২ কোটি ১৭ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১০ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

এর বাইরে ৯ বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২২ লাখ ৯০ হাজার ডলার।

দুই বছর পর গত ২২ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে আমদানি, রপ্তানি ও রেমিটেন্স—সব পর্যায়ে ডলারের দর ৫০ পয়সা করে কমানোর ঘোষণা দেয় বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি)। ২৩ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়।

২৯ নভেম্বর আরও ২৫ পয়সা কমানো হয়। দুই সপ্তাহ পর গত ১৩ ডিসেম্বর আরও ২৫ পয়সা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বাফেদা ও এবিবি। রোববার থেকে যা কার্যকর হয়েছে।

এ নিয়ে তিন সপ্তাহের ব্যবধানে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার বিপরীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর ১ টাকা কমেছে।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের ডলার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে কিনবে ব্যাংকগুলো। আর আমদানি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ১১০ টাকা দরে বিক্রি করবে।

তবে বাফেদা ও এবিবির বেঁধে দেওয়া দামে ডলার কেনাবেচা হচ্ছে কম। রোববারও ব্যাংকগুলো ১২০ টাকা দামে প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স কিনেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ডলারের দর ঘোষণা করে আসছে বাফেদা ও এবিবি।

প্রথমে রেমিট্যান্সে ১০৮ টাকা এবং রপ্তানিতে ৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে বাড়িয়ে উভয় ক্ষেত্রে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়। আর আমদানিতে নির্ধারণ করা হয় ১১১ টাকা। ২১ নভেম্বর পর্যন্ত এই দর ছিল।

এর পর গত এক মাসে সব ক্ষেত্রে তিন দফায় ডলারের দর মোট ১ টাকা (৫০ পয়সা, ২৫ পয়সা ও ২৫ পয়সা) কমানো হয়েছে।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে সরকারের বিদ্যমান প্রণোদনার বাইরে গত ২২ অক্টোবর থেকে আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।

সরকার রেমিটেন্সে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে ২ টাকা ৫০ পয়সা বা আড়াই টাকা যোগ করে তার পরিবার-পরিজনকে (যার নামে প্রবাসী টাকা পাঠান) ১০২ টাকা ৫০ পয়সা দেওয়া হয়।

২২ অক্টোবর থেকে ১০২ টাকা ৫০ পয়সার সঙ্গে আরও আড়াই টাকা অর্থাৎ মোট ১০৫ টাকা পাচ্ছেন। এই আড়াই টাকা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি (১.৯৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে ১৬০ কোটি (১.৬ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে রেমিটেন্স প্রবাহে ধস নামে; আসে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।

ডিসেম্বরেও রেমিটেন্সে সুবাতাস, ৮ দিনে এসেছে ৫৩ কোটি ডলার পরবর্তী

ডিসেম্বরেও রেমিটেন্সে সুবাতাস, ৮ দিনে এসেছে ৫৩ কোটি ডলার

কমেন্ট